জাতীয়

চার মাসে তিন বার ভূমিকম্প, কীসের পূর্বাভাস?

  বিবিসি ১৫ আগস্ট ২০২৩ , ৬:৩৪:২৩ প্রিন্ট সংস্করণ

 

 

 

বাংলাদেশে গত মে মাস থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত প্রায় চার মাসে তিন বার ছোট থেকে মাঝারি আকারের যে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, তার মধ্যে প্রায় প্রতিটিরই উৎপত্তিস্থল ছিল দেশের সীমানার ভেতর বা আশপাশে।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বার্মিজ প্লেট ও ইন্ডিয়ান প্লেটের পরস্পরমুখী গতির কারণেই এ ধরনের ভূমিকম্প হচ্ছে। এই দুটি প্লেটের সংযোগস্থলে প্রচুর পরিমাণে শক্তি জমে রয়েছে যেগুলো বের হয়ে আসার পথ খুঁজছে। আর সে কারণেই ঘন ঘন এমন ভূমিকম্প অনুভূত হচ্ছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, দু’দিন আগে বা পরে এই শক্তি বেরিয়ে আসবেই। আর সেটাই জানান দিচ্ছে এই ছোট ভূমিকম্পগুলো।

বাংলাদেশে সবশেষ সোমবার (১৪ আগস্ট) রাত ৮টা ৪৯মিনিটের দিকে একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এই ভূমিকম্পে রাজধানীসহ দেশের বেশিরভাগ এলাকা কেঁপে ওঠে।

মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির মাত্রা রিখটার স্কেলে ছিল ৫ দশমিক ৫। যা মাঝারি মাত্রার একটি ভূমিকম্প। আর এর উৎপত্তিস্থল ছিল বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের সিলেটের কানাইঘাট এলাকায়। গভীরতা ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার।

এর আগে, গত ১৬ জুন রাজধানীসহ সারাদেশে ৪ দশমিক ৫ মাত্রার মৃদু ভূমিকম্প হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের গোলাপগঞ্জ। চলতি বছরের ৫ মে আরেকটি ভূমিকম্প হয়েছে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায়। যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস এর হিসেব অনুযায়ী, এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার কাছে বিক্রমপুরের দোহার থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। এটিরও গভীরতা ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার।

ভূতত্ত্ববিদদের মতে, বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকায় ইন্ডিয়ান প্লেট ও বার্মা প্লেট নামে দু’টি টেকটনিক প্লেটের অবস্থান রয়েছে। এরমধ্যে ইন্ডিয়ান প্লেটটি উত্তর-পূর্ব দিকে এবং বার্মিজ প্লেটটি পশ্চিম দিকে যাচ্ছে।

‘ফলে পরষ্পরমুখী সংঘর্ষ হচ্ছে। এই দুটি প্লেটের যে সংযোগস্থল সেটা বেশ গভীরে। বাংলাদেশের যেসব অঞ্চলে বিশেষ করে সিলেট এলাকায় যেখানে ভূমিকম্প হচ্ছে সেটা স্যালো ডেপথ, অর্থাৎ কম গভীর।’

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে শক্তিশালী ভূমিকম্প হওয়ার মতো উৎস হচ্ছে সিলেট থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত পার্বত্য এলাকা। এখান থেকে মনিপুর, মিজোরাম, মিয়ানমারে যে পার্বত্য এলাকা রয়েছে সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ।

কিশোরগঞ্জে যে হাওর রয়েছে সেটি দিয়ে মেঘনা নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরে আন্দামানের পাশ দিয়ে দক্ষিণে যদি একটা রেখা কল্পনা করা যায়, এই এলাকাটা হচ্ছে দুটি টেকটনিক প্লেটের সংযোগস্থল। আর এই দুটি প্লেটের মধ্যে পূর্ব দিকেরটা হচ্ছে বার্মা প্লেট। আর পশ্চিমেরটা হচ্ছে ইন্ডিয়া প্লেট।

এই সংযোগস্থলের উপরের ভাগটা অর্থাৎ সুনামগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে পূর্বে মনিপুর, মিজোরাম পর্যন্ত এই অঞ্চলটি ‘লকড’ হয়ে গেছে অর্থাৎ এখানে শক্তি জমা হয়ে আছে।

‘দুটি প্লেটের যে সংযোগস্থল, সেটা এখানে স্যালো বা কম গভীর। অর্থাৎ পশ্চিমে পাঁচ কিলোমিটার থেকে শুরু করে পূর্বে ধীরে ধীরে এটা ২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত গভীর হয়েছে।’

ড. আখতার বলেন, ‘গত হাজার বছরের শক্তি এখানে জমা হয়ে আছে। এর আগে যেসব ঐতিহাসিক ভূমিকম্প এই অঞ্চলে সংগঠিত হয়েছে তার বিভিন্ন বই-পুস্তক এবং পৌরাণিক কাহিনী বিশ্লেষণ করে আমরা জানতে পেরেছি যে, এই এলাকায় বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছে ৮০০ থেকে হাজার বছর আগে।’

এরপর থেকে আবার শক্তি এই এলাকায় জমা হতে শুরু করেছে। ভূমিকম্পের এই গবেষকের মতে, ৮ দশমিক ২ থেকে শুরু করে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সংগঠনের মতো শক্তি এই এলাকায় জমা হয়ে আছে। এই শক্তি আজ হোক, কাল হোক, বা আগামী ২৫ বছরেই হোক, এটা বের হতেই হবে, এর কোনও বিকল্প নাই।

সেই বড় ভূমিকম্প যখন হবে তার আগের সময়টাতে এ ধরনের ছোট ভূমিকম্প দেখা যায় বলে মনে করেন তিনি। সেটা কয়েক বছর এমনকি ৫-১০ বছর ধরে হতে পারে।

‘গত চার-পাঁচ মাসে আমরা তিন-চারটি ভূমিকম্প দেখলাম। এই সবগুলোই হচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি ভূমিকম্প। এটা সাবডাকশন জোনের লকড সেগমেন্টে হচ্ছে।’

এটার মানে হচ্ছে, বড় শক্তি বের হওয়ার একটা প্রবণতার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তার মানে যেকোনও সময় একটি বড় ভূমিকম্প সংগঠিত হতে পারে। তবে এই বড় ভূমিকম্প কবে হবে সেটা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না।

আরও খবর: জাতীয়