রাজনীতি

জামায়াত ইস্যুতে মুখোমুখি অবস্থানে বিএনপি ও অলি

  প্রতিনিধি ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৭:২৩:২৬ প্রিন্ট সংস্করণ

 

নীলাকাশ টুডেঃ যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে ২০ দলীয় জোটের প্রধান দল বিএনপি ও জোটের অন্যতম শরিক এলডিপির পরস্পরবিরোধী অবস্থান আবারও স্পষ্ট হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীকে দূরে রেখে বিএনপির ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ গড়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আবারও বিতর্কিত দলটিকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ঘোষণা দিলেন জোটের অন্যতম শরিক এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এলডিপির উদ্যোগে কর্নেল অলির সভাপতিত্বে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ ঘোষণা দেন তিনি। হঠাৎ তাঁর এ বক্তব্যে বিস্মিত হয়েছেন বিএনপিসহ নিষ্ফ্ক্রিয় জোটটির নেতারা।

সভায় কর্নেল অলি ঘোষণা করেন, আগামী সরকার পতনের আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে থাকবে তাঁর দল এলডিপি, নাগরিক ঐক্য ও জামায়াত। এ সময় ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনেরও ইঙ্গিত দেন অলি। ওই সভায় পাশে বসা ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম। তিনিও আগামীতে ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলনের ব্যাপারে একমত পোষণ করে বক্তব্য দেন। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে জামায়াত না থাকার ঘোষণার পরও তিনি এ দলটিকে নিয়ে নতুন করে পথচলা শুরুর ঘোষণা দিলেন। এ পরিস্থিতিতে আবারও বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরে আলোচনায় এসেছেন অলি আহমদ। প্রকাশ্যে অলির বক্তব্যকে গুরুত্ব না দিলেও ভেতরে ভেতরে অসন্তুষ্ট বিএনপি।

অবশ্য লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, এ মুহূর্তে সবার দায়িত্ব দেশটাকে রক্ষা করা। তাই দলমত নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এ ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, কর্নেল একটি অনুষ্ঠান করেছেন। সেখানে জামায়াতের নেতারা উপস্থিত ছিলেন, মাহমুদুর রহমান মান্না ছিলেন। এতে তো দোষের কিছু দেখছি না।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকার পতনের অভিন্ন দাবিতে ভিন্ন আদর্শিক অবস্থানের দলগুলোর যুগপৎ আন্দোলনে নাগরিক ঐক্য সব সময় সমর্থন জানিয়েছে। কিন্তু কোনো একটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিকে সামনে রেখে নাগরিক ঐক্যসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন তথা জোট গঠনের তথ্য সঠিক নয়। যদিও এর আগে ২০১৯ সালে তিনি জামায়াতকে নিয়ে জাতীয় মুক্তি মঞ্চ প্ল্যাটফর্ম গঠন করেছিলেন। কিন্তু তাতে বিএনপির সম্মতি না থাকায় ওই প্ল্যাটফর্ম আর বেশিদূর যেতে পারেনি।

কর্নেল অলির এবারের আয়োজন নিয়েও বিএনপির মধ্যে তেমন কোনো ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নেই। বিএনপির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা বলেন, বেশ কয়েক দিন ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান এলডিপির কর্নেল অলি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বি চৌধুরীকে নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। ওই নেতা তাঁর বক্তব্যে বলছেন, কর্নেল অলি ও বি চৌধুরী নতুন বিএনপি গঠন করছেন। সেই দলে বিএনপির অনেকে যোগদান করবেন। এ রকম প্রেক্ষাপটে কর্নেল অলি তাঁর অবস্থান পরিস্কার করার জন্যই ওই সভার আয়োজন করতে পারেন। সেখানে তিনি বিএনপির জাতীয় ঐক্যের সংলাপ ও রূপরেখার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।

২০০১ সালের বিএনপি- জামায়াত জোট সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন কর্নেল (অব.) অলি ও বি চৌধুরী। বিএনপির ডাকসাইটে নেতা ছিলেন তাঁরা। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের আগে এই দুই নেতা তাঁদের অনুসারীদের নিয়ে বিএনপি ত্যাগ করে পৃথক দল গঠন করেন। ওই সময়ে বিএনপিতে ভাঙনের জন্য মূলত এ দুই নেতাকেই দায়ী করা হয়। ওই সময়ে তাঁদের দল আওয়ামী লীগের মহাজোটের শরিক হিসেবেও যোগদান করে। আবার এলডিপি ও বিকল্পধারা একীভূত করে একটি দলও গঠন করা হয়। যদিও সেটা আর বেশিদূর এগোয়নি। এবারও এ দুই নেতা মিলে আলাদা বিএনপি গঠন করছেন বলে আওয়ামী লীগের নেতা আবদুর রহমান বিভিন্ন সময়ে জানান দিয়েছেন। ইতোমধ্যে তাঁর ওই বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। তার পরও তাঁকে নিয়ে বিএনপির অন্দরমহলের সন্দেহ রয়েই গেছে। কর্নেল অলি আর বি চৌধুরীর তৎপরতার মতো সংবাদকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না বিএনপির হাইকমান্ড। এ ধরনের সংবাদকে গুজব বলেই উড়িয়ে দিচ্ছেন দলের সিনিয়র নেতারা।

বিএনপি নেতারা বলছেন, মূলত আওয়ামী লীগ নেতার বক্তব্যে বিব্রত কর্নেল অলি নিজের অবস্থান আরও সুসংহত করার জন্য মাঠে নেমেছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিজের গুরুত্বকে বাড়ানোর কৌশল হিসেবে জামায়াতসহ আরও বেশ কিছু দলের সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছেন। তবে যত কিছুই হোক, কর্নেল অলি এ শেষ বয়সে আর বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না বলে বিশ্বাস তাঁদের। আবার অনেক নেতা জামায়াতকে নিয়ে তাঁর মাখামাখিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এটাকে বিএনপির সঙ্গে কর্নেল অলির দরকষাকষির কৌশল হিসেবে মনে করছেন তাঁরা।

এলডিপির একাংশের মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম বলেন, কর্নেল (অব.) অলিকে বিশ্বাস করা যায় না। এর আগে তিনি এই জামায়াতের কারণে বিএনপি ত্যাগ করেছিলেন। তখন তিনি জিয়া পরিবার আর বিএনপির বিরুদ্ধে অনেক বিষোদ্গার করেছিলেন। বিএনপির অনেক ক্ষতি করেছেন তিনি। এখন তিনি সেই জামায়াতের সঙ্গেই সখ্য গড়েছেন।

আরও খবর: রাজনীতি