জাতীয়

আ.লীগের মুখোমুখি আ.লীগ, বাড়ছে সংঘাত, হচ্ছে খুন

  প্রতিনিধি ২৮ অক্টোবর ২০২২ , ৫:৩১:২০ প্রিন্ট সংস্করণ

 

নীলাকাশ টুডেঃ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি যখন সংগঠিত হয়ে মিছিল-সমাবেশের মাধ্যমে সারা দেশে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করছে, তখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দ্বদ্ব-সংঘাতে লিপ্ত।

এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, তৃণমূলের সম্মেলন ও কমিটি গঠন এবং সরকারি কাজের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে তারা। এতে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছেই। নিজেদের দলাদলির প্রভাবে প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও রক্ত ঝরছে, ঘটছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রাণহানির ঘটনা।

আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতারা বলছেন, বিএনপির চলমান আন্দোলন তারা রাজপথে মোকাবিলা করবেন। ১০ ডিসেম্বর বিরোধী রাজনৈতিক দলটির পক্ষ থেকে ঢাকায় যে মহাসমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে, তাও ঠেকিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন তারা।

কিন্তু ক্ষমতাসীন এই আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আশঙ্কা, দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে সারা দেশে সংঘাত-সংঘর্ষ ও রক্তপাত অব্যাহত থাকলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিকে রাজপথে মোকাবিলা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী এ বছর জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘর্ষে ৮ জন মারা গেছে। আহত হয়েছে ৮৯৫ জন। এ সময় তারা ৭৩টি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। চলতি অক্টোবর মাসেও প্রাণহানির ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে অব্যাহত রয়েছে। সে হিসাবে প্রাণহানির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কমপক্ষে ১৫ জন। আর আহতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে জানা গেছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ৬১, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ ১, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ ১, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ৩, যুবলীগের সঙ্গে যুবলীগ ১ এবং ছাত্রলীগ নিজেরা ৬টি ঘটনায় মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়েছে। যুগান্তরের একাধিক সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, চলতি বছরে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে অন্তত ৮৪ বার।

আসকের একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, গত ৯ মাসে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ৪৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। সারা দেশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত এসব সংঘর্ষের নেপথ্যে কাজ করছে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব।

২০২৩ সালের ডিসেম্বর অথবা পরের বছর জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে মরিয়া নির্বাচনি এলাকাগুলোর একাধিক নেতাকর্মী। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নির্বাচনের আগেই তৃণমূল আওয়ামী লীগের কমিটিগুলো নিজেদের কব্জায় নিতে চাচ্ছেন। দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি হচ্ছে মূলত এ নিয়েই।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, একটি বড় দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতার বিরোধ তৈরি হতেই পারে। সে বিরোধ নিরসনে সব সময় স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। ফলে দ্ব›দ্ব-সংঘাত মিটমাটও হয়। আওয়ামী লীগে কোথাও দ্বন্দ্ব জিইয়ে রাখার সুযোগ নেই। তারপরও কোনো দ্ব›দ্ব বা বিরোধের জেরে যদি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে তার জন্য দায়ীরা শাস্তি এড়াতে পারে না। সংঘাতের বিষয়ে কাউকেই প্রশ্রয় দেওয়া হয় না।

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে একটি সুসংগঠিত, দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও বড় রাজনৈতিক দল। গত ১৪ বছর এই দলটি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রয়েছে। এ সময়ে বিভিন্ন দল থেকে অনেকেই আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে। এই অনুপ্রবেশের কারণে বিচ্ছিন্ন কিছু সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এসব নিয়ে উদ্বিগ্ন বা বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। সুত্র যুগান্তর

আরও খবর: জাতীয়