জাতীয়

তদন্ত আটকে আছে দুই সন্দেহভাজনে

  ঢাকা অফিস ৮ আগস্ট ২০২৩ , ৩:২৯:৫৯ প্রিন্ট সংস্করণ

ঘটনাস্থলে এসে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। সেই ৪৮ ঘণ্টার স্থলে সাড়ে ১১ বছর কেটে গেছে, কিন্তু সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় খুনি শনাক্ত হয়নি আজও। এমনকি শতবার সময় নিয়েও এখনো আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি র‌্যাব।

এদিকে র‌্যাব গতকাল জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে আলামত পাঠিয়ে দুই সন্দেহভাজনের ডিএনএ নমুনা মিললেও তাদের শনাক্ত করতে না পারায় তদন্ত আটকে আছে।

এ মামলায় প্রতিবেদন দাখিলের জন্য গতকাল ছিল শততম ধার্য তারিখ। কিন্তু এ দিনও তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল না করায় ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল ইসলাম আগামী ১১ সেপ্টেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নতুন দিন ঠিক করেছেন। এদিকে ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া দুই অজ্ঞাত ব্যক্তির ডিএনএ থেকে ছবি প্রস্তুতের মাধ্যমে হত্যাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে বলে আদালতকে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী (পাবলিক প্রসিকিউটর) আব্দুল্লাহ আবু বলেছেন, এটা (সাগর-রুনি হত্য) গুরুত্বপূর্ণ হত্যা মামলা। অনেক বছর হয়ে গেছে। এটা নিয়ে অনেক কথা হয়, তাই এ মামলার দ্রুত একটা সুরাহা হওয়া উচিত।

অন্যদিকে ফৌজদারি মামলার সিনিয়র আইনজীবী ও ঢাকা মহানগর আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর এহসানুল হক সমাজী বলেছেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ (৫) ধারায় ১২০ কার্যদিবসের মধ্যে কোনো মামলার তদন্ত শেষ করার বিধান রয়েছে, তবে বাধ্যতামূলক নয়। তাই এ সময়ের পর মামলার তদন্ত চলতে বাধা নেই। তবে এই নয় যে, তা বছরের পর বছর চলতে থাকবে। তিনি বলেন,তদন্ত সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা এ বিষয়ে আদালতের নজরদারি বাড়াতে হবে। আদালত তদন্ত কর্মকর্তাকে কেস ডায়েরিসহ তলব করতে পারেন। কেস ডায়েরিতে একটি মামলার তদন্তের প্রতিদিনের হিসাব থাকে। তদন্ত কর্মকর্তার কেস ডায়েরি পর্যালোচনা করে যদি বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট দেখেন, তদন্ত কর্মকর্তা ইচ্ছাকৃত তদন্ত বিলম্ব করছেন, তবে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিতে পারেন। একই সঙ্গে পরবর্তী ধার্য তারিখের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিতে পারেন।

২০২০ সালের ৭ অক্টোবর এ মামলার তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন তদন্তকারী কর্মকর্তা র‌্যাব সদর দপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মো. শফিকুল আলম আদালতে দাখিল করেন। সেখানে তিনি বলেন, ২০১৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে র‌্যাব এ মামলার তদন্ত শুরু করেছে। মামলাটির তদন্তকালে পূর্ববতী তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তের আনুষঙ্গিক কাজ করাসহ আট আসামিকে গ্রেপ্তার করেছেন। এদের মধ্যে ছয়জন জেলহাজতে আছেন; দুজন আছেন জামিনে। মামলাটি যথাযথভাবে তদন্তের লক্ষ্যে ঘটনাস্থল থেকে জব্দকৃত ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রে।

এদিকে মামলার নথি থেকে দেখা যায়, মামলায় গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমান, বাড়ির দারোয়ান পলাশ রুদ্র পাল জামিনে আছেন। আর বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুন ও আবু সাঈদ কারাগারে রয়েছেন।

ঘটনার পর প্রথমে মামলাটি তদন্ত করে শেরেবাংলানগর থানার পুলিশ। তার পর মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি) দেওয়া হয়। দুই মাসের বেশি সময় ডিবি তদন্তের পর একপর্যায়ে হাইকোর্টের নির্দেশে মামলার তদন্তভার র‌্যাবকে দেওয়া হয়।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে ভাড়া বাসায় মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার হয়। ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানায় মামলা করেন।

গতকাল সোমবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এ বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আল মঈন জানান, র‌্যাব ‘সর্বোচ্চ গুরুত্ব এবং আন্তরিকতার সঙ্গে’ মামলার তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। নির্দোষ কেউ যেন কোনোভাবে অভিযুক্ত হিসেবে জড়িয়ে না যান, সেই ব্যাপারটিও তদন্তে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন তারা। সন্দেহভাজন দুজনের পরিচয় বেরিয়ে এলেই তাদের তদন্ত এগিয়ে যাবে। তবে তদন্ত কবে নাগাদ শেষ করা সম্ভব হবে, তার কোনো ধারণা দিতে পারেননি তিনি।

আল মঈন বলেন, ‘এই মামলার আলামত আমরা যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানিতে পরীক্ষার জন্য পাঠাই। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলেই কিন্তু আমরা পাঠিয়েছিলাম। আমরা আনুমানিক ২৫ জনের, যাদের প্রাথমিকভাবে সন্দেহ হয়েছিল, তাদের ডিএনএ আলামত পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছিলাম। যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাব থেকে আমরা যে প্রতিবেদন পেয়েছি, সেটি যাচাই-বাছাই করে আমরা দুজনকে পেয়েছি। ডিএনএ পরীক্ষা থেকে যে দুজন সাসপেক্ট পাওয়া গেছে, তাদের আমরা এখনো শনাক্ত করতে পারিনি। এটার ব্যাপারেই মূলত আমাদের তদন্ত কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন। যে প্রতিবেদনটি এসেছে তার মাধ্যমে সুনির্দিষ্টভাবে কারা জড়িত তা বলার মতো তথ্য আমরা পাইনি। এ বিষয়টি যখন আদালতে ডেট পড়ে, তখন আমরা আদালতে উপস্থাপন করি।’

তদন্ত শেষ করতে আরও কত দিন লাগতে পারে জানতে চাইলে মঈন বলেন, সন্দেহভাজন দুজনকে যখন আমরা শনাক্ত করতে পারব, তখন আমরা বলতে পারব কত দিন লাগবে।

আরও খবর: জাতীয়