সারাদেশ

শ্যামনগরে শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে ‘রাসেল সোনা’ বই বিক্রির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

  প্রতিনিধি ২৯ অক্টোবর ২০২৩ , ২:০০:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ

শ্যামনগর সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) শাহিন হোসেনের বিরুদ্ধে ‌‘ছন্দ ছড়ায় রাসেল সোনা’ বই বিক্রিতে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি এ ঘটনা ঘটেছে।

১২টি ইউনিয়নে ১৯১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে ‘ছন্দ ছড়ার রাসেল সোনা’ ৬টি বই বিক্রিতে তিন হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষকরা।

জানা গেছে, জেলা শিক্ষা অফিসারের মৌখিক নির্দেশে ৬টি বই প্রতিটা স্কুলগুলোতে দিতে বাধ্য হয়েছে। এদিকে প্রকাশিত ৩টি বই সংগ্রহ ও সংরক্ষণের বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধপত্রকে হাতিয়ার বানিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে বই বিক্রি করে ৪ লাখেরও বেশি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষকদের।

পরিপত্র সূত্রে জানা যায়, শিশুদের পাশাপাশি বড়দের রাসেল সোনার জীবনী সম্পর্কে ধারণা রাখতে ৩টি করে বই সংগ্রহ ও সংরক্ষণের বিষয়ে বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। তবে শ্যামনগর উপজেলায় ১৯১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের কাছে ৩টি করে বইয়ের পরিবর্তে ৬টি করে ‘ছন্দ ছড়ায় রাসেল সোনা’ বই বাধ্যতামূলক বিক্রি করা হয়েছে। বইটির বাজারে ১০০ হতে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ বইটি বিক্রি করা হয়েছে ৫০০ টাকায়। উপজেলা শিক্ষা অফিসার প্রতি স্কুলে ৬টি বই দিয়ে মূল্য নিয়েছেন ৩ হাজার টাকা। কিন্তু বাজার দর হচ্ছে ৯০০ টাকা। এভাবে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ১৯১টি স্কুল থেকে ৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকায় বিক্রয় করেন। এর মধ্যে তিনি ৪ লাখ ১ হাজার ১শ’ টাকা শিক্ষকদের কাছ থেকে জোরপূর্বক হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। শিক্ষা অফিসার ওই বইয়ের ৩ হাজার টাকা স্লিপ ফান্ড থেকে সমন্বয় করতে বলেছেন।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি দীনেশ চন্দ্র মণ্ডল, সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ, বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সভাপতি পরিমল কর্মকার, প্রধান শিক্ষক সমিতির আহবায়ক মো. মিজানুর রহমান লাভলুসহ আরও অনেক প্রধান শিক্ষকরা জানান, স্লিপের অর্থ ব্যয় করতে হলে কমিটির মাধ্যমে পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্রয় কমিটি বাজার যাচাই বাছাই করে ন্যায্য মূল্যে মালামাল ক্রয় করবেন। অথচ অধিক মুনাফার আশায় ১৫০ টাকার বইয়ের স্থলে ৫০০ টাকা, ৩টি বইয়ের স্থলে ৬টি বই ১৯১টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদেরকে নিতে বাধ্য করেন। এক্ষেত্রে শিক্ষা অফিসার ৪ লাখ ১ হাজার ১০০ টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা (শিক্ষক নেতারা) শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, ওপরের নির্দেশ আপনারা মানতে বাধ্য।

প্রধান শিক্ষকরা আরও জানান, পূর্বে শেখ রাসেলের ২৫টি বই ও ২৫টি বাঁধানো ছবি মাত্র ৪ হাজার টাকায় ক্রয় করেছি। সেখানে ৬টি চটি বই দিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার প্রতি স্কুল থেকে ৩ হাজার টাকা জোর করে আদায় করেছেন। শিক্ষকরা আরও জানান, বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী, বিশেষ করে ছোট্র সোনা শেখ রাসেল সম্পর্কের সব পুস্তক বিদ্যালয়ে সংরক্ষণ ও শিশুদের মাঝে বিতরণ করতে শিক্ষকরা আগ্রহী। বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রতি শিক্ষকদের ভালোবাসাকে পুঁজি করে শ্যামনগর উপজেলা শিক্ষা অফিসার প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করে ৪ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

বই বিক্রয়ের বিষয় উপজেলা শিক্ষা অফিসার শাহিন হোসেন জানান, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের চাপে আমি বইগুলো প্রতিটি স্কুলে বিক্রয় করতে বাধ্য হয়েছি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের মৌখিক নির্দেশে ৩টা বইয়ের স্থলে ৬টি বই প্রতিটা স্কুলে দেওয়া হয়েছে। এখানে আমার কিছু করার ছিলো না। অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতি স্কুল থেকে বই বিক্রয়ের সমুদয় টাকা কোম্পানির প্রতিনিধির কাছে পাঠানো হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে ইয়াছমিন করিমীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ৩টি বইয়ের স্থলে ৬টি বই দিতে আমি বলি নাই। আমি শ্যামনগর শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে কথা বলছি বলে ফোনটি কেটে দেন।

শ্যামনগরের সুশীল সমাজ উপজেলা শিক্ষা অফিস দুর্নীতিমুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও দুদকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে দুইজন শিক্ষা অফিসার দুর্নীতির দায়ে স্ট্যান্ড রিলিজ হয়ে দুদকের মামলায় বিচারাধীন আছে।

আরও খবর: সারাদেশ