সারাদেশ

সাড়া ফেলেছে রাসেলের স্বপ্নের ‘পরিবেশ ও জলবায়ু জাদুঘর

  প্রতিনিধি ১৫ জুলাই ২০২২ , ২:২৩:০০ প্রিন্ট সংস্করণ

 

নীলাকাশ টুডেঃ
নিজের জীবন প্রদীপ নিভু নিভু। হাতে সময় বেশি না থাকলেও তার স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়া। তাইতো জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে ছাপিয়ে সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন পরিবেশ ও জলবায়ু জাদুঘর।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং জলবায়ু সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে ধারণা দিতে এই মহতি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন মাগুরার শাহিন রেজা রাসেল। বাড়ি জেলার শ্রীপুর উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে। নিজ এলাকার পাশে মদনপুর নামক গ্রামে গড়ে তুলেছেন এই জাদুঘরটি। এই জাদুঘরের উদ্যোক্তা রাসেল দুরারোগ্য (মাসকুলার ডিস্ট্রফি) রোগে আক্রান্ত। পরিবেশ সুরক্ষায় তার এই উদ্যোগটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। প্রতিনিয়ত মানুষ আসছে তার জাদুঘরটি দেখতে।

 

আগামী ১৬ জুলাই বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার অনুষ্ঠানিকভাবে এই জাদুঘরটি উদ্বোধন করবেন বলে শাহীন রেজা রাসেল ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন।

জানা গেছে, বাংলাদেশে এটিই প্রথম পরিবেশ ও জলবায়ু জাদুঘর। ইতোমধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে জাদুঘরটি। প্রায় প্রতিদিনই দূর-দূরান্তের মানুষরা আসেন এই জাদুঘরটি দেখতে। স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা আগ্রহ নিয়ে পরিদর্শনে আসছেন রাসেলের পরিবেশ ও জলবায়ু জাদুঘরে।

 

জাদুঘরের উদ্যোক্তা শাহিন রেজা রাসেল বলেন, প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর ছোটবেলা থেকেই ভালোলাগা বা ভালোবাসা ছিল। যখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো পরিবেশ সংগঠন ছিল না। ২০০৫ সালে আমি ভর্তি হবার পরই আমার নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম পরিবেশ সংসদ গঠিত হয়।

এরপর ২০০৮ সালে প্রথম মাথায় আসে একটি পরিবেশ জাদুঘর করার। আর করোনার মধ্যে আমি আমার নিজ বাড়িতেই ছিলাম। তখন আমার এই ভাবনাটি বাস্তবে রূপদান করা সম্ভব হই। অবশেষে আমি আমার পরিকল্পনাটি এখানে ইমপ্লিমেন্ট করেছি।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তাই এর ক্ষতিকর দিকগুলি সম্পর্কে মানুষকে ভালোভাবে জানানোর জন্যই আমি এই জাদুঘরটি স্থাপন করেছি।

এই পরিবেশ ও জলবায়ু জাদুঘর পরিদর্শনে এসে নতুন প্রজন্ম কী জানতে পারবে? এমন প্রশ্নের জবাবে শাহিন রেজা রাসেল বলেন, নতুন প্রজন্ম এই জাদুঘরে আসলে পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ে তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। তারা বুঝতে পারবে কেন পরিবেশ দূষণ করতে হয় না, দূষণ করলে এর ক্ষতিকর দিকগুলো কী কী, প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর এর কী কী ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে, এসব বিষয়ে তারা সম্মুখ ধারণা পাবে।

 

রাসেল আরও বলেন, বর্তমানে আকাশের দিকে তাকালে বর্ষার মেঘের পরিবর্তে শরতের মেঘের দেখা মেলে। যে ফুল, যে সময় ফোটার কথা তা না ফুটে অন্য ঋতুতে ফোটে। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে আইলা, সিডর আম্পানসহ বিভিন্ন ধরনের ঘূর্ণিঝড় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। আজকের যুবসমাজ যদি এই পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হয়, তাহলে একদিন হয়তো পরিবেশ এবং জলবায়ু রক্ষার মধ্য দিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে।

জানতে চাইলে শাহিন রেজা রাসেল বলেন, আমি সবেমাত্র কাজটি শুরু করেছি। ছোট্ট একটি ঘর হলেও, তাতে তথ্যের ভান্ডার একেবারে অল্প নয়। ইতোমধ্যে আমি এখানে বিভিন্ন সাগর এবং নদ-নদীর পানি সংগ্রহ করেছি। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গাছের পাতা, বিভিন্ন ধরনের বীজ, কাঠের স্যাম্পল, বিলুপ্তপ্রায় বাবুই পাখির বাসা এবং আলোকচিত্র বা বিলবোর্ড।

 

যে বিলবোর্ডে রয়েছে পরিবেশ এবং জলবায়ু সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের তথ্য। আমার আশা ভবিষ্যতে দেশের যত প্রাণী আছে তার স্যাম্পল, যত নদ-নদী আছে সেই নদ-নদীর পানি, দেশের প্রত্যেকটি জেলার মাটি এখানে সংগ্রহ করব।

সব প্রজাতির গাছের স্যাম্পল, বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ, সব ধরনের প্রাণীর মমি বা স্টাফ এখানে সংগ্রহে রাখব। মূলত পরিবেশের সব উপাদান এখানে থাকবে। আসলে এক এক নদীর পানি এক এক রকম, এক এক জেলার মাটি এক এক রকম। এখানে থাকবে বিভিন্ন ধরনের জার্নাল। যা থেকে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের তথ্য পাবে। মূলত, এই সবকিছু নিয়ে এখানে ভবিষ্যতে গবেষণা হবে।

এই পরিবেশ ও জলবায়ু জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা শাহীন রেজা ২০০৪-২০০৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হন। এরপর সেখানে তিনি প্রথম পরিবেশ সংসদ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বর্তমানে এই পরিবেশ সংসদের উপদেষ্টা। রাসেল ২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর ২০১৩ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে চাকরি জীবন শুরু করেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তিনি বর্তমানে এই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে শাহিন রেজা রাসেল বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তিনি এই জাদুঘরটিকে এক দিন বিশ্বের বুকে পরিচয় করাতে পারবেন বলে আশা করেন।

আরও খবর: সারাদেশ