রাজনীতি

কাল তৃণমূল পর্যায়ে মাঠে নামছে আ.লীগ-বিএনপি, টার্গেট রাজপথ, জোরালো হচ্ছে সংঘাতের আশঙ্কা

  নীলাকাশ টুডেঃ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ৬:৪৮:১১ প্রিন্ট সংস্করণ

 

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও আন্দোলনকে সামনে রেখে শুরু হয়েছে রাজপথ দখলের লড়াই। বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচির জবাবে একই দিন পালটা কর্মসূচি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।

একক ভাবে বিরোধী দলকে রাজপথে কোনো শোডাউনের সুযোগ দিতে নারাজ ক্ষমতাসীনরা। প্রধান দুদলের এমন পালটাপালটি কর্মসূচিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতি। বিশেষ করে কাল (১১ ফেব্রুয়ারি) তৃণমূল পর্যায়ে কর্মসূচি ঘিরে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

ওইদিন ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। একই দিন শান্তি সমাবেশের নামে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া সম্ভাব্য যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকেও জোরদার করা হয়েছে সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা।

যেখানে বিএনপি, সেখানে আওয়ামী লীগ-এ যেন বর্তমান রাজনীতিতে একরকম ‘স্থায়ী সংস্কৃতিতে’ পরিণত হয়েছে। বিগত কয়েক মাসের দুই দলের কর্মসূচি পর্যালোচনা করলে এমনটাই দেখা যায়। ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশের দিন থেকেই পালটা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে আওয়ামী লীগ।

২৮, ৩০ ও ৩১ জানুয়ারি এবং ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিএনপি পদযাত্রা ঘোষণা করলে ওই দিনগুলোয়ও কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ছিল আওয়ামী লীগ। ৪ ফেব্রুয়ারি বিএনপি ঢাকাসহ দেশের ১০টি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ ডাকলে আওয়ামী লীগও পালটা শান্তি সমাবেশ করে। সবশেষ বৃহস্পতিবার রাজধানীতে বিএনপির পদযাত্রার দিন শান্তিসমাবেশ ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে ব্যাপক প্রাণহানিতে সমবেদনা জানিয়ে বুধবার গভীর রাতে পদযাত্রা স্থগিত করে বিএনপি। আর সকালে একই কারণ দেখিয়ে শান্তি সমাবেশ স্থগিত করে আওয়ামী লীগ।

১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ওইদিন ইউনিয়ন পর্যায়ের পদযাত্রা কর্মসূচি সফল করতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। বিএনপির এই কর্মসূচির বিপরীতে আওয়ামী লীগ একই দিনে সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশের ডাক দিয়েছে। ওইদিন রাজধানীতেও সমাবেশ করতে পারে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।

এ লক্ষ্যে আজ শুক্রবার যৌথ সভা ডেকেছে দলটি। রোববার ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মসূচিতে ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৪০টিতে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নেতাদের নিজ জেলায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বড় দুই রাজনৈতিক দলের এই কর্মসূচি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘাত ছড়াতে পারে-এমন আশঙ্কা বিশ্লেষকদের। তাদের মতে, সরকার ও বিরোধী দল সবার উচিত সংঘাত এড়িয়ে চলা। নির্বাচনের এখনো প্রায় এক বছর বাকি। এখনই রাজপথ দখল নিয়ে সংঘাত-সহিংসতায় জড়িয়ে পড়লে তা কারও জন্য মঙ্গলজনক হবে না। প্রতিটি দলের সংবিধান অনুযায়ী সভা-সমাবেশ করার মৌলিক অধিকার রয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রাজনৈতিক সংকট তৈরি করলে সাধারণ মানুষের আরও কষ্ট বাড়বে।

এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে পালটা কর্মসূচি থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, আমাদের প্রতিটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ পালটা কর্মসূচি দিচ্ছে। আবারও তারা ইউনিয়ন পর্যায়েও পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এতে আওয়ামী লীগের যে মূল চরিত্র, সেটা উন্মোচিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ হচ্ছে সন্ত্রাসের দল। এটা বলতে দ্বিধা নেই যে তারা সন্ত্রাস-ত্রাস সৃষ্টি করা, ভয় দেখানো, আক্রমণ করা, হামলা করতে অত্যন্ত পারদর্শী।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি এক সমাবেশে বলেছেন, বিএনপি ‘ভয়ংকর’ অপশক্তি। তাদের মাঠ ছেড়ে দিলে আবার আগুন-সন্ত্রাস শুরু করবে। তারা (বিএনপি) মনে করতে পারে রাজপথের শক্তিতে আওয়ামী লীগকে ছাড়িয়ে গেছে। এজন্যই পালটা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে আছে আওয়ামী লীগ।

বুধবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির এক প্রস্তুতি সভায় আওয়ামী লীগকে হুঁশিয়ারি দিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, পাল্টা কর্মসূচির জবাব কীভাবে দিতে হয়, সেটা শিগগির দেখতে পাবেন। শান্তি মিটিংয়ের নামে অশান্তি সভা করবেন না, বিএনপি কর্মসূচি দিলে পাল্টা কর্মসূচি দেবেন না। প্রয়োজন হলে আগে কর্মসূচি দেবেন। আমরা আপনাদের দিনে কর্মসূচি দেব না।

একই দিন রাজপথে দুদলের কর্মসূচি প্রসঙ্গে সুজন সম্পাদক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. বদিউল আলম মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, সভা-সমাবেশ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংগঠন করা মানুষের মৌলিক অধিকার। এতে বাধা দেওয়া সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পালটাপালটি কর্মসূচি দিয়ে রাজপথ দখল বা শক্তি প্রদর্শনে সমস্যার সমাধান হবে না। সংকট উত্তরণের পথ বের করতে হবে। সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। নাহলে এভাবে রাজপথ দখলের প্রতিযোগিতায় একসময় ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে, যা কারোরই কাম্য নয়।

বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সংঘাত-সহিংসতাময় বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের প্রধানতম উপায় হচ্ছে একে অপরের প্রতি গণতান্ত্রিক আচার-আচরণ দেখানো এবং পরমতসহিষ্ণুতা প্রদর্শন করা। একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের প্রতিও প্রত্যেককে শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে।

আরও খবর: রাজনীতি