সারাদেশ

রিয়াজ হত্যা মামলার তিন বছর পর চাঞ্চল্যকর রহস্য উদঘাটন, আসামিরা গ্রেফতার

  প্রতিনিধি ৮ জুন ২০২২ , ৮:০৫:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ

 

নীলাকাশ টুডেঃ খামার মালিককে ফাঁকি দিয়ে বাজারে দুধ বিক্রির টাকা থেকে ভাগ চাওয়ায় খুন হন রিয়াজ উদ্দিন (৩৫)। খুনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে খুনিরাই মরদেহ নিয়ে যায় হাসপাতালে। এ ঘটনার প্রায় দুই বছর পর সোমবার (৬ জুন) রাতে এবং মঙ্গলবার (৭ জুন) সকালে রিয়াজের তিন হত্যাকারীকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই গাজীপুর।

গ্রেফতারকৃতরা হলো, নরসিংদী সদর থানার দক্ষিন পুরানপাড়া এলাকার আজিজুল হক (২০), একই এলাকার ইয়াছিন মিয়া (৩৯) ও একই জেলার শিবপুর থানার সৈয়দনগরের আবির (১৬)। নিহত রিয়াজ উদ্দিন এবং গ্রেফতারকৃতরা গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার ফুলদির ছাইফ এগ্রোফার্মে কাজ করতো।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গাজীপুর সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

 

তাদের জবানবন্দী অনুযায়ী, গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার ফুলদির ছাইফ এগ্রোফার্মের কর্মচারী রিয়াজ উদ্দিন ২০২০ সালের ২৮ জুন বিকেলে স্থানীয় একটি বিলে হাঁস আনতে গিয়ে সাঁতার কাটা অবস্থায় পানিতে ডুবে গেলে তার সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় কালীগঞ্জ থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হলেও ময়নাতদন্ত রিপোর্টে মাথায় আঘাতের কারণে রিয়াজের মৃতু হয়েছে বলে জানা যায়।

পরবর্তীতে রিয়াজের বাবা মোঃ নাজিম উদ্দিন অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কালীগঞ্জ থানা পুলিশ মামলাটি ৩ মাস তদন্ত করে চুড়ান্ত রিপোর্ট আদালতে দায়ের করলেও আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআই গাজীপুর জেলাকে নির্দেশ প্রদান করেন।

 

পরে পিবিআই এর একটি টিম গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অভিযান চালিয়ে হত্যার সাথে জড়িত নিহতের সহকর্মী আজিজুল হককে গত ৬ জুন রাতে গাজীপুর জেলা কালীগঞ্জের ফুলদী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। এরপর জিজ্ঞাসাবাদ ও তার দেয়া স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ওই রাতেই নরসিংদী জেলা সদর থানার দক্ষিণ পুরান পাড়া এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি ইয়াছিন মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। পরে গ্রেফতারকৃত উভয়ের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে নরসিংদীর কেশবপুর থানাধীন সৈয়দনগর এলাকা থেকে ৭ জুন ভোরে আবিরকে গ্রেফতার করা হয়।

পিবিআই গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান জানান, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানায় ভিকটিম ইয়াসিন মিয়া ওই ফার্মের দুধ বিক্রিসহ যাবতীয় কাজ করত। ইয়াসিন দুধ বিক্রির টাকা থেকে প্রতিদিন ১০০-১৫০ টাকা গোপনে নিজের কাছে রেখে দিত। ইয়াসিন একদিন ভিকটিম রিয়াজ উদ্দিনকে নিয়ে ফুলদী বাজারে দুধ বিক্রি করতে গেলে রিয়াজ টাকা চুরির বিষয়টি জেনে যায়।

এরপর থেকে রিয়াজ উদ্দিন আসামি ইয়াসিন মিয়ার চুরিকৃত টাকার অর্ধেক ভাগ চায়। টাকার ভাগ না দিলে ফার্মের মালিককে জানিয়ে দিবে বলে হুমকি দিলে রিয়াজ এর সাথে ইয়াসিনের ঝগড়া হয়।

এরপর, পূর্ব পরিকল্পনা মতে ঘটনার দিন বিকেলে ইয়াসিন মিয়াসহ অন্যান্য আসামিরা রিয়াজকে সাথে নিয়ে বিলের মধ্যে হাঁস আনার জন্য গেলে অন্য দুই আসামি বিলের পাড়ে দাঁড়িয়ে পাহারা দেয়। কিছু দূর যাওয়ার পর ইয়াসিন মিয়ার হাতে থাকা কাঠের লাঠি দিয়ে মাথায় ৩-৪ টা আঘাত করলে রিয়াজ পানিতে ডুবে যায়। পরে তারা তিনজনেই ফার্মের সিকিউরিটি গার্ড ও স্থানীয়দের কাছে প্রচার করে রিয়াজ পানিতে ডুবে গেছে।

পরবর্তীতে ঘটনায় জড়িত আসামি ইয়াসিন মিয়াসহ অন্যান্যরা রিয়াজকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আরও খবর: সারাদেশ