সারাদেশ

শিক্ষকদের ৫০০ টাকা চাঁদায় প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বউভাতে উপহার

  প্রতিনিধি ৯ জানুয়ারি ২০২৩ , ১০:৪৪:০২ প্রিন্ট সংস্করণ

 

কুড়িগ্রাম অফিসঃ শিক্ষকদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫০০ টাকা চাঁদা নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেনের ছেলের বউভাত অনুষ্ঠানে সোনার আংটি, রেফ্রিজারেটর ও ওয়াশিং মেশিন উপহার দেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার কুড়িগ্রামের তিন উপজেলার ২৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রেখে বউভাত অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তাঁরা এসব উপহার দেন।

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর একমাত্র ছেলে সাফায়েত বিন জাকির সৌরভের বৌভাতের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ছুটি দিয়ে শিক্ষকেরা গতকাল রৌমারী শহরে প্রতিমন্ত্রীর বাড়িতে যান। ওই তিনটি উপজেলার ২৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। প্রধান শিক্ষকদের সংরক্ষিত ছুটি থেকে এই ছুটি দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তারা। তিনটি উপজেলার মোট ১ হাজার ৩০০ জন শিক্ষক বউভাত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন। এ জন্য তাঁদের বাধ্যতামূলক দিতে হয়েছে জনপ্রতি ৫০০ টাকা চাঁদা। সেই টাকায় নববধূ ও বরের জন্য সোনার আংটি, রেফ্রিজারেটর ও ওয়াশিং মেশিন উপহার দেওয়া হয়েছে। বউভাত অনুষ্ঠানে প্রাথমিক শিক্ষকদের সঙ্গে তিনটি উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 

রৌমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করীম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বউভাত অনুষ্ঠানের জন্য তাঁর সংসদীয় এলাকার ২৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। এ জন্য গতকাল বিদ্যালয় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তিন উপজেলার সব শিক্ষক বউভাতের অনুষ্ঠানে আসেননি। যেমন রৌমারী উপজেলার ৬৫০ জন শিক্ষকের মধ্যে মাত্র ৩৫০ জনের মতো শিক্ষক বিয়েতে অংশ নিয়েছিলেন। রৌমারী উপজেলা শিক্ষকদের পক্ষ থেকে মন্ত্রীর ছেলে ও ছেলের বউকে সোনার আংটি উপহার দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জানান, বউভাত অনুষ্ঠানের চাঁদার টাকা প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। পাঁচ লাখের বেশি টাকা জমা হয়। অনেকেই আবার ৩০০ টাকা চাঁদা দিয়েও অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

চিলমারী উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বউভাত অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে, খালি হাতে কীভাবে যান, তাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ২০ কেজি মিষ্টি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চাঁদার বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষকদের কাউকে চাঁদার জন্য চাপ দেওয়া হয়নি। যাঁরা বউভাত অনুষ্ঠানে যেতে আগ্রহী, তাঁরাই শুধু চাঁদা দিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বউভাত অনুষ্ঠানে প্রায় ১০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। এতে ১৫টি গরু, ৭টি খাসি ও মুরগির মাংসের ব্যবস্থা থাকলেও অনেকেই ভাত না খেয়ে রুটি–চা খেয়ে ফেরত এসেছেন।

চিলমারী উপজেলার অস্টমীরচর ইউনিয়নের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনিটি উপজেলার শিক্ষক ১ হাজারেরও বেশি। ১৫টি ইউনিয়নের নেতা-কর্মী প্রায় ৪ হাজার ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজন মিলে প্রায় ১০ হাজার লোকের সমাগম ঘটে। অনেকেই দাঁড়িয়ে খাবার গ্রহণ করেন, আবার অনেকের বসার জায়গা না পেয়ে বাজারে রুটি–কলা খেয়ে ফেরত এসেছেন।

নয়ার চরের এক শিক্ষক বলেন, ‘দাওয়াতের জন্য চাঁদা দিয়েছি। কত দিয়েছি সেটা বলা যাবে না। মন্ত্রীর ছেলের বউভাতে আয়োজন ব্যাপক ছিল। কিন্তু সিস্টেম ব্রেক হয়েছে, খাওয়াতে পারে নাই। না খেয়েই ফেরত চলে এসেছি।

আরও খবর: সারাদেশ