জাতীয়

নতুন কৌশলে আওয়ামী লীগ, শরিকদের জন্য যে কয়টি আসন ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত

  প্রতিনিধি ৫ ডিসেম্বর ২০২৩ , ১১:২৩:১৪ প্রিন্ট সংস্করণ

নীলাকাশ টুডে

আদর্শিক জোট বহাল রেখে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে ১৪ দলীয় জোটের নেত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। জনগণের অংশগ্রহণ বাড়াতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি জোটনেতাদের বলেছেন, এর জন্য নির্বাচন উন্মুক্ত রাখতে হবে। সবাই দাঁড়ান, যিনি জিতে আসতে পারেন।

গতকাল সোমবার গণভবনে অনুষ্ঠিত ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হয়ে রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত এ বৈঠক চলে। এতে সূচনা বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা, পরে বৈঠকে উপস্থিত নেতারা বক্তব্য দেন।

সভায় জোটনেত্রী উন্মুক্ত নির্বাচন চাইলেও শরিকেরা নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে চান। এ জন্য আসন ছাড় চান তাঁরা। জোটের আসন ভাগাভাগি নিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক এবং মুখপাত্র আমির হোসন আমুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আলাদা ভাবে জোটের দলগুলোর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানা গেছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পর জোটের মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারিসহ অন্য নেতারা বক্তব্য দেন।

আসন ছাড় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে আরেক নেতা বলেন, নেত্রীর বক্তব্যে মনে হয়েছে আওয়ামী লীগের কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন না। এর মধ্যে কোন কৌশল অবলম্বন করে জোটের নেতাদের বিজয়ী করানো হবে, সেটা ঠিক করা হবে। তবে মনে হয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি এবং জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে ছাড় দেওয়া হবে। অন্যদিকে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর আসনে প্রার্থী রাখেনি। মঞ্জু ছাড়া তিনজন নৌকায় ভোট করবেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনিও নৌকায় নির্বাচন করবেন। বাকি আসনগুলোতে আওয়ামী লীগসহ অন্যদের প্রার্থী থাকবে।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, শেখ হাসিনা তাঁদের বলেছেন, নির্বাচন উৎসবমুখর করতে প্রতিটি আসনই উন্মুক্ত রাখতে চান তিনি। তবে জোটের অন্য নেতারা আসন সমন্বয় ও জোটগত ভাবে নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নেন। বর্তমান সংসদে থাকা জোটের চার দলের চার নেতার নির্বাচনী আসনে সমঝোতা করার অনুরোধ জানান জোট নেতারা।

বৈঠকে ১৪ দলের শরিক দলগুলোর সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, গত ১৫ বছরেও দল ঠিক করতে পারেননি। দলকে শক্তিশালী করেন। নতুন নতুন কত দল আসছে। এ সময় জোট নেতারা বলেন, অন্য কোনো দলের সঙ্গে মেলালে হবে না। জোটের দলগুলোর একটা আদর্শিক পরিচিতি আছে। ছোট বলেই নৌকায় নির্বাচন করতে চান।

হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘শরিকেরা আপনার সঙ্গে এত দিন ধরে আছে। আন্দোলন, লড়াই-সংগ্রাম করলাম একসঙ্গে। বর্তমান অবস্থায় আমরা তো আর কিছুই করতে পারব না।’

সবার বক্তব্য শেষে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শ্রমিক ইস্যু নিয়ে আমেরিকা বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে। এত কম মূল্যে শ্রমিক পৃথিবীর আর কোথায় পাবে, আমিও দেখব। দেশি-বিদেশি চক্রান্ত চলছে। আমি ভয় পাই না। সবাই আমাকে প্রশ্ন করে, এত সাহস পাই কোথায়? আমিও বলি, আমার সাহস এ দেশের জনগণ। জীবন দিয়ে হলেও মানুষের পাশে থাকব।’

এক নেতা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে বৈঠকে ১৪ দলের নেতাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আমাদের বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞাও আসতে পারে। তবে নির্বাচন যথাসময় হবে। নির্বাচনের পর যেকোনো  পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। আমি বেঁচে থাকলে এ থেকে উত্তরণ করব।’

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আমরা জোটগত ভাবে নির্বাচনে যাচ্ছি—এই বিষয়টা চূড়ান্ত হয়েছে। আর আসনের বিষয়টি আমির হোসেন আমু ভাই আর ওবায়দুল কাদের বসে ঠিক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, এটা সবাই মেনেই বৈঠক শেষ করেছি।’

সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি বলেন, ‘আমরা জোটগতভাবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করব। আসনের বিষয়টা নিয়ে আমু ভাই কথা বলে ঠিক করবেন।

 

আরও খবর: জাতীয়