সারাদেশ

অক্টোবরেই রাজপথের নিয়ন্ত্রণ চায় বিএনপি

  নীলাকাশ টুডে ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৭:০২:৩১ প্রিন্ট সংস্করণ

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে গত ১২ জুলাই থেকে যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছে বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোটগুলো। চূড়ান্তভাবে দাবি আদায়ে অক্টোবর মাসকে টার্গেট করছে দলটি। ওই মাসে রাজপথের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আন্দোলনেই দাবি আদায় করতে চায় তারা। এ লক্ষ্যে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। নভেম্বরে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিলের আগেই চলমান আন্দোলনকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায় বিএনপি। দলটির অনেকে মনে করেন, তপশিল ঘোষণা হয়ে গেলে নির্বাচন ঠেকানো কঠিন হয়ে যাবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, একদফা দাবি আদায়ে অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই লাগাতার অলআউট আন্দোলনে নামতে চান বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। তখন সব কর্মসূচি হবে ঢাকাকেন্দ্রিক এবং তা যুগপৎভাবে পালিত হবে। আর সে সময় কর্মসূচি শুধু শুক্র-শনিবারে সীমাবদ্ধ নাও থাকতে পারে। সভা-সমাবেশের মধ্য দিয়ে এই চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনের সূচনা হতে পারে। আর মধ্য অক্টোবর থেকে ঘেরাওয়ের কর্মসূচিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে দলটি। নির্বাচন কমিশন, সচিবালয়, গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘেরাওয়ের সঙ্গে তখন টানা অবস্থান কর্মসূচিতে যেতে পারে বিএনপি। এর মধ্য দিয়ে দ্রুততম সময়ে লক্ষ্যে পৌঁছতে চান নীতিনির্ধারকরা।

এর আগে সেপ্টেম্বরজুড়ে দেশব্যাপী তারুণ্যের রোডমার্চের সঙ্গে একদফার কর্মসূচিও চলবে। প্রতি শুক্র ও শনিবার পদযাত্রা, গণমিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি চলতে থাকবে। এ ছাড়া আগামী শুক্রবার বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়ার প্রতিবাদে ঢাকায় সমাবেশ করবে দলটি। ওইদিন বিকেল ৩টায় নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির যৌথ উদ্যোগে এই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া চলতি মাসের মধ্যে বিচারালয়ের সামনে আইনজীবীদের অবস্থান কর্মসূচিও হতে পারে। সরকার যে এখন বিরোধী দল দমনে আদালতকেও ব্যবহার করছে—দলের এই বক্তব্য সব মহলের কাছে পৌঁছাতে চান তারা। দেশব্যাপী তারুণ্যের সমাবেশের পর মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে আবার মাঠে নামছে বিএনপির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে এবার ঢাকার বাইরে পাঁচ বিভাগে যৌথভাবে ‘তারুণ্যের রোডমার্চ’ করবে সংগঠন তিনটি। সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে চলমান আন্দোলনে তরুণদের ব্যাপক হারে সম্পৃক্ত করতে এই উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। এই রোডমার্চের একটি শিডিউল ইতোমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে।

শিডিউল অনুযায়ী, ১৬ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তারুণ্যের রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ১৬ সেপ্টেম্বর রংপুর থেকে সৈয়দপুর-দশমাইল হয়ে দিনাজপুর, ১৭ সেপ্টেম্বর বগুড়া থেকে সান্তাহার-নওগাঁ হয়ে রাজশাহী, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার হয়ে সিলেট, ২৬ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহ থেকে যশোর-নোয়াপাড়া হয়ে খুলনা এবং ৩০ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা থেকে ফেনি-মিরসরাই হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এই রোডমার্চ হবে।

এর আগে দেশের ৬ বিভাগে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে ‘দেশ বাঁচাতে তারুণ্যের সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হয়। গত ১৪ জুন চট্টগ্রামে সমাবেশের মধ্য দিয়ে ওই কর্মসূচি শুরু হয়। ২২ জুলাই ঢাকায় শেষ হয়। ওই সমাবেশ থেকে একদফা দাবি আদায়ে ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি।

একদফার আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, বিএনপি সব দেশপ্রেমিক-গণতন্ত্রকামী বিরোধী দলকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবি আদায়ে রাজপথে রয়েছে। এই দাবি এদেশের জনগণের। এই জনদাবি আদায় না করে বিএনপি ঘরে ফিরে যাবে না।

এদিকে একদফার অলআউট আন্দোলনের কর্মপরিকল্পনার মধ্যেই গতকাল মঙ্গলবার দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শামা ওবায়েদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে একদফার অলআউট আন্দোলনকে সামনে রেখে সারা দেশে দলের সাংগঠনিক অবস্থা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করা হয়। সাংগঠনিক সম্পাদকরা আন্দোলনের এই পর্যায়ে এসে ‘রেডি কমিটি ছাড়া’ দেশের কোথাও নতুন করে দল ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কোনো কমিটি না দেওয়ার পরামর্শ দেন। তাদের দাবি, নতুন করে এখন আংশিক কমিটি দেওয়া হলে সংগঠনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হতে পারে। যোগ্য সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে আংশিক কমিটি দেওয়া সম্ভব হয় না। যার নেতিবাচক প্রভাব আন্দোলনে পড়তে পারে। এ ছাড়া গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচির ‘ব্যর্থতায়’ একদফা আন্দোলনের আগামীর কর্মসূচিতে সমন্বয়হীনতা দূরীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন সাংগঠনিক সম্পাদকরা। কর্মসূচি সফলে যে কোনো ধরনের সমন্বয়হীনতা নিরসনে মির্জা ফখরুল সব স্তরের নেতাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন, যাতে করে কর্মসূচি সম্পর্কে অবগত নয়—এমন অভিযোগ কেউ করতে না পারে। ২৯ জুলাইয়ের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করার পেছনে তখন অনেকে এমন অভিযোগ করেছিলেন। এর আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর হাইকমান্ডের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও যুগ্ম মহাসচিবরাও আগামীর কর্মসূচি সফলে যে কোনো মূল্যে সমন্বয়হীনতা নিরসনের ওপর জোর দেন। গত ৩০ ডিসেম্বর ১০ দফার ভিত্তিতে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন শুরুর পর ১২ জুলাই থেকে একদফার আন্দোলন শুরু করে বিএনপি।

আরও খবর: সারাদেশ