সারাদেশ

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব খুলনার বৃক্ষমেলা

  প্রতিনিধি ২৯ জুলাই ২০২২ , ৭:০৩:০৯ প্রিন্ট সংস্করণ

 

খুলনা প্রতিনিধিঃ খুলনায় বৃক্ষমেলায় সময় স্বল্পতাও ব্যবসায়ীদের চিন্তায় ফেলেছে। এ জন্য মেলার মেয়াদ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন নার্সারি মালিক সমিতির নেতারা। তবে আয়োজকরা বলছেন, মেলায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়লেও বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। মেলার সময় বাড়ানোর বিষয়ে ব্যবসায়ীরা লিখিত জানালে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জানা গেছে, গত ২২ জুলাই থেকে খুলনায় ১৫ দিনব্যাপী বৃক্ষ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। খুলনা জেলা প্রশাসন ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ যৌথভাবে এই মেলার আয়োজক। মেলা চলবে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সার্কিট হাউস মাঠে এই মেলা প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সকলের জন্য উন্মুক্ত। বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার এবারের প্রতিপাদ্য ‘বৃক্ষপ্রাণে প্রকৃতি-পরিবেশ, আগামী প্রজন্মের টেকসই বাংলাদেশ’।

 

খুলনা নার্সারি মালিক সমিতির সভাপতি এসএম বদরুল আলম রয়েল বলেন, মেলায় ৬১টির মতো স্টল রয়েছে। এর মধ্যে নার্সারি মালিক সমিতির ৪৯টি স্টল রয়েছে। এছাড়া সরকারি স্টল আছে। আমাদের এখানে ফলজ, বনজ, ওষুধি সব ধরনের গাছ রয়েছে। এছাড়া বর্তমান সময়ে ছাদ বাগানের জন্য স্পেশাল কিছু স্টল আছে। বৃক্ষমেলায় সবাইকে আমন্ত্রণ।

তিনি বলেন, মেলা আগামী ৫ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে আমরা জেলা প্রশাসক ও বনবিভাগের নিকট আরও ১৫ দিন মেলার সময় বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে।

মেলার সময় বৃদ্ধির দাবি কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে খুলনা নার্সারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবু মাসুদ বলেন, দুটি কারণে মেলার সময় বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি। প্রথমত প্রকৃতি আমাদের সঙ্গে নেই। প্রচণ্ড খরা চলছে। এই খরার মধ্যে গাছ লাগানোর আগ্রহ থাকলেও সবাই যথাযথ ভাবে সেটা পালন করতে পারছেন না। আরেকটি কারণ হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে রাত ৮টার মধ্যে দোকান বন্ধ করা। মানুষ গরম ও খরার কারণে দিনের বেলা তেমন একটা মেলায় আসতে চায় না। আর যখন সন্ধ্যায় মানুষ আসতে শুরু করে তখন আমাদের বন্ধ করতে হয়। এই দুটি কারণ মিলিয়ে সময়টাকে যদি আরও একটু বৃদ্ধি করা যায়, তাহলে আমাদেরও উপকার হবে। সঙ্গে যারা গাছ কিনতে আসছেন, তাদেরও উপকার হবে।

 

তিনি বলেন, মেলায় গাছ বিষয়ে যা প্রয়োজন হয় সব মিলছে। গাছ, টব, তথ্য-পরামর্শ, গাছ বিষয়ক বই, জিনিসপত্র, সার, ওষুধ, বীজ ও কীটনাশক সব ব্যবস্থা কিন্তু একটা জায়গাতে। কম দামে সবার কাছে গাছ পৌঁছে দেওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে।

 

হানিফ নার্সারির মো. নুর ইসলাম বলেন, বেচাকেনা মোটামুটি ভালো হচ্ছে। এখানে ফলজ, বনজ, ওষুধি, ইনডোর-আউটডোর সব ধরনের গাছ আছে। এখানে সাকুলিয়ান, ক্যাট্রাস, এডোনিয়ামসহ বিভিন্ন গাছ আছে। এখানে ৫০ টাকা, ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ২২-২৫ হাজার টাকার গাছও আছে।

আরেক নার্সারির মালিক বলেন, আমার কাছে থাই ছফেদা, সিডলেস লেবু, চায়না কাগজি, মাল্টা, বেদানা, আমরাসহ বিভিন্ন ধরনের গাছ আছে। তুলনামূলক বেচা-কেনা ভালো না। কারণ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, রোদ বেশি, বৃষ্টির তেমন দেখা নেই। তাই মানুষ গাছ কেনার আগ্রহ করছে না।

গ্রিন গ্লোব নার্সারির শেখ জাহের আলী বলেন, কৃষি ব্যবস্থাপনা যেভাবে চলছে, তাতে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক সার এবং রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে প্রকৃতির প্রাণ-পরিবেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ইতোমধ্যে আমরা দেখছি। এখন বর্ষা হওয়ার কথা, কিন্তু সেই পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তন হয়ে গেছে। আমরা ৭০-৮০ বছর ধরে রাসায়নিক ও কীটনাশক সার ব্যবহার করে উৎপাদন ব্যবস্থাপনা নষ্ট করে ফেলেছি। আমাদেরকে জৈব পদ্ধতিতে আসতে হবে।

মেলায় আসা শিক্ষার্থী কামরান শিকদার আপন বলেন, মেলায় এসেছি। ঘুরে ঘুরে গাছ দেখছি। পছন্দ হলে কিনব।

সুন্দরবন পশ্চিমের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, ১৫ দিন ব্যাপী বৃক্ষমেলা চলছে। মানুষ মেলায় আসছে, বেচা-কেনাও ভালো। প্রথমদিকে একদিনে লাখ টাকার গাছ বিক্রি হয়েছে। পরবর্তীতে একদিনে দুই লাখ টাকার বেশি গাছ বিক্রি হয়েছে। বৃষ্টি হলে গাছের বিক্রি আরও বেড়ে যেত।

মেলায় মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে লিখিত কোনো আবেদন আমরা পাইনি। লিখিত আবেদন করা হলে বিষয়টি নিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। আলোচনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও খবর: সারাদেশ