জাতীয়

আচরণবিধি নিয়ে ইসির এ কেমন ‘আচরণ’

  প্রতিনিধি ৩ ডিসেম্বর ২০২৩ , ১:২৪:৩৮ প্রিন্ট সংস্করণ

নীলাকাশ টুডে

 

অবস্থানে স্থির থাকতে পারছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনী আচরণবিধি নিয়ে একেক সময় একেক বার্তা দিয়ে তালগোল পাকিয়ে নানা আলোচনার জন্ম দিচ্ছে সাংবিধানিক এ সংস্থাটি। ইসি একবার বলছে, প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো প্রার্থী আইন ও আচরণবিধির অর্থে প্রার্থী নন। ১৮ ডিসেম্বরের পর তাদের ক্ষেত্রে আচরণবিধি প্রযোজ্য হবে। বিপরীতে শোডাউন ঘিরে অনেক প্রার্থীকেই এরই মধ্যে তলব করা হয়েছে ইসিতে, পাঠানো হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিশ (শোকজ)। গেল তিন দিনে এ সংখ্যা অন্তত ৩০। ইসির এমন স্ববিরোধী আচরণে বিশিষ্টজন সমালোচনামুখর হলে নির্বাচন কমিশন উল্টো তাদের ওপরই নাখোশ। রীতিমতো লিখিত বিবৃতি দিয়ে ইসি বলছে, বিশিষ্টজন মনগড়া বক্তব্য দিচ্ছেন।

এর আগে এমপিদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পদত্যাগ করতে হবে– কমিশনের একজন সদস্যের এমন বক্তব্যের পরদিন ইসির তরফ থেকে বলা হয়েছে, পদত্যাগের প্রয়োজন হবে না। এ ছাড়া প্রশাসনের রদবদল এবং আচরণবিধি নিয়ে ইসির শীর্ষ কর্তাদের এক ধরনের মন্তব্যের বিপরীতে সিদ্ধান্ত হয়েছে অন্যরকম। ফলে জনমনে দেখা দিয়েছে ধোঁয়াশা, বিভ্রান্তি।

ইসির এসব ব্যাখ্যায় চরম হতাশা ও ক্ষুব্ধ বিশিষ্টজন। তারা বলছেন, ইসির ব্যাখ্যা আইন এবং নিজেদের কাজের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। একদিকে তারা বলছেন, প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার আগে প্রযোজ্য হবে না, অন্যদিকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে তারা প্রার্থীদের একের পর এক শোকজ করছে। ইসির এমন অবস্থানকে স্ববিরোধী আখ্যায়িত করে বিশিষ্টজন বলছেন, তাদের এমন আচরণের কারণ বোধগম্য নয়।

এদিকে গতকাল শনিবার ইসির জনসংযোগ শাখা থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নির্বাচনী আচরণবিধি নিয়ে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের টকশো এবং পত্রপত্রিকায় কতিপয় বিশিষ্টজন মনগড়া বক্তব্য দিচ্ছেন। গণমাধ্যমে প্রচারিত বিশিষ্টজনের এমন মনগড়া বক্তব্য জনগণকে বিভ্রান্ত করতে পারে। এতে ইসির ওপর জনগণের আস্থা বিনষ্টের মাধ্যমে নির্বাচনকে নেতিবাচক ভাবে প্রভাবিত করতে পারে। বিষয়টি মোটেও কাম্য নয়।’

ইসি ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন। ওই দিন সারাদেশে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় অনেক প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। বিধিতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় মিছিল বা শোডাউন নিষেধ রয়েছে। এমনকি প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো ধরনের মিছিল-সমাবেশের বিষয়েও নিষেধ করা আছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এই আচরণবিধি প্রণয়নের সময় তিনি কমিশনার ছিলেন। এর পর দুটি কমিশন এই আচরণবিধিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছে। এখন বর্তমান কমিশন কী উদ্দেশ্যে, কী ব্যাখ্যা দিচ্ছে, তা বোধগম্য নয়।

তিনি বলেন, এই বিধিমালায় কোনো ফাঁকফোকড় নেই। তপশিল ঘোষণার পরদিন থেকেই এটা প্রযোজ্য হবে। কারণ, ‘নির্বাচন-পূর্ব সময়’ এই বিধিমালায় সংজ্ঞায়িত করা আছে। তপশিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের ফল গেজেট আকারে প্রকাশ পর্যন্ত সময়কে নির্বাচন-পূর্ব সময় বোঝাবে।
সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতেও তপশিল ঘোষণার পর থেকে সবকিছুর নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ইসির হাতে চলে আসে। বর্তমান কমিশনের এই ব্যাখ্যার উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

 

আরও খবর: জাতীয়