সারাদেশ

মোবাইলে শতাধিক নারীর আপত্তিকর ছবি-ভিডিও, মালিককে খুঁজছে পুলিশ

  ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ ২ মে ২০২৩ , ১:৩৮:৪২ প্রিন্ট সংস্করণ

প্রতীকী ছবি

 

গভীর রাতে মোবাইলে নারীদের নগ্ন ছবি ও ভিডিও ধারণ এবং ঘুমে আচ্ছন্ন থাকলে গায়ে হাত দিয়ে স্পর্শ করতো অচেনা ব্যক্তি। ঝিনাইদহের শৈলকুপায় উপজেলার নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের সাপখোলা গ্রামে ঈদের দিন রাতে একটি মোবাইল উদ্ধারের পর এমন চঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২২ এপ্রিল সাপখোলা গ্রামের ফেরদৌস নামে এক ব্যক্তি মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সময় জানালার ফাঁক দিয়ে মোবাইলে ছবি তোলার আগে ঘরের মধ্যে লাল রঙের আলো প্রবেশ করতে দেখতে পান। তখন তিনি সজাগ হয়ে যান। এ সময় অচেনা ওই ব্যক্তি মোবাইলে ছবি তোলার সময় আলো জ্বলে উঠলে আলো লক্ষ্য করে আঘাত করেন ফেরদৌস। সে সময় ওই ব্যক্তির হাত থেকে মোবাইল পড়ে যায়। আঘাত দেওয়ার পর হাত ধরলে মুহূর্তেই হাত ছাড়িয়ে নিয়ে মোবাইল ফেলে পালিয়ে যায় ওই ব্যক্তি।

 

পরে তার ফেলে যাওয়া মোবাইল ঘেঁটে দেখা যায়- সাপখোলা থেকে পশ্চিম সাপখোলা, আশুরহাট ও বাগড়ি গ্রামের শতাধিক নারীর ঘুমন্ত অবস্থায় আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করা। এ ঘটনায় এলাকাবাসী তাদের নিরাপত্তায় রাত জেগে পাহারা দিতে শুরু করেছে।

সরেজমিনে শৈলকুপার সাপখোলা গ্রামে গিয়ে জানা যায়, অপরিচিত ওই মোবাইল উদ্ধারের আগে জানালার ফাঁক দিয়ে মেয়েদের গায়ে হাত দেওয়া, কাঠি দিয়ে খোঁচা মারাসহ ঘরের মধ্যে হঠাৎ আলো জ্বলে ওঠার মতো দুই-একটি ঘটনা ঘটেছে‌। ফলে বাড়ির পুরুষেরা রাত জেগে ওই ব্যক্তিকে ধরার চেষ্টা করেন। তবে এমন ঘটনা দুই-এক মাস বন্ধ থাকতো। আবার হঠাৎ করেই এমন ঘটতো। তবে ২২ এপ্রিল মোবাইল উদ্ধারের পর স্থানীয় ইউপি সদস্য ও গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ওই মোবাইলে সাপখোলা গ্রামসহ আশপাশের দুই-তিন গ্রামের তরুণী-গৃহবধূদের ছবি ও ভিডিও দেখতে পান।

পরে মেম্বার ও স্থানীয়রা মিলে ওই মোবাইলে থাকা সিমের সন্ধান করলে গ্রামের শামছুল বিশ্বাসের মেয়ে জান্নাতীর সিম বলে জানতে পারেন। এ সময় জান্নাতীর কাছে সিমের বিষয়ে জানতে চাইলে একই গ্রামের আজিমুল বিশ্বাসের ছেলে তুরাগকে সিমটি ব্যবহার করতে দিয়েছে বলে জানায় সে। জান্নাতী ও তুরাগের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক থাকাকালে সে সিমটি দিয়েছে বলে মেম্বারকে জানান। পরে তারা মোবাইলের মালিক কে তা নিশ্চিত করতে না পেরে মোবাইলটি পুলিশের হেফাজতে দিয়ে দেন। তবে ৮ দিন পার হলেও মোবাইলের মূল মালিককে এখনো শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

 

ওই এলাকার একাধিক নারী জানান, দুই বছর ধরে গ্রামটিতে হঠাৎ ঘরের মধ্যে আলো জ্বলে উঠতো। নারীরা ঘুমিয়ে পড়লে তাদের ঘুমন্ত অবস্থার বিভিন্ন আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও করতো । এমনকি জানালা দিয়ে শরীর স্পর্শ করা হতো। কখনো পাটকাঠি দিয়ে নারীদের শরীরে খোঁচা দেওয়া হত। কেউ ধরতে গেলে মুহূর্তে লাপাত্তা হয়ে যায়।

উপজেলার সাপখোলা গ্রামের বাসিন্দা ফেরদৌস বলেন, ঈদের দিন রাতে আমি ঘুমিয়ে পড়ি এবং রাত ৩টার দিকে ঘুম ভেঙে গেলে ঘরের জানালা দিয়ে এক যুবক মোবাইল দিয়ে ছবি তোলার চেষ্টা করে। তখন তার হাতে আঘাত করি এবং তার হাত থেকে মোবাইল পড়ে যায়। পরে মোবাইলটি মেম্বারের কাছে দেওয়া হয় মালিককে ধরার জন্য। এরপর মোবাইলে ধারণ করা এলাকার বিভিন্ন নারীদের নগ্ন ও অর্ধনগ্ন ছবি দেখতে পাই। গ্রামের সবাই মিলে একটি মিটিংয়ে বসলেও মোবাইলের মালিক কে তা জানা যায়নি। পরে শৈলকুপা থানা পুলিশের কাছে দেওয়া হয়। এখনো পর্যন্ত থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি। কিন্তু এক সপ্তাহের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও মোবাইলটির মালিককে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। দোষী ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হোক এটাই আমার দাবি।

সাপখোলা গ্রামের কয়েকজন গৃহবধূ বলেন, আমরা যদি নিরাপদে রাতে ঘরে শুয়ে না থাকতে পারি এর থেকে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে। দুই বছরের বেশি সময় ধরে জানালার ফাঁক দিয়ে মেয়েদের ছবি ও ভিডিও ধারণ করে আসছে। এই আতঙ্কে দিন কাটছে।

 

নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য টিটো মিয়া বলেন, সাফখোলা গ্রামটিতে এখন মোবাইল আতঙ্ক বিরাজ করছে। মোবাইলে মেয়েদের নগ্ন ছবি ও ভিডিও থাকার ঘটনার পর থেকে এলাকার কেউ ঠিকমতো রাতে ঘুমায় না ।

শৈলকুপা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি খুবই আপত্তিজনক। ওই মোবাইলে অনেক নারীর ভিডিও ও ছবি পাওয়া গেছে। সাইবার ক্রাইমের ঘটনা হওয়ায় পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল এটা নিয়ে কাজ করছে। যাদেরকে সন্দেহ করছে তাদেরকে নিয়ে অনুসন্ধান করছে। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে একটু সময় লাগছে। তবে এ ঘটনায় এখনো থানায় কোনো মামলা হয়নি। মামলা হলে আপনাদের জানানো হবে।

আরও খবর: সারাদেশ