জাতীয়

জাপায় ফের অস্থিরতা রহস্যের বেড়াজাল কাটছে না, দলকে ঘিরে কানাঘুষা চলছে

  প্রতিনিধি ৫ জানুয়ারি ২০২৪ , ৩:০৩:৪১ প্রিন্ট সংস্করণ

নীলাকাশ টুডে

 

দ্বাদশ নির্বাচনের বাকি আর একদিন। এর মধ্যেই জাতীয় পার্টিতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। একের পর এক প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে যাচ্ছেন। দেবর ভাবির দ্বন্দ্বের পর এবার খোদ কাদেরপন্থি জাপায় বড় ধরনের কোন্দল দেখা দিয়েছে। যে কোনো সময় দল আবার ভাঙ্গনের মুখে পড়তে পারে। নির্বাচনের পর জাপা বড় ধরনের সংকটের মুখোমুখি হতে পারে বলে জানা গেছে। ক্ষোভ ও হতাশার কারণে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে আসছেন। গত কয়েকদিনে ২৬ জন প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে গেছেন।

জাপার সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২৬ আসনে সমঝোতা হলেও বাকি ২৫৭টি আসনে দলটির প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে কেন্দ্রের নির্দেশে। কিন্তু চোখে পড়ার মতো প্রচার লক্ষ্য করা যাচ্ছে না তাদের। জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, যারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন তারা দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। তিনি নির্বাচনে জাপার কি অবস্থা হয় তা পর্যবেক্ষণ করছেন। নির্বাচন শেষে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। অন্যদিকে যে সমস্ত প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে গেছেন তারাও রওশন গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বলে জানা গেছে। নির্বাচনের পর বিষয়টি পরিষ্কার হবে। নির্বাচনীর মাঠে থাকা প্রার্থীরা এখন সবাই হতাশার মধ্যে পড়ে আছেন।

 

দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিব কারও সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে না প্রার্থীদের। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে তত বেশি কানাঘুষা চলছে। রহস্যের বেড়াজাল কাটছে না দলকে ঘিরে। বলা হচ্ছে ১৫০টিরও বেশি আসনে জামানত হারানোর ঝুঁকি রয়েছে জাপার। অনেকে তাই  নীরবে মাঠ থেকে সটকে পড়ছেন।

এদিকে রংপুরে নির্বাচনী প্রচারে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে ভোটাররা সংশয়ে আছেন বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, দলের যেসব প্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করছেন, তারা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। এটা দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থি, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, হতাশা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন জাপার অনেক প্রার্থী। আওয়ামী লীগ  ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সারাদেশে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করছে। প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে জাতীয় পার্টির কিছু কিছু প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। সম্প্রতি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার কাজলা গ্র্রাম নিজের বাড়িতে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেছেন মুজিবুল হক চুন্নু।

জাপার দপ্তর সম্পাদক এম এ রাজ্জাক খান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকা প্রার্থীর সংখ্যা ২০০-এর নিচে নেমে গেছে। আগামীদিনে তা আরও কমতে পারে।

জাতীয় পার্টির ২৬৫ প্রার্থীর মধ্যে ২৬ আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে এখন পর্যন্ত টিকে থাকলেও বিজয় অনিশ্চিত। বাকি ২৩৯টি আসনের সবাই নৌকার প্রার্থীসহ অন্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের সঙ্গে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন। এসব প্রার্থী জাপার কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি আঙুল তুলেছেন। তারা বলছেন, নির্বাচন ঘিরে দল থেকে আর্থিকসহ নানা ধরনের যে সহযোগিতা পাওয়ার কথা তার কিছুই তারা পাচ্ছেন না। এ নিয়েই ক্ষোভ দানা বেঁধেছে তাদের মধ্যে। ফলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো। জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

পার্টির নেতারা বলছেন, নির্বাচনের শুরুতে প্রার্থীদের দল থেকে আর্থিক সাপোর্ট দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। এজন্য তারা মাঠে নেমেছিলেন। শুরুতে নিজেদের টাকা খরচ করে অনেক প্রার্থী নিজ নিজ এলাকায় পোস্টার ও নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। কিন্তু প্রার্থীরা এখন দলের প্রতিশ্রুত আর্থিক সাপোর্ট পাচ্ছেন না। যার ফলে অনেকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন।

জাতীয় পার্টির অনেকেই অভিযোগ করে বলেছেন, পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা আওয়ামী লীগ থেকে ছাড় পাওয়া ২৬ আসন নিয়ে ব্যস্ত আছেন। বাকি প্রার্থীদের তারা মাঠে ছেড়ে দিয়ে বলে দিয়েছেন আপনারা মাঠে থাকলে থাকেন, না থাকলে নাই। সবকিছু আপনাদের নিজ দায়িত্বে করতে হবে। এমনকি কেন্দ্রের পক্ষ থেকে প্রার্থীদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগও করা হচ্ছে না।

জাপার সরে দাঁড়ানো প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন, দিনাজপুর-২  মাহবুবুর রহমান (বর্জন), লালমনিরহাট-১ মো. হাবিবুল হক বশু মিয়া (প্রত্যাহার), নওগাঁ-২ মো. তোফাজ্জল হোসেন (বর্জন), নাটোর-৪ অধ্যাপক মো. আলাউদ্দিন মৃধা (প্রত্যাহার), সিরাজগঞ্জ-৩ মো. জাকির হোসেন (বর্জন), চুয়াডাঙ্গা-১ সোহরাব হোসেন (বর্জন), চুয়াডাঙ্গা-২ মো. রবিউল ইসলাম (বর্জন), বরগুনা-১ মো. খলিলুর রহমান (বর্জন), বরিশাল-২ ইকবাল হোসেন তাপস (বর্জন), বরিশাল-৫ ইকবাল হোসেন তাপস (বর্জন), টাঙ্গাইল-৭ জহিরুল ইসলাম জহির (বর্জন), ঢাকা-৫ মীর আব্দুস সবুর আসুদ (প্রত্যাহার), ঢাকা-৬ অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ (প্রত্যাহার), ঢাকা-৭ তারেক এ আদেল (প্রত্যাহার), ঢাকা-১৩ শফিকুল ইসলাম সেন্টু (প্রত্যাহার), ঢাকা-১৭ সালমা ইসলাম (প্রত্যাহার), গাজীপুর-১ এম এম নিয়াজ উদ্দিন (বর্জন), গাজীপুর-২ জয়নাল আবেদীন (বর্জন), গাজীপুর-৪ মো. সামসুদ্দিন খান (বর্জন), গাজীপুর-৫ এমএম নিয়াজ উদ্দিন (বর্জন), নারায়ণগঞ্জ-৪ আলহাজ ছালাহ উদ্দিন খোকা মোল্লা (প্রত্যাহার), হবিগঞ্জ-২ শংকর পাল (বর্জন), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ মো. রেজাউল ইসলাম ভূূঁইয়া (প্রত্যাহার), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ তারেক আহমেদ আদেল (প্রত্যাহার), কুমিল্লা-২ এটিএম মঞ্জুরুল ইসলাম (বর্জন), চাঁদপুর-১ একে এস এম শহীদুল ইসলাম (প্রত্যাহার), চট্টগ্রাম-১৪ আবু জাফর মো. ওলিউল্ল্যাহ  (প্রত্যাহার), পার্বত্য রাঙ্গামাটি হারুনুর রশীদ মাতুব্বর (প্রত্যাহার)।

এদিকে নির্বাচন সুষ্ঠুু হওয়া নিয়ে ভোটাররা সংশয়ে আছেন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তিনি বলেন, অতীতে নির্বাচন ভালো হয়নি, এবারে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়। এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না পরিবেশ কেমন থাকে। পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেব। বুধবার নিজ নির্বাচনী এলাকা রংপুর-৩ আসনের বুড়ির রোডে গণসংযোগ শেষে সাংবাদিকদের জিএম কাদের এসব কথা বলেন। শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি নির্বাচনে থাকবে কি না এ প্রশ্নে জিএম কাদের বলেন, আমরা শেষ পর্যন্ত থাকার চেষ্টা করছি।

 

আরও খবর: জাতীয়