জাতীয়

চাঞ্চল্যকর রহস্য উদঘাটন, জুয়ার ফাঁদে ব্যবসা জীবন সবই শেষ!

  প্রতিনিধি ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ২:১৪:০৯ প্রিন্ট সংস্করণ

 

নীলাকাশ টুডে

দুলাল হোসেন ও শিমুল দুই ভাই। বাবা মারা যাওয়ার পর দুই সহোদর কঠোর শ্রম-ঘামে তিলে তিলে গড়ে তোলেন কোটি টাকার ব্যবসা। স্ত্রী-সন্তানসহ দুই ভাইয়ের যৌথ পরিবারে ছিল সচ্ছলতা, ছিল সুখ।

কৌতূহলবসে এক সময় তাস খেলতে শুরু করেন ছোট ভাই শিমুল। কিন্তু সেই কৌতূহলই শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে দাঁড়ায়। ধীরে ধীরে জুয়ার জালে বন্দি হয়ে যান তিনি। শেষ পর্যন্ত জীবনের বিনিময়ে এর মাশুল দিতে হলো তাকে। শুধু তাই নয়, দুই ভাইয়ের সুখের সংসারও ধসে পড়েছে তাসের ঘরের মতোই।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের রাউৎগাঁও এলাকায় ছিল দুই ভাইয়ের তাঁতের ব্যবসা। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছিল বেচাকেনা। স্থানীয় জুয়াড়িদের প্ররোচনায় এক সময় তাস খেলার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েন শিমুল। সে নেশায় এতটাই বুঁদ হয়ে পড়েন যে, নিজ বাসার শয়নকক্ষেই বসাতেন তাসের আসর। স্ত্রী সোনিয়া বাধা দিলে তাকে মারধর করতেন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে শাশুড়ির কাছে ঘুমাতেন তিনি। অন্যদিকে শয়নকক্ষে জুয়াড়িদের সঙ্গে শিমুল বসতেন তাসের আসরে। ২০১৯ সালের ১৯ আগস্ট মধ্যরাতের ঘটনা। হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় শিমুলের স্ত্রীর। পাশের শয়নকক্ষে প্রবেশ করে দেখতে পান, জামদানি শাড়ি বানানোর রশিতে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় তার স্বামীর লাশ ঝুলছে।

পরিবারের সদস্যরা ধারণা করেছিলেন, হতাশা থেকে শিমুল আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি উঠে আসায় মোড় ঘুরে যায় তদন্তের। শেষ পর্যন্ত তদন্তে বেরিয়ে আসে, যাদের সঙ্গে জুয়া খেলতে স্ত্রীকে মারধর করে ঘরছাড়া করতেন শিমুল, সেই জুয়াড়িরা, সেই ঘরেই তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছিল। এমনকি ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পর্যন্ত গায়েব করে দিতে চেয়েছিল খুনি জুয়াড়িরা।

নিহতের বড় ভাই দুলাল হোসেন বলেন, হঠাৎ করেই জুয়ার নেশায় পড়ে যান শিমুল। এলাকার কিছু জুয়াড়ি তাকে কৌশলে তাস খেলতে নিয়ে যায়। প্রথমে সময় কাটানোর জন্য খেললেও পরে টাকা দিয়ে তাস খেলায় আসক্ত হয়ে পড়েন শিমুল। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় এলেই জুয়াড়িরা কৌশলে তাকে জুয়ার আসরে নিয়ে যেত। এভাবে শিমুল ব্যবসার অন্তত ৫২ লাখ টাকা জুয়া খেলে খোয়ায়। ব্যবসা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে দুলাল ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালাতে শুরু করেন। কয়েক দিন পর শুনতে পান, তার ভাইয়ের গলায় ফাঁস দেওয়া লাশ পাওয়া গেছে। পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা করে।

হত্যার ঘটনা প্রকাশ্যে আসার বিষয়ে দুলাল বলেন, যাদের সঙ্গে তাস খেলত তাদের আচরণ ও কথাবার্তা শুনে তিনি বুঝতে পারেন, তার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর প্রায় ৬ মাস পর তার ভাইয়ের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসে। কিন্তু রিপোর্ট তিনি হাতে পাননি। খুনিরা যোগসাজশ করে সেই রিপোর্ট গায়েব করে দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে তিনি বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ হয়ে পিবিআইয়ের হাতে যায় মামলার তদন্তভার। তাদের তদন্তে উঠে আসে শিমুলকে হত্যা করা হয়েছে এবং এতে জড়িত এলাকার কিছু জুয়াড়ি।

পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে নিহত শিমুল আসামি মো. ফারুক, ফারুক, সবুজ, মুক্তার ও বাবুলসহ স্থানীয়দের সঙ্গে তাস খেলত নিজের শয়নকক্ষে। ২০১৯ সালের ১৯ আগস্ট রাতে উপরোল্লিখিত জুয়াড়িরা শিমুলের ঘরে জুয়া খেলতে বসে। শিমুলের স্ত্রী সোনিয়া রাগ করে শাশুড়ির কাছে ঘুমাতে চলে যান। তাস খেলা নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে জুয়াড়িরা শিমুলকে গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করে। এরপর এ কাণ্ড ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে শিমুলের গলায় রশি পেঁচিয়ে তার বসতঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। রাত ১টার দিকে ঘুম ভেঙে গেলে শিমুলের স্ত্রী দেখেন, গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় তার স্বামীর দেহ ঝুলছে। সোনিয়া আতঙ্কে চিৎকার করে উঠলে ফারুক, সবুজ, মুক্তার, বাবলুকে দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেখেন নিহতের স্বজনরা।

 

আরও খবর: জাতীয়