সারাদেশ

দাওয়াতপত্রে নাম পরে দেওয়ায় প্রধান শিক্ষককে পেটালেন আওয়ামী লীগ নেতা

  নীলাকাশ টুডেঃ ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ৬:৫৩:১৮ প্রিন্ট সংস্করণ

 

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ওয়াজ মাহফিলের দাওয়াতপত্র ও পোস্টারে অতিথির তালিকায় নিজের নাম ছোট হরফে নিচের দিকে দেওয়ার অভিযোগে একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে পিটিয়ে আহত করেছেন আওয়ামী লীগের এক নেতা। রোববার দুপুরে রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত গোলাম রসুল ওরফে কলি পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

 

মারধরের শিকার ওই শিক্ষকের নাম আবুল কালাম। তিনি কাঞ্চন ছাত্তার জুট মিলস উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। আহত অবস্থায় তাঁকে প্রথমে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মারধরের শিকার প্রধান শিক্ষক বলেন, ২৩ ফেব্রুয়ারি হাটাবো এলাকায় কবরস্থানের উন্নয়নের জন্য এলাকাবাসীর উদ্যোগে ওয়াজ ও দোয়া মাহফিল হওয়ার কথা রয়েছে। মাহফিলের দাওয়াতপত্র ও পোস্টারে স্থানীয় সংসদ সদস্যকে প্রধান অতিথি এবং কাঞ্চন পৌরসভার মেয়র ও পৌর যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলামকে উদ্বোধক করা হয়েছে। এরপরই রয়েছে গোলাম রসুলের নাম। তাঁকে রাখা হয়েছে বিশেষ অতিথির তালিকায়।

আয়োজক হিসেবে আবুল কালাম ও কাঞ্চন পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আবদুল কাইয়ুম রোববার দুপুরে গোলাম রসুলের বাড়িতে মাহফিলের দাওয়াতপত্র নিয়ে যান। এ সময় দাওয়াতপত্রে নিজের নাম ছোট হরফে নিচের দিকে দেওয়া হয়েছে অভিযোগ তুলে গোলাম রসুল প্রধান শিক্ষকসহ মাহফিলের আয়োজকদের গালাগাল করে বাড়ি থেকে বের করে দেন।

মারধরের শিকার প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম বলেন, ‘আমরা বাড়ি থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণ পরই তিনি (গোলাম রসুল) ফোন করে আমাদের অবস্থান জানতে চান। আমরা কাঞ্চন বাজারে আছি জানালে তিনি একটি চায়ের দোকানে আমাদের অপেক্ষা করতে বলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি লাঠিসোঁটাসহ তাঁর কয়েকজন অনুসারী নিয়ে সেই চায়ের দোকানে এসে আমাকে পেটানো শুরু করেন। মারধরের পর তিনি বলেন, আমরা তাঁকে অপমান করেছি। দাওয়াতপত্র ও পোস্টার ঠিক করে আমরা যেন তাঁর কাছে নিয়ে যাই।’

শিক্ষকের সঙ্গে থাকা আরও দুজন ঘটনার সত্যতা শিকার করেছেন। তবে তাঁরা ওই নেতার বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যবসায়ী ও রিকশাচালকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তাঁরা বলেন, গোলাম রসুল ওই শিক্ষককে মারধরের পর হুমকি দিয়েছেন। তিনি বারবার বলছিলেন, দাওয়াতপত্রে তাঁকে অপমান করা হয়েছে। এ সময় আশপাশের লোকজন ওই শিক্ষককে বাঁচাতে গেলে গোলাম রসুল তাঁদেরও গালাগাল করেন।

গোলাম রসুল এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, মতিন নামের তাঁর এক সমর্থকের সঙ্গে শিক্ষকের কথা–কাটাকাটি হয়। এ সময় একটু হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। পরে তিনি ঘটনার মীমাংসা করে দেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কাঞ্চন পৌরসভা মেয়র রফিকুল ইসলাম ও গোলাম রসুলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এই বিরোধ কেন্দ্র করে বেশ কয়েকবার দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলিসহ হামলা–মামলাও হয়েছে। প্রধান প্রতিপক্ষের নাম মাহফিলের পোস্টারে নিজের নামের আগে বড় করে ওপরের দিকে লেখার বিষয়টি গোলাম রসুল নিতে পারেননি।

এদিকে মারধরের ঘটনায় শিক্ষকের ছোট ভাই আতাউল করিম রোববার সন্ধ্যায় রূপগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (গ সার্কেল) আবির হোসেন বলেন, ‘শিক্ষককে মারধরের খবর শুনেছি। এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও খবর: সারাদেশ