সারাদেশ

শ্যামনগরে নরেন্দ্র মুন্ডা হত্যা মামলায় ৬ জন গ্রেফতার, চাঞ্চল্যকর রহস্য উদঘাটন

  প্রতিনিধি ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৪:৫৯:৫৩ প্রিন্ট সংস্করণ

সাতক্ষীরা অফিসঃ সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের ধুমঘাট অন্তাখালি মুন্ডাপাড়ায় আট বিঘা জমি দখলকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ এবাদুল ও রাশেদুলের নেতৃত্বে তিন নারী জখম ও নরেন্দ্র মুন্ডা নিহতের ঘটনায় শনিবার রাতে ছাকাত গাজী নামের আরো একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রবিবার ছাকাত আলী সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম প্রথম আদালতের বিচারক রাকিবুল ইসলামের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিতে এসে পুলিশকে ধোকা দিয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত ছাকাত গাজী ঈশ্বরীপুরের মৃত ফয়েজউদ্দিন গাজীর ছেলে। এদিকে নরেন্দ্র মুন্ডা হত্যাকান্ডের এজাহার নামীয় ২২জনসহ অজ্ঞাতনামা ১৭০ জনের মধ্যে ২২ দিনে মাত্র ছয়জন গ্রেপ্তার হওয়া ও ঘটনার মূল গডফাদাররা গ্রেপ্তার না হলেও সদর হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড নরেন্দ্র মুন্ডার পোষ্ট মর্টেম রিপোর্টে হৃদরোগে মৃত্যু বলে উল্লেখ করায় মুন্ডা সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন করে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।

সাতক্ষীরার দৈনিক পত্রদূত পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, মুল্লুক চাদ মুন্ডার ধুমঘাট ২৭ বিঘা জমির মধ্যে আট বিঘা জমির কাগজপত্র তৈরি করে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দখল করে আসছিল রাশেদুল ও এবাদুল। রাশেদুল ও এবাদুল আদালত থেকে ডিক্রী পাওয়ার পর নরেন্দ্র নাথ মুন্ডা ২০১৭ সালে ডিক্রী রদের মামলা করে রাশেদুল ও এবাদুলের বিরুদ্ধে।

সাতক্ষীরার দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার প্রকাশিত সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে “ওই জমি ফিরিয়ে নিতে শুকুর আলীকে গিজ্জা গাইনের চর থেকে রাশেদুল ও এবাদুলের তিন বিঘা জমি দেওয়া হয়। একই সময়ে শুকুর আলী ও বাংলা ভাই বসাবসি করে রাশেদুল ও এবাদুলকে আট বিঘা জমি ফিরিয়ে দিতে তাদের কাছ থেকে আরো দুই বিঘা জমি নেয়। এ নিয়ে মুন্ডও এবাদুলদের মধ্যে একবার শুকুর আলী বিচার করেন তো অন্যবার বাংলা ভাই। এ ছাড়া শুকুর আলীর ভাইপো জাহিদ হোসেনও এ নিয়ে শালিস করেছেন। সর্বশেষ এবাদুল ও রাশেদুলের আট বিঘা জমি ফিরিয়ে দিতে শুকুর আলী পেচোর মোড়ের এসবি নবীন সংঘের সভাপতি নুর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মারুফুজ্জামান মিলন ওরফে বাবু, বংশীপুর ব্রাদার্স ক্লাবের সভাপতি জাহিদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক রায়হান, বংশীপুর মুনস্টার ক্লাবের সভাপতি ফিরোজ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিমের সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক করেন। ওই পত্রিকায় আরও উল্লেখ করা হয়, শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক তারিকুল ইসলামের কাছ থেকে মুন্ডাদের জমির শালিস করে দেওয়ার দায়িত্ব নিজে নেন শুকুর আলী। এক পর্যায়ে ওই তিন ক্লাবের দেড় শতাধিক সদস্যসহ অন্যান্য শতাধিক সন্ত্রাসী নিয়ে পুলিশের সঙ্গে অঘোষিত চুক্তি করে ১৯ আগষ্ট সকালে শুকুর আলী ও বাংলা ভাই এর পরিকল্পনায়, ফিরোজ, জাহিদ, রায়হান, নূর হোসেন, আব্দুল আলীম, এবাদুল ও রাশেদুল পরিকল্পনা মাফিক মুল্লুকচাদ মুন্ডারর জমি দখলের উদ্দেশ্যে মুন্ডা পাড়ায় সশস্ত্র হামলা চালানো হয়। এ হামলায় যারা অংশ নেয় তাদের মধ্যে শ্রমিক থেকে নেতা পর্যায়ে মাথা পিছু এক হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পেয়েছেন বলে পত্রদূত পত্রিকায় উল্লেখ করা হয়।

পত্রদূত পত্রিকা সংবাদে আরও বলা হয়েছে, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল নরেন্দ্র মুন্ডার মৃত্যু হার্ট এটাকে হয়েছে বলায় মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা দ্রুত জামিনে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এলাকায় শুরু হয়েছে নতুন আতঙ্ক।

প্রকাশিত খবরে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, শুকুর আলী ইতিপূর্বে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন যে, মুন্ডাদের কোন কাগজপত্র নেই। তবে হামলার ঘটনার সঙ্গে তার নিজের ও পরিবারের স্বজনদের কোন সম্পৃক্ততা ছিল না। তিনটি ক্লাবের যারা মুন্ডা পাড়ায় হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলো তাদেরকে তিনি সতর্ক করেছেন। তবে একটি মহল এলাকার বিভিন্ন বিষয়কে নিয়ে তাদেরকে জড়িয়ে মিথ্যাচার করছে।

শ্যামনগর থানার উপ-পরিদর্শক রিপন মল্লিক পত্রদূতের সাংবাদিককে জানিয়েছেন, ১৯ আগষ্ট মুন্ডাপাড়ায় হামলার ঘটনায় শনিবার পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। সর্বশেষ গ্রেপ্তার হওয়া ছাকাত আলী রবিবার দুপুরে জ্যেষ্ট বিচারিক হাকিম প্রথম আদালতের বিচারক রাকিবুল ইসলামের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে এসে তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তণ করে। যাহা পুলিশকে ধোকা দেওয়ারই নামান্তর।

আরও খবর: সারাদেশ