জাতীয়

অবশেষে জয় হলো চাঞ্চল্যকর প্রেমের সেই মামলা

  ঢাকা অফিসঃ ২৩ জুন ২০২৩ , ১১:০৬:০৭ প্রিন্ট সংস্করণ

প্রতীকী ছবি

 

রাজধানী ঢাকার আদালতে প্রেমের ঘটনাপ্রবাহে দায়ের হওয়া একটি মামলা সিনেমার গল্পকেও হার মানায় বলে মন্তব্য করেছেন ব্যারিস্টার আশরাফ রহমান নামে হাইকোর্টের এক আইনজীবী। তিনি ওই মামলাটির বিবাদী পক্ষের উকিল।

বুধবার (২২ জুন) রাত ৮টা ৪২ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে আশরাফ রহমান এ মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি মামলাটির একটি সারসংক্ষেপও তুলে ধরেন।

স্ট্যাটাসে আশরাফ রহমান লিখেছেন, ‘বিত্তশালী পরিবারের একমাত্র মেয়ে যার বাবার ঢাকায় কমপক্ষে ৭টি বাড়ি আছে। এই মেয়ে প্রতিবেশী এক ছেলে যে ইন্টারনেটের লাইনের কাজ করে তার সাথে প্রেম হয়। পরবর্তীতে মেয়ে স্কুল থেকে ছেলের সাথে পালিয়ে যায় এবং প্রেমের পরিণয় বিয়ে। যেহেতু ১৩ বছরের মেয়ে তাই কোর্ট ম্যারেজ করে, যা বৈধ নয়।’

তিনি বলেন, ‘মেয়ের বাবা থানায় অপহরণের মামলা করে ছেলে, ছেলের বাবা, বোন ও বোন জামাইয়ের নামে এবং পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। পুলিশের সহযোগিতায় মেয়েকে চাঁদপুর থেকে ধরে আনে এবং ছেলে পালিয়ে যায়। শুরু হয় মামলায় সাক্ষী-প্রমাণ। মামলায় সাক্ষী-প্রমাণ শেষে বাবা-বোন এবং বোন জামাইকে আদালত খালাস দেয় কিন্তু ছেলে যেহেতু পলাতক ছিল, তাই ছেলেকে যাবজ্জীবন সাজা ও ২ লক্ষ টাকা জরিমানা করে আদালত।’

তবে দীর্ঘদিন পর আবারও উভয়ে একত্রিত হন জানিয়ে আশরাফ রহমান জানান, ‘এতদিনে ১৩ বছরের মেয়েটি প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যায় এবং ২০২৩ সালে এসে মেয়েটি কলেজ ফাঁকি দিয়ে সাজাপ্রাপ্ত ছেলের সাথেই আবার পালিয়ে বাবার ভয়ে কক্সবাজার চলে যায় এবং সেখানে কাবিন-মূলে বৈধ বিয়ে সম্পন্ন করে। ছেলে-মেয়ে পালানোর খবরে ছেলের বাবা, মেয়ের বাবার ভয়ে এলাকা ছাড়া কারণ আগেও যখন প্রথমবার মেয়ে তার ছেলের সাথে পালিয়েছিল তখন মেয়ের বাবা ছেলের বাবাকে পিটিয়ে এলাকা ছাড়া করেছিল।’

‘অবশেষে, শত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে কক্সবাজার গিয়ে তাদের চার মাসের সংসার, এরই মধ্যে মেয়ে প্রেগনেন্ট হয়ে যায়। অতঃপর পুলিশ যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত স্বামীকে কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার করে জেলে প্রেরণ করে।’

এই ঘটনার পর মামলাটি তার কাছে আসে জানিয়ে স্ট্যটাসে বলা হয়, ‘মেয়ে ও শশুর (ছেলের বাবা) আসে আমার চেম্বারে ছেলেকে জামিন করানোর জন্য। আপিলের সময় শেষ। আমিই নিজেই মামলা রেডি করলাম। অবশেষ বিগত মঙ্গলবার (২০ জুন) মামলাটি হাইকোর্টে শুনানির জন্য ছিল। মেয়ে নিজেই হাইকোর্টে এসে আদালতে উপস্থিত হয়ে তার বক্তব্য প্রদান করে, রাষ্ট্রপক্ষ তীব্র বিরোধিতা করলে ও বয়স নিয়ে সন্দেহ তুললে, আদালত পরের দিন আদেশের জন্য রাখে। আদেশের দিন, মেয়ে হাইকোর্টে এসে বাবা-মাকে দেখে, আবারও জোরপূর্বক বাড়ি নিয়ে যাবে এই ভয়ে কোর্টে প্রবেশ না করেই (মেয়েটি) পালিয়ে যায়।’

পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে এই আইনজীবী বলেন, ‘শুনানি শুরু হলে রাষ্ট্রপক্ষ তীব্র বিরোধিতা করে, তাদের বক্তব্য আসামি দীর্ঘদিন পলাতক ছিল, সে সারেন্ডার (আত্মসমর্পণ) করেনি, নিয়মিত আপিল করেনি এবং ১৩ বছরের মেয়ে নিজের ভালমন্দ বোঝে না। অন্যদিকে, আমাদের বক্তব্য সুস্পষ্ট, যেহেতু মেয়ে প্রেমের সম্পর্কের কারণে নিজে স্বেচ্ছায় গিয়েছে এবং তা সে তার জবানবন্দিতে একই কথা বলছে, সুতরাং কোনো অপহরণ সংঘটিত হয়নি। হাইকোর্ট মেয়ের বক্তব্য শোনে এবং আমাদের বক্তব্য ও আইনি বিশ্লেষণে সন্তুষ্ট হয়ে আদালত আসামিকে মাত্র ১৫ দিনের মাথায় ছেলের জামিন মঞ্জুর করে।’

সবশেষে ব্যারিস্টার আশরাফ বলেন, ‘প্রেম-ভালবাসা ধনী-গরীব চেনে না। অবশেষে, পরাজিত হলো পেশীশক্তি, ক্ষমতা ও অর্থের; এবং জয় হল অসম প্রেমের।

আরও খবর: জাতীয়