সারাদেশ

খুলনার সেই তরুণীর চার দিনেও মেলেনি সন্ধান

  প্রতিনিধি ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ৯:৫৪:২০ প্রিন্ট সংস্করণ

 

খুলনা প্রতিনিধি

চার দিনেও সন্ধান মেলেনি খুলনায় উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করা সেই তরুণীর। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভুক্তভোগীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা ডুমুরিয়া থানার ওসি তদন্ত মুক্ত রায় চৌধুরীও বলছেন, কোনো অভিযোগ পাইনি। তাই বলতে পারব না সেই তরুণী কোথায় আছে। কোথাও মামলা বা অভিযোগ না পেলে ভুক্তভোগীর ডাক্তারি রিপোর্ট কাউকে দেখাবে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

তবে উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদের বিরুদ্ধে যেদিন ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়, সেদিন রাতে একটি ফোন এসেছিল অভিযোগ করা তরুণীর মামাতো ভাইয়ের কাছে। ওই ফোন কলের সূত্র ধরে আসল ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হলে এই বিষয়ে আগ্রহ নেই সংশ্লিষ্ট কোনো মহলের। ফলে ভুক্তভোগী তরুণীর সঙ্গে এখন ঠিক কি হচ্ছে তা জানা যাচ্ছে না।

 

শনিবার রাতে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ওই তরুণী। তার ঠিক কয়েক মিনিট আগেও তার তরুণীর সঙ্গে থাকা এক ব্যক্তির মোবাইল থেকে তার মামাতো ভাইকে ফোন দেওয়া হয়। এক মিনিট ছয় সেকেন্ডের ওই ফোনকলে মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন ওই তরুণীও। বর্তমানে সেই মোবাইল নম্বরটি বন্ধ রয়েছে। মোবাইলের অপর প্রান্তের ব্যক্তিকে তরুণীর মামাতো ভাই চেনেন না বলে গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন।

স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার পর মেয়েটির মা মেয়েটিকে নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকেন। ছয় মাস বয়স থেকে মেয়েটি তার মায়ের সঙ্গে নানার বাড়িতেই আছেন। মেয়েটি ছোট থাকতেই তার নানাও মারা গেছেন। মেয়েটির নানার বাড়ি ডুমুরিয়া উপজেলার ধামালিয়া ইউনিয়নের যশোরের সীমান্তবর্তী একটি গ্রামে। খুলনা শহর থেকে ওই গ্রামের দূরত্ব প্রায় ৩৮ কিলোমিটার। আর সেই গ্রাম থেকে শাহপুর বাজারের দূরত্ব প্রায় ১১ কিলোমিটার। ওই বাজারে উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদের একটি ব্যক্তিগত কার্যালয় রয়েছে। গত শনিবার সন্ধ্যায় সেই কাযালয়েই ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ওই তরুণী। এর আগে সেদিন বিকেলে উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন ওই তরুণী। যে ভ্যানে করে শাহপুর বাজারে গিয়েছিলেন সেই ভ্যানচালকের সঙ্গে কথা স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী । তিনি বলেন, তিনি শুধু ওই তরুণীকে শাহপুর বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিলেন। এরপর কী ঘটেছে তা তিনি জানেন না।

কাছে সেদিনের ফোনকলের রেকর্ডটি এসেছে। তাতে শোনা যায়, অপর প্রান্তের এক ব্যক্তি বলছেন, ‘চিনতে পারিছো?’ তখন তরুণীর মামাতো ভাই বলছেন- ‘হ্যাঁ পেরেছি’। এরপর ওপর প্রান্তের ব্যক্তি আবারও বলেন, ‘তো যাই হোক, কাগজপত্র সবকিছু পাওয়া গেছে তাই রাত্রি না যাইয়ি সকালে যাবেনে।’ পরে ওই ব্যক্তি তরুণীর মা কোথায় তা জানতে চান। তখন তরুণীর মামাতো ভাই বলেন, ‘আমি বাসায় নেই, আমি সাতগাতি আইছিলাম।’

তরুণীর মামাতো ভাইয়ের কথা শুনে অপর প্রান্তের ব্যক্তি বলেন, ‘ওহ তালি কার সাথে যোগাযোগ করি। আচ্ছা তুমি ওর সাথে কথা কও।’ এরপর ওই তরুণীর কণ্ঠ শোনা যায়। তরুণী তার মামাতো ভাইকে বলেন, ‘ভাইডি এহন তো মেলা রাইত হয়ে গেছে বুঝছিস, তালি আমি ইগ্গি ওই পুরোনো বাড়ি যেয়ে শুতি লাগতিছি; সওয়ালে (সকালে) চলি আসপানি।’

তরুণীর কথা শেষ না হতেই তার মামাতো ভাই প্রশ্ন করেন, ‘বাড়িতে কারো কইয়ে গেছিস? তোর সাথে কেউ যায়নি?’ এরপর ওই তরুণী বলেন, ‘না, তোর ফুমা বাজারে গিইলো।’ তখন তরুণীর মামাতো ভাই বলেন, ‘আমি তো সাতগাতিয়ায়, ফিরতি ফিরতি রাত ১টা বাজি যাবেনে।’ এ কথা শুনে ওই তরুণী বলেন, ‘আচ্ছা আমি বলতিছি’। এরপর ওই কলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

তরুণীর মামাতো ভাই ইজিবাইক চালান। তিনি বলেন, ‘রাত ১১টা ১ মিনিটে ওই নম্বর থেকে তার মোবাইল ফোন এসেছিল। অপর প্রান্তের ব্যক্তিকে আমি চিনি না। তবে ঘটনার বেশ কিছুদিন আগে তার বোনের সঙ্গে কথা বলতে দুবার ফোন দিয়েছিল। সেই হিসেবে নম্বরটি চিনি।’

হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কাগজপত্রে দেখা যায়, ওই তরুণীকে রাত ১১টা ১৫ মিনিটে গাইনি ওয়ার্ডের ইউনিট-২ এ ভর্তি করা হয়েছে। ওই কাগজপত্রে গোলাম রসুল নামের এক ব্যক্তিকে ভাই হিসেবে পরিচয় দিয়ে তার মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ওই মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ রয়েছে। তবে গতকাল মঙ্গলবার ডুমুরিয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে সেই গোলাম রসুলকে হাজির করা হয়। সেখানে তিনি বলেন, ‘তাকে ব্যবহার করা হয়েছে।’ এর আগে অবশ্য ওই তরুণীর মামাতো ভাই ও নানি বলেছিলেন গোলাম রসুল নামে তাদের কোনো আত্মীয় নেই।

খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান বলেন, পুলিশের কাছে এখনো কেউ ধর্ষণ বা নিখোঁজের অভিযোগ করেনি। এ কারণে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। তবে তরুণীকে খুঁজে পেতে তৎপরতা শুরু করা হয়েছে। তাকে পেলে হয়তো অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলবে।

গত শনিবার রাত সোয়া ১১টার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি হন এক তরুণী (২৮)। তিনি ও তার ভাই পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তি চিকিৎসকদের কাছে জানান, সেদিন সন্ধ্যায় ডুমুরিয়া উপজেলার শাহপুরে অবস্থিত ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ তাকে ধর্ষণ করেছেন। রোববার সকালে ওই তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষা করেন চিকিৎসকরা। পরে বিকেলের দিকে হাসপাতাল চত্বর থেকে ওই তরুণীকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করা হয়।

 

আরও খবর: সারাদেশ