সারাদেশ

সাতক্ষীরায় ১৮ দিন বয়সে অ্যাসিডদগ্ধ সোনালীর স্বপ্ন শুরু

  প্রতিনিধি ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ১২:৩৩:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ

 

নীলাকাশ টুডেঃ অ্যাসিডদগ্ধ শিক্ষার্থী সোনালী এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। সাতক্ষীরার তালা উপজেলার নোয়াকাটি গ্রামেঅ্যাসিডদগ্ধ শিক্ষার্থী সোনালী এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। সাতক্ষীরার তালা উপজেলার নোয়াকাটি গ্রামে
১৮ দিনের শিশু সোনালীকে নিয়ে মা-বাবা ঘুমিয়ে ছিলেন। দুর্বৃত্তরা রাতের অন্ধকারে সোনালীর মা ও বাবার শরীরে অ্যাসিড ছোড়ে। মা–বাবার সঙ্গে সোনালীরও মাথা, মুখমণ্ডল ও শরীর মারাত্মক ঝলসে যায়। বাঁচার আশাই ছিল না। সেদিনের শিশু সোনালীর বয়স এখন ১৯ বছর। সোনালী এবার কুমিরা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।

 

সোনালী খাতুন সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার নোয়াকাটি গ্রামের নুর ইসলাম ও খোদেজা দম্পতির সন্তান।

সোনালির বাবা নুর ইসলাম জানান, বাঁশ কাটা নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়েছিল প্রতিবেশীদের সঙ্গে। এ বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষ দুর্বৃত্তরা ২০০৩ সালের ২৮ নভেম্বর রাত ১২টার দিকে তাঁদের ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ করে। এতে শিশুসন্তান সোনালীর মাথা, মুখমণ্ডল, ঘাড় ঝলসে যায়। পুড়ে যায় শরীরের একটি অংশ। তাঁরা স্বামী-স্ত্রীও অ্যাসিডে ঝলসে যান। অ্যাসিডে আক্রান্ত হওয়ার পর শিশুসন্তানসহ তিন জনকেই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা দেওয়া হয়। শিশু সোনালীকে ঢাকায় এক বছর উন্নত চিকিৎসার আওতায় নেওয়া হয়। সোনালীর শরীরের ক্ষত না থাকলেও চিহ্নগুলো এখনো উজ্জ্বল। মাথা, মুখ চুলকায় ও চোখ দিয়ে পানি ঝরে।

সোনালীর এই পর্যন্ত টিকে থাকা ও পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া খুব সহজ ছিল না। স্কুলে যাওয়ার বয়স হওয়ার পর সোনালীকে স্কুলে ভর্তি করা হলে অন্য শিক্ষার্থীরা তাঁকে স্বাভাবিক ভাবে গ্রহণ করেনি। প্রথম দিকে তাঁকে স্কুলে যেতে নানা রকম সামাজিক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি, শিক্ষক, সাধারণ মানুষদের মাধ্যমে কাউন্সেলিং ও সামাজিক সম্পৃক্ততার মাধ্যমে সোনালীর স্কুলে পড়ালেখা অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়েছে।

সোনালী বলেন, তিনি এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরে খুশি। তিনি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে সমাজ উন্নয়নে কাজ করার স্বপ্ন দেখেছেন। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য সোনালী সমাজের সব পর্যায়ের মানুষের কাছে সহযোগিতা চান।

সোনালীর বাবা নুর ইসলাম ও মা খোদেজা খাতুন জানান, ১৮ দিন বয়সের ছোট্ট সোনালী অ্যাসিড–সন্ত্রাসের শিকার হওয়ার পর প্রথম আলো ট্রাস্ট, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ ও স্বদেশের সহযোগিতায় পড়ালেখা চালাতে পেরেছেন। তাঁরা এখন এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারেন।

কুমিরা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম কুমার দাশ বলেন, ‘সোনালী সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। এ জন্য মানসিক শক্তি ও সবার সহযোগিতা ওকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। আশা করছি, সোনালী পরীক্ষায় ভালো ফল করবে।’

আরও খবর: সারাদেশ