সারাদেশ

হাইকোর্টের নির্দেশনার পরও বন্ধ হয়নি ইটভাটা!

  প্রতিনিধি ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ , ৩:০৭:০৭ প্রিন্ট সংস্করণ

 

নীলাকাশ টুডেঃ পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত কয়েক বছরে গড়ে উঠেছে শতাধিক ইটভাটা। অবৈধ এসব ইটভাটা বন্ধে হাইকোর্ট নির্দেশ দিলেও তা মানা হচ্ছে না। বরং ইটের মৌসুম আসাতে ভাটাগুলোতে কাজ চলছে জোরেশোরে। আর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও দেখা যাচ্ছে না প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে।

জানা গেছে, হাইকোর্ট গত ১৩ নভেম্বর অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছেন। আদালতের আদেশে বলা হয়, ৭ দিনের মধ্যে স্ব স্ব এলাকায় অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম ও জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। কিন্তু এক মাসেও আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো অভিযানের খবর পাওয়া যায়নি। তবে গত রোববার (১১ ডিসেম্বর) জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় ইটভাটা বন্ধ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

 

অভিযোগ রয়েছে, ইটভাটার চিমনি দিয়ে বের হওয়া কালো ধোঁয়ার কারণে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মানুষের জীবনে নেমে এসেছে নানা সংকট। কালো ধোঁয়ার প্রভাব পড়ছে জনজীবনসহ গাছ ও কৃষিতে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১১২টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৬০, শিবগঞ্জে ২১, গোমস্তাপুরে ১২, ভোলাহাটে ১১ ও নাচোলে ৮টি ইটাভাটায় ইট তৈরির কার্যক্রম চলছে। এসব ইটভাটার একটিরও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। সবগুলো ইটভাটা অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তবে মাত্র দুটি ইটভাটা মালিক ছাড়পত্র নবায়নের জন্য আবেদন করেছেন।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনে লাইসেন্স ব্যতীত কোনো ইটভাটা স্থাপন ও পরিচালনা করা যায় না এবং জ্বালানি হিসেবে ইটভাটায় কাঠের ব্যবহার নিষিদ্ধেরও বিধান রয়েছে। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় শীত মৌসুমকে সামনে রেখে অবৈধ ইটভাটাগুলো কার্যক্রম শুরু করেছে। এমনকি ইটভাটাগুলো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে আমসহ বিভিন্ন গাছের কাঠ।

সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের আমচাষি মোজাম্মেল হক গণমাধ্যমকে বলেন, একটি ইটভাটার পাশে আমার ১১ বিঘা মাঝারি সাইজের আমবাগান রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে আমগাছগুলোতে আম আসছে না। ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে যে সামান্য পরিমাণে আম আসে, সেগুলোও সাইজে ছোট ও তেঁতো হয়ে যায়। ফলে ক্রেতারা বাগান বা আম কিনতে চাই না। কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে লোকসানের মধ্যে পড়তে হচ্ছে।

কৃষক সুমন আলী বলেন, ইটভাটার কারণে ফসল নষ্ট ও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। ইটভাটার আশপাশের কয়েক কিলোমিটার জুড়ে এই ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে। ভালো ফলন না পেয়ে বাধ্য হয়ে ইটভাটার আশপাশের আমবাগানগুলো কেটে ফেলছে বাগান মালিকরা। অথচ এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে প্রশাসনের কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজ প্রকৃতি ছাপিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে যাচ্ছে ইটভাটার চিমনি। আমবাগানের মধ্যেই গড়ে উঠেছে পরিবেশ বিধ্বংসী ইটভাটা। একটা ইটভাটা পেরুলেই চোখে পড়বে আরেকটি ইটভাটা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫ উপজেলাতেই একই কায়দায় আমবাগানের পাশে ফসলি জমিতেই গড়ে উঠেছে অবৈধ ইটভাটা। আমবাগান কেটে বেশ কয়েকটি ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, জেলায় ১১২টি ইটভাটা রয়েছে। যার একটিরও পরিবেশ অধিদপ্তরের হালনাগাদ ছাড়পত্র নেই। এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া অবৈধ ইটভাটা বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার বিষয়টি অবগত স্থানীয় প্রশাসন। আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাতেও অবৈধ ইটভাটা বন্ধের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আশা করছি আগামী সপ্তাহ থেকেই অভিযান শুরু হবে। তবে একসঙ্গে এতগুলো ইটভাটা বন্ধ করা সম্ভব নয়। তাই পর্যায়ক্রমে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা হবে।

জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন বলেন, অবৈধ ইটভাটা বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে। আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।

আরও খবর: সারাদেশ