জাতীয়

এবার যে কয়টি আসন দাবি করছে আ.লীগের শরিকরা

  প্রতিনিধি ২৭ নভেম্বর ২০২৩ , ২:১০:৪১ প্রিন্ট সংস্করণ

নীলাকাশ টুডে

সবরকম জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৮টি আসনে দলীয় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দীর্ঘ অপেক্ষা। তবে বিগত তিনটি নির্বাচনে যেসব দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বা সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচন করেছে, তাদের বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করেনি ক্ষমতাসীনরা। বরং মাত্র দুটি আসন ফাঁকা রাখায় আগামী নির্বাচনে আদৌ আসন বণ্টন হবে কি না—শরিক ও মিত্র দলগুলো তাও নিশ্চিত হতে পারছে না। দলীয় মনোনয়ন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার জোটগত আসন নিয়ে আলোচনা শুরু করবেন বলে তাদের আশা।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনার জন্য আওয়ামী লীগের দিক থেকে ডাকের অপেক্ষায় আছেন ১৪ দলীয় জোটের নেতারা। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করেই আগের তিনটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল জাতীয় পার্টি। এবারও অপেক্ষায় আছেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে নতুন করে কিছু দলের বোঝাপড়া হয়েছে। তারাও কিছু আসনে ছাড়ের আশা করছেন। ইতোমধ্যেই এসব দল তাদের চাওয়ার তালিকা চূড়ান্ত করেছে।

এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মিত্র রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ১৮টির বেশি। কয়েক দিনের মধ্যে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি কমপক্ষে ৫০টি আসন পাওয়ার আশা করছে। এখন পর্যন্ত আসন বণ্টন নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় চিন্তিত দলটির নেতারা। দলটির শীর্ষ নেতারা আসন বণ্টনে আওয়ামী লীগের ডাকের অপেক্ষায় আছেন।

দলের দুজন কো-চেয়ারম্যান গণমাধ্যমকে বলেন, আসন সমঝোতা ছাড়া নির্বাচনে গেলে বড় রকমের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। গতবারের চেয়ে আসন কমে আসবে চার ভাগের এক ভাগে।

এদিকে জোটের নাম ১৪ দল হলেও এতে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ১২টি। এর মধ্যে আটটি দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। এসব দল সব মিলিয়ে এবার ৪৭টি আসন চাইবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি প্রাথমিক ভাবে ৩০টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। এর মধ্যে দশটি আসনে আওয়ামী লীগের কাছে ছাড় চাইবে তারা। বাকি আসনগুলোতে দলীয় প্রতীক হাতুড়ি নিয়ে আলাদা নির্বাচনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রতিটি নির্বাচনে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল থাকে। এবারের নির্বাচনে কৌশলের অংশ হিসেবে হয়তো শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টনে একটু বিলম্ব হচ্ছে। এটি এটি আদর্শিক জোট। আসন ভাগাভাগি নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।’

জাসদ (ইনু) ইতোমধ্যে ১৮১টি আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। তবে আওয়ামী লীগের কাছে তাদের দাবি থাকবে ৮টি আসন। বাকিগুলোতে দলীয় প্রতীক মশাল নিয়ে আলাদা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।

জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আসন বণ্টনের জন্য সমঝোতা বৈঠকের তারিখ এখনো জানানো হয়নি।’

১৪ দলের শরিক সাম্যবাদী দল একটি আসন চাইবে। এর বাইরে আরও ১০টি আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। দলটির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া গণমাধ্যম কে বলেন, ‘এখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে কোনো বৈঠক হয়নি। আমরা অপেক্ষায় আছি, দ্রুত বৈঠকের মধ্য দিয়ে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।’

গণতন্ত্রী পার্টি ২৯ আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে। দলটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার গতকাল রোববার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জোটগতভাবে আমরা ১০টি আসন চাইব। আসন ভাগাভাগি নিয়ে আমরা আওয়ামী লীগের ডাকের অপেক্ষায় আছি। আশা করি, ১৪ দলের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুতই আমাদের নিয়ে বসে আসন বণ্টন করবেন।’

এর আগে কোনো আসন না পেলেও এবার চাইছে কমিউনিস্ট কেন্দ্র, ন্যাপ, গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি এবং বাসদ (রেজাউর)। জোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের কাছে ‘যথাযথ মূল্যায়ন’ আশা করছেন দলগুলোর নেতারা।

এদিকে জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পিরোজপুর-২ এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলামের জন্য একটি আসনে জোটের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে চাইছে। তরীকত ফেডারেশন ২০০ আসনে একক ভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করলেও আওয়ামী লীগের কাছে ১৫টি আসন চাইবে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার আসনে এবারও নৌকায় ভোট করবেন বলে জানিয়েছেন তরীকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী।

এর বাইরে বিকল্পধারা, তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, কল্যাণ পার্টিসহ তিন দলের সমন্বয়ে গঠিত যুক্তফ্রন্ট এবং কয়েকটি ইসলামী দলও কমবেশি আসন পাওয়ার প্রত্যাশা করছে। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগের শরিক ও মিত্ররা এবার কমপক্ষে ১৩০টি আসন চাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে।

একাধিক সূত্র বলছে, শরিক ও সমমনাদের জন্য এখন পর্যন্ত ৭০টি আসনে ছাড় দেওয়ার বিষয়ে বিবেচনা করছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে জাতীয় পার্টিকে সবচেয়ে বেশি আসন ছাড়া হতে পারে। এ ছাড়া শমসের মবিন চৌধুরী, তৈমূর আলম খন্দকার, চৌধুরী ইরাদ আহমেদ সিদ্দিকী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আলোচিত সংসদ সদস্য প্রয়াত উকিল আবদুস সাত্তারের ছেলে মাইনুল হাসানসহ আরও কয়েকজনের ক্ষেত্রে ছাড় দিতে পারে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া বিএনপি থেকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো নেতা বেরিয়ে এসে নির্বাচন করলে ছাড় দেওয়া আসনের সংখ্যা বাড়তে পারে।

জানা গেছে, আগামী ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমার নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগেই আসন বণ্টনের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে পারে আওয়ামী লীগ। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মনোনয়ন ফরম প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত চলতে পারে আলোচনা। যেসব আসনে শরিকদের ছাড় দেওয়া হবে, সেসব জায়গায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা মনোনয়ন ফরম প্রত্যাহার করবেন। আবার কোথাও কোথাও প্রার্থিতা বহাল রেখেই কৌশলগত ভাবে ছাড় দেওয়া হতে পারে।

২০০৮ সালের নির্বাচন থেকেই ধারাবাহিক জোটবদ্ধ নির্বাচন করছে আওয়ামী লীগ। তারও অনেক আগেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আদর্শিক জোট ১৪ দল গঠিত হয়। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকেই জাতীয় পার্টিসহ বেশ কয়েকটি দল নিয়ে মহাজোটের আওতায় আসন ভাগাভাগি করেছে আওয়ামী লীগ। কৌশল আলাদা হলেও বিগত তিনটি নির্বাচনেই মহাজোটের শরিকদের ছাড় দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। বর্তমানে আনুষ্ঠানিক ভাবে মহাজোট না থাকলেও নির্বাচনী সমঝোতার প্রক্রিয়া থেমে নেই।

এবারও ১৪ দলের শরিকরা জোটগতভাবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার জন্য ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে। শরিক নেতারা বলছেন, সমঝোতার আসনগুলোতে তারা জোটের সবচেয়ে বড় দল আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীকেই নির্বাচন করতে চান। এর বাইরে বাকি আসনগুলোতে যার যার দলীয় প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।

অন্যদিকে, জাতীয় পার্টি এবার ৩০০ আসনে আলাদা ভাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে। তা সত্ত্বেও আলোচনা আছে, নিজেদের মূল আসনগুলোতে তারা আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ছাড় আশা করবে। বাকি সব আসনে দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জাপার প্রার্থীরা। বর্তমানে সংসদে জাপার সদস্য ২৩ জন।

২০১৮ সালের নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদের ১৩টি আসনে ছাড় দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে শরীফ নূরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাসদ দুটি আসন পেয়েছিল। বর্তমানে তারা ১৪ দলীয় জোটে নেই।

গত নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টি পাঁচটি আসনে নৌকা পেয়েছিল। এর মধ্যে দুটি আসনে তারা হেরে যায়। হাসানুল হক ইনুর জাসদ তিনটি আসন পেয়ে দুটিতে জয়ী হয়। তরীকত ফেডারেশন ও জেপি একটি করে আসন পেয়ে জয়ী হয়।

জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম গণমাধ্যম কে জানান, তারা এবার নৌকা ও বাইসাইকেল দুই প্রতীকেই ভোট করার পরিকল্পনা নিয়েছেন।

আরও খবর: জাতীয়