জাতীয়

কেবল ৬ আসনে নৌকা-লাঙ্গলের লড়াই, জানা গেলো কাগজে-কলমে দু’দলের প্রার্থীর সংখ্যা

  প্রতিনিধি ৫ জানুয়ারি ২০২৪ , ১:০৬:১৬ প্রিন্ট সংস্করণ

নীলাকাশ টুডে

বিএনপিহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একমাত্র জাতীয় পার্টিই (জাপা) কিছুটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। তবে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে লাঙ্গলের ফলায় ধার নেই। ৭ জানুয়ারির ভোটে মাত্র ছয়টি আসনে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে লাঙ্গল। এর কয়টি জাপা জিততে পারবে, তা নিশ্চিত নয়। তৃতীয় শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় কয়েকটি আসনে লাঙ্গল দ্বিতীয় স্থানে থাকতে পারে। তবে সেখানে আদতে লড়াই নেই। সমকালের প্রতিনিধি এবং স্থানীয় সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া ২৬ আসনে নৌকার প্রার্থী না থাকলেও অন্তত ১৬টি আসনে লাঙ্গলের অবস্থা নড়বড়ে। এসব আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে। যেখানে তাও নেই, সেখানেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েছেন ১৯৯০ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভোটের অঙ্কে দিন দিন দুর্বল হওয়া জাপা প্রার্থীরা।

কুড়িগ্রাম-১ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহারের পর লাঙ্গলের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে রয়েছেন নামসর্বস্ব চারটি দলের প্রার্থী। কিন্তু আওয়ামী লীগের একাংশের সমর্থন পেয়ে জাকের পার্টির আবদুল হাই বিপদে ফেলেছেন চারবারের সাবেক এমপি লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমানকে।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে বৃহত্তর রংপুরের ২২ আসনের ১৭টি জিতেছিল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের লাঙ্গল। ১৯৯৬ সালে জয় পায় ২১ আসনে। ২০০১ সালের নির্বাচনে রংপুরের ১৩টি আসনে জয়ী হয় জাপা। এর পর থেকেই দুর্গখ্যাত রংপুরে দুর্বল হতে শুরু করে। এবার বৃহত্তর রংপুরের আটটি আসন জাপাকে ছেড়েছে আওয়ামী লীগ। তবে নীলফামারী-৩ ও ৪, গাইবান্ধা-২, রংপুর-১, কুড়িগ্রাম-২ আসনে জাপার জয় নিশ্চিত নয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কারণে। বাকি তিন আসনে জিততে পারে লাঙ্গল।

ছাড় না পাওয়া রংপুরের বাকি ১৪ আসনের মাত্র ছয়টিতে ভোটের প্রচারে রয়েছে লাঙ্গল। বাকি আসনগুলোতে পোস্টার-ব্যানার পর্যন্ত ঠিকমতো নেই। প্রচারে থাকা ছয়টি আসনের মধ্যে রংপুর-২, রংপুর-৪ ও কুড়িগ্রাম-৪ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। বাকিগুলোতে হিসাবের মধ্যেও নেই জাপা।

রংপুরের বাইরে নারায়ণগঞ্জ-৩, ঢাকা-১ ও ঢাকা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে আছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। এ তিন আসনের কোনোটি লাঙ্গল জিতবে কিনা, তা নিশ্চিত নয়। এ ছাড়া সুনামগঞ্জ-৪, সিলেট-৩, বরিশাল-৬ ও যশোর-৪ আসনে লাঙ্গলের ব্যাপক প্রচার রয়েছে। শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় এসব আসনে জাপা দ্বিতীয় স্থানে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভোটের ব্যবধান থাকতে পারে।

২৮৭ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল জাপা। বাছাই ও আপিলের পর ২৮৩ আসনে লাঙ্গলের প্রার্থী টিকে থাকে। তবে আসন ছাড় না পেয়ে জাপার ১৮ প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। এ হিসাবে লাঙ্গলের বৈধ প্রার্থী ছিল ২৬৫ আসনে; যা আওয়ামী লীগের প্রায় সমান সমান। এখন ভোটের লড়াইয়ে সমান সমান দূরে থাক, দাঁড়াতেই পারছে না জাপা। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২১টি আসনে ঘোষণা দিয়ে সরে গেছেন লাঙ্গলের প্রার্থীরা। ছাড় না পাওয়া ২৩৯ আসনের মাত্র ১০টিতে গতকাল পর্যন্ত কমবেশি লড়াইয়ে ছিলেন জাপার প্রার্থীরা। বাকি ২২৯ আসনে লাঙ্গলের প্রার্থীরা অনেকটাই ‘দুধভাত’।

জাপাকে ছেড়ে দেওয়া ২৬ আসনের চারটিতে লাঙ্গলকে জেতাতে আওয়ামী লীগের সব পক্ষের নেতারা মাঠে নেমেছেন বলে জানা গেছে। বাকি ২২ আসনে জাপার প্রার্থীরা স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোনো না কোনো অংশের বিরোধিতার সম্মুখীন হচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের ছাড় পেয়েও গত বুধবার পর্যন্ত মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন না বগুড়া-৩ আসনের লাঙ্গলের দুইবারের এমপি নুরুল ইসলাম তালুকদার। বুধবার রাতে হঠাৎ তাঁর পক্ষে মাঠে নামেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের সব নেতা। তারা জানিয়েছেন, লাঙ্গলের পক্ষে থাকতে ফোন এসেছে ওপর থেকে।

বগুড়া-২ আসনের জাপার এমপি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর পক্ষেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সব নেতা মাঠে নেমেছেন বুধবার রাত থেকে। এ দুই আসনে আগের দিন পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারে থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা গতকাল হঠাৎ লাঙ্গলের পক্ষে ভোট চাইতে শুরু করেছেন।

দেউলি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও একই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, নৌকার প্রার্থী না থাকায় স্বতন্ত্রের পক্ষে ছিলাম। এখন আর নেই। এখন ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে উদ্বুদ্ধ করছি।

সূত্র জানায়, ওপর থেকে ফোন আসায় বুধবার রাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা বুধবার রাতে বৈঠক করেন। শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা স্বীকার করেছেন, লাঙ্গলের পক্ষে কাজ করতে ফোন পেয়েছেন। কে ফোন করেছেন, তা বলতে রাজি হননি এই নেতা।

জাপার প্রার্থী শরীফুল ইসলাম জিন্নাহ বলেন, আগে যে শঙ্কা ছিল, তা অনেকটা কেটে গেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের ভূমিকার পরিবর্তন দেখে।

বগুড়া-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রাজুর ছেলে। গতকাল থেকে ছেলের প্রচারে নেই সিরাজুল ইসলাম। দুপচাঁচিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিনুল ইসলামও নেমেছেন লাঙ্গলের পক্ষে।

ফেনী-৩ আসনে জাপার এমপি লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর পক্ষে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কাজ করছে। চট্টগ্রাম-৫ আসনে জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের পক্ষেও নেমেছেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতারা।

সমঝোতার ২৬ আসনের বাইরে থাকা জাপার প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে বসে পড়ে দলকে দায়ী করছেন। তাদের ভাষ্য, দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর খোঁজ পাচ্ছেন না। দল মাঠে নামিয়ে খবর নিচ্ছে না। ভোটে অংশ নিয়ে টাকা পেলেও প্রার্থীদের নির্বাচনের খরচ, সহযোগিতা দিচ্ছে না।

জি এম কাদের গতকাল রংপুরে সাংবাদিকদের বলেন, দলের পতাকা তুলে রাখতে সব আসনে প্রার্থী দিয়েছিল জাপা। ১৯৯০ সালের পর ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতা জাপার ছিল না, এখনও নেই। তাই ৪০-৫০ জন প্রার্থীর সরে যাওয়া বড় ব্যাপার নয়।

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যুরো ও প্রতিনিধিরা]

 

আরও খবর: জাতীয়