জাতীয়

দুই আসামির ফাঁসি দিতে প্রস্তুত  কারাগার

  রাজশাহী প্রতিনিধি ২৭ জুলাই ২০২৩ , ৪:২৩:১৪ প্রিন্ট সংস্করণ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলার দুই আসামি ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুদণ্ড আজ বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) রাতে কার্যকর হবে। এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

এদিন সন্ধ্যা থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, কারা ফটকে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ ও কারারক্ষী।

জাহাঙ্গীরের বড় ভাই সোহরাব হোসেনকে ডাকা হয়েছে মরদেহ গ্রহণ করার জন্য। তিনি রাতে কারাগারে ঢুকেছেন। এ ছাড়া কারাগারের চিকিৎসক ডা. মিজান উদ্দিন ও ডা. জুবায়েরসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা পেছনের ফটক দিয়ে ঢুকেছেন।

আরও পড়ুনঃ  অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা, দেশজুড়ে আলোচিত দুই হত্যাকারীর ফাঁসি কার্যকর

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. নিজাম উদ্দিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন ডিআইজি প্রিজনস।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের এক সূত্রে জানা গেছে, একই মঞ্চে একই সঙ্গে দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হবে। প্রস্তুত করা হয়েছে ফাঁসির মঞ্চ। ইতোমধ্যে ফাঁসি কার্যকর করতে আটজন জল্লাদের একটি টিম গঠন করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুনঃ  যে ২৩ শর্ত দেওয়া হলো সমাবেশ করার জন্যে

বুধবার (২৬ জুলাই) কয়েক দফায় শেষ করা হয়েছে ফাঁসির চূড়ান্ত মহড়াও। ফাঁসি কার্যকর করতে প্রধান জল্লাদ আলমগীরসহ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে নজরুল, সুমন, উজ্জল, মজনু, নাসির, আশরাফুল এবং রিয়াজুল নামের অপর সাতজন জল্লাদকে। এরমধ্যে প্রধান জল্লাদ আলমগীরের বেশ কয়েকটি ফাঁসি দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। একেবারে নতুন ভাবে জল্লাদের খাতায় নাম লিখেছেন দেশের আরেক আলোচিত রাজশাহীর পুঠিয়ার মহিমা ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামি উজ্জল। আরেক নতুন জল্লাদ হলের রিয়াজুল। এ ছাড়া বাকি পাঁচ জল্লাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে।

জানা যায়, এই জল্লাদরা সবাই কোনো না কোনো হত্যা মামলা যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত আটজনের মধ্যে প্রধান জল্লাদ সিনিয়র জেল সুপারের সাদা রুমাল ফেলে সঙ্কেত দেওয়া মাত্রই হেন্ডেল টেনে ফাঁসি কার্যকর করবেন। এ সময় তার সঙ্গে একজন সহযোগী থাকবেন। বাকি ছয় জনের মধ্যে চারজন দুই আসামিকে ধরে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাবেন। আর দুজন তাদের কালো কাপড়ের জম টিপু ও গলায় দঁড়ি পরিয়ে দিবেন।

সূত্রমতে, আলোচিত মামলায় দুই আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর নিয়ে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করছে কারা কর্তৃপক্ষ। কারাগারের দক্ষিণ দিকের দেওয়াল ঘেঁষে এবং ১৪ নং সেল ও যুমনা ওয়ার্ডের (পাগলা ওয়ার্ড নামে পরিচিত) পাশেই এই ফাঁসির মঞ্চ। এ ছাড়াও যে দঁড়িতে ঝুলানো হবে তাতে আসামিদের তিনগুণ ওজনের বস্তা বেঁধে পরীক্ষা করে ফাঁসির দঁড়িটিও প্রস্তুত করা হয়েছে। কারাগারের নির্ধারিত এই ফাঁসির মঞ্চ এক সপ্তাহ আগে থেকে প্রস্তুত করা হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, রাত ৯টার দিকে ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি দুই আসামিকে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানাবেন সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলিল। তিনি এসময় মামলার শুরু থেকে শেষ রায় পর্যন্ত পড়ে শোনাবেন। এরপর তাদের গোসল করিয়ে খাবারের বিষয়ে শেষ ইচ্ছা আছে কিনা জানতে চাওয়া হবে। পরে ফাঁসি কার্যকরের আগে দুই আসামিকে তওবা পড়াবেন কারা মসজিদের ইমাম মাওলানা মুজাহিদুল ইসলাম। এরপর ১০টার আগেই তাদের ফাঁসির মঞ্চের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে।

পরে একই মঞ্চে এক সঙ্গে একই সময় দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর হবে। ১০টা ১ মিনিট থেকে ১০টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত তাদের দঁড়িতে ঝুলিয়ে রাখা হবে। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে তাদের হাত-পা ও ঘাড়ের রগ কাটা হবে। এরপরে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে পাঠানো হবে। জাহাঙ্গীরের লাশ পাঠানো হবে নগরীর মতিহার থানার খোঁজাপুরে। আর মহিউদ্দিনের লাশ পাঠানো হবে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার গ্রামের বাড়িতে।

ফাঁসি কার্যকরের সময় উপস্থিত থাকবেন- কারাগারের ডিআইজি প্রিজন, সিনিয়র জেল সুপার, কারাগারের দুজন ডাক্তার ও জেলার, ডেপুটি জেলার ছাড়াও জেলা প্রশাসন, এডিএম, সিভিল সার্জন, জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিনিধিরা।

কারাগারে প্রস্তুত রাখা হবে লাশ বহনের জন্য অ্যাম্বুলেন্স। এ ছাড়াও নিরাপত্তা জোরদার কারা হবে কারাগারের আশপাশের।

গত ২৫ জুলাই দুই আসামির পরিবারের সদস্যরা তাদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ করেছেন। জাহাঙ্গীরের পরিবারের ৩৫ সদস্য তার সঙ্গে দেখা করেন। আর মহিউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করে তার পরিবারের পাঁচ সদস্য। এরপর তাদের পরিবারের আর কেউ দেখা করতে পারেনি।

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাবির শিক্ষকদের আবাসিক কোয়ার্টার থেকে নিখোঁজ হন অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ। বাড়িতে তিনি একাই থাকতেন। কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম তার দেখাশোনা করতেন। পর দিন ২ ফেব্রুয়ারি বাড়ির পেছনের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় ড. এস তাহেরের মরদেহ। এরপর রাবি অধ্যাপক তাহেরের করা একটি সাধারণ ডায়েরির (জিডি) সূত্র ধরে একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও রাবি ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী, তার বাড়ির কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীরসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর ওই বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে তিনজন আদালতে গিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দিতে তারা বলেন, অধ্যাপক ড. এস তাহের বিভাগের একাডেমিক কমিটির প্রধান ছিলেন। একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মহিউদ্দিন অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য কমিটির সুপারিশ চেয়ে আসছিলেন। কিন্তু বাস্তব কারণে অধ্যাপক তাহের তা দিতে অস্বীকার করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সহযোগী অধ্যাপক মিয়া মো. মহিউদ্দিন এই হত্যার পরিকল্পনা করেন। বালিশ চাপায় খুনের পর বাড়ির ভেতরে থাকা চটের বস্তায় ভরে অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ বাড়ির পেছনে নেওয়া হয়। মরদেহ গুমের জন্য জাহাঙ্গীরের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুলের স্ত্রীর ভাই আবদুস সালামকে ডেকে আনা হয়। তাদের সহায়তায় পেছনের ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে ড. তাহেরের মরদেহ ফেলা হয়।

আরও খবর: জাতীয়