রাজনীতি

ধর্মভিত্তিক দলগুলোর দৃষ্টি বিএনপির দিকে

  নীলাকাশ টুডেঃ ১ মার্চ ২০২৩ , ৬:৪৪:৩৬ প্রিন্ট সংস্করণ

আগামী জাতীয় নির্বাচনে ধর্মভিত্তিক ইসলামি দলগুলোর কোন দল কী ধরনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। বেশির ভাগ ইসলামি দলের দৃষ্টি বিএনপির দিকে। বিএনপি যদি আন্দোলন করে সরকারকে চাপে ফেলতে পারে, তাহলে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর অবস্থান হবে এক রকম। আর যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে অবস্থান হবে আরেক রকম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মূলত এই রাজনৈতিক সমীকরণ সামনে রেখে অধিকাংশ ইসলামি দল পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। এর মধ্যে একটু ব্যতিক্রম চরমোনাইয়ের পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তারা এবার জোরেশোরেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। একই সঙ্গে সমমনা কয়েকটি ইসলামি দলকে নিয়ে একটি নির্বাচনী জোট গড়ারও চেষ্টা করছে।

তবে একাধিক ইসলামি দলের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ধর্মভিত্তিক দলগুলো ভালোই চাপে আছে। তাদের ওপর সরকারি মহলের শক্ত নজরদারি রয়েছে। যাতে ইসলামি দলগুলো কোনোভাবেই বিএনপির দিকে না ঝুঁকে পড়ে। মহল বিশেষের এই তৎপরতা বিবেচনায় রেখেই ইসলামি দলগুলো রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে।

তারা দেখতে চাইছে, শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়। যদিও এর মধ্যেই ধর্মভিত্তিক নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত প্রায় সব দলই যে যার মতো করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। একই সঙ্গে যার যার আঙিনায় দলীয় শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা করছে।

ধর্মভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন রাজনীতিতে বেশ সক্রিয়। জামায়াত প্রায় দুই যুগ ধরে বিএনপির সঙ্গে আন্দোলন ও নির্বাচন করছে। সম্প্রতি বিএনপি ২০-দলীয় জোট অনানুষ্ঠানিক ভাবে ভেঙে দেওয়ার পর জোটবদ্ধ রাজনীতির নতুন যে মেরুকরণ হয়েছে, তাতে জামায়াত বাদ পড়েছে। প্রথম দুটি কর্মসূচির পর তারা যুগপৎ কর্মসূচি থেকে দূরে রয়েছে। এ অবস্থায় চলমান আন্দোলন এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতের ভূমিকা কেমন হবে, তা এখনো চূড়ান্ত নয়। যদিও দলের নেতারা বলছেন, তাঁরা সরকারবিরোধী আন্দোলনে আছেন, থাকবেন।

জামায়াতের দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্দোলন এবং নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপির সঙ্গে তাঁদের বনিবনা হবে কি হবে না, সেটি দুই পক্ষের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে একটি বিষয়ে জামায়াত একমত যে বর্তমান সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। সেটি ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে।

তাই এই সরকারের কর্তৃত্বে জামায়াতের নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত অনেকটাই চূড়ান্ত। তবে নির্বাচনকালীন সরকারে যদি বড় ধরনের বিশ্বাসযোগ্য পরিবর্তন আসে এবং সেটি যদি বিরোধী দলগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, সে ক্ষেত্রে জামায়াতও সে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে।

দলের উচ্চপর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, কাঠামোগতভাবেই জামায়াতের এক রকম নির্বাচন প্রস্তুতি এবং প্রার্থী বাছাই করা থাকে। এবার তারা ১০০টি আসন ধরে নির্বাচনের ব্যাপারে মনোযোগী। নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জামায়াতের নিবন্ধন নেই। তাই ২০১৮ সালের নির্বাচনে তারা বিএনপির ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে প্রার্থী হয়েছিল। এবার বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে জামায়াত।

এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েব আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের গণমাধ্যমকে বলেন, বর্তমান সরকার ২০১৪ ও ২০১৮ সালে জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসেনি। সুতরাং গণতন্ত্র এবং মানুষের অধিকার রক্ষায় জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি সরকার প্রয়োজন। এ জন্য সব বিরোধী দলের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মাধ্যমে একটি দলনিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা জরুরি; যার মাধ্যমে একটি জনপ্রতিনিধিত্ব মূলক সরকার গঠিত হবে।

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন। কিন্তু আগামী নির্বাচনে দলটির অবস্থান কী হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। যদিও বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ, এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির সংলাপে অংশ নেয়নি ইসলামী আন্দোলন। এখন দলটি বলছে, নির্বাচন কমিশন সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে। একই সঙ্গে তারা একটি নির্বাচনী মোর্চা গঠনেরও চেষ্টা চালাচ্ছে।

ইসলামী আন্দোলনের নেতারা মনে করেন, নির্বাচনকালে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যথেষ্ট নয়। তাঁরা সর্বদলীয় জাতীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন চান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনে দলটি কী করতে চায়, তার স্পষ্ট ইঙ্গিত আছে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বরিশালের চরমোনাইয়ের বার্ষিক মাহফিলে দলের আমিরসহ দুই নেতার বক্তব্যে।

আমির সৈয়দ রেজাউল করিম বলেছেন, তাঁরা সব ইসলামি দলের সমন্বয়ে মজবুত প্ল্যাটফর্ম গঠনে কাজ করছেন। আর জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেছেন, নির্বাচন কমিশন সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করলে তাঁরা নির্বাচনে অংশ নেবেন। তাঁরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, সর্বদলীয় জাতীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন চান।

এই ‘জাতীয় সরকার’-এর রূপরেখা কেমন হবে, জানতে চাইলে গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের (দলের) রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। তবে আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা দেব। তারা (জাতীয় সরকার) সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন করবে। এই সরকারে বিএনপি থাকবে, আওয়ামী লীগও থাকবে। সবাইকে সমন্বয় করে সমঝোতায় আসতে হবে।’

তবে ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে কী করব, সেটা আগামী জুন-জুলাই মাসের আগে বলতে পারছি না।’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগামী নির্বাচনে ইসলামি দলগুলোর মধ্যে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের ভূমিকা কী হয়, সেটি হবে গুরুত্বপূর্ণ। এবার জামায়াতকে দূরে সরিয়ে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলনকে কাছে টানার চেষ্টা করছে বিএনপি। যদিও এখন পর্যন্ত ওই দল থেকেই সাড়া মেলেনি।

আরও খবর: রাজনীতি