সারাদেশ

মাকে মারধর করায়, বাবাকে হত্যা করেছে আপন তিন ছেলে

  মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ ১১ এপ্রিল ২০২৩ , ৪:২১:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ

 

 

মুন্সীগঞ্জ সদরের মিঝিকান্দি ভাষানচর গ্রামে ডাকাতদের হামলায় নিহত হওয়ার প্রচার চালানো বাবা নুরুল ইসলামকে খুন করেছে তার ছেলেরাই। মায়ের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তার ৩ ছেলে।

এ ঘটনায় আটক দুই ছেলে সুমন হাওলাদার ও মোহাম্মদ আলী মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে মুন্সীগঞ্জ আদালতে দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেছে।

মুন্সীগঞ্জ আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রহিমা আক্তারের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন তারা। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার আধারা ইউনিয়নে কাঠমিস্ত্রি নুর ইসলাম হাওলাদার হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন নিয়ে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে মঙ্গলবার দুপুরে প্রেস ব্রিফিং শেষে তাদের আদালতে হাজির করা হলে তারা এই দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজুর রহমান আল মামুন বলেন, মেঘনা নদীতে মাছ ধরার সময় ডাকাতের হামলায় নুর ইসলাম নিহত হয়েছেন বলে ছেলেরা দাবি করলেও মা তাছলিমা বেগমকে পেটানোর প্রতিশোধ নিতে তিন ছেলে মিলে বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করেন। তারপর ঘটনা ধামাচাপা দিতে সাজানো হয় ‘ডাকাত হামলার’ নাটক।

পুলিশ সুপার জানান, রোববার সকালে দাম্পত্য কলহের জের ধরে নুরুল ইসলাম তার স্ত্রী তাছলিমা বেগমকে মারধর করে। এতে আহত অবস্থায় স্ত্রী তাছলিমা শহরের উপকণ্ঠ মুক্তারপুর এলাকায় তার মেয়ের বাড়িতে চলে যান।

পরে, নুরুল ইসলাম নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে বোন হামিদা বেগমের বাড়িতে চলে যান। পরে ওই দিন বিকেলে বোন হামিদা বেগমের বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন নুরুল ইসলাম।

এদিকে, মাকে মারধর করায় বড় ছেলে সুমন হাওলাদার (৩০), মোহাম্মদ আলী হাওলাদার (২৩) ও রাসেল হাওলাদারের (২০) মনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। পরে রাত গভীর হলে বসতঘরে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় বাবা নুরুল ইসলামকে ৩ ছেলে মিলে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে। নুর ইসলাম বাঁচার আকুতি করলে হত্যা নিশ্চিত করতে এক ভাই রামদা দিয়ে কোপাতে থাকেন আর অপর দুই ভাই ধরে রাখেন। পরে সকালে ডাকাত হামলার নাটক সাজান তারা।

পুলিশ সুপার আরও জানান, ডাকাতদের হামলায় নিহত হওয়ার প্রচার চালালেও ভিন্ন তথ্য আসে পুলিশের কাছে। এতে সোমবার দুপুরে পুলিশ নিহতের ২ ছেলে সুমন হাওলাদার ও মোহাম্মদ আলীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত তথ্য উঠে আসে। নিহতের অপর ছেলে রাসেল হাওলাদার পলাতক রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সোমবার দিনগত রাতে নিহতের বোন হামিদা বেগম বাদী হয়ে সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আজ দুপুরে গ্রেপ্তার দেখিয়ে নিহতের ছেলে সুমন ও মোহাম্মদ আলীকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ কোর্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর জামাল উদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় মুন্সীগঞ্জ আদালতে নিহতের দুই ছেলে দোষ স্বীকার করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রহিমা আক্তারের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গতকাল সোমবার ভোরে নিহতের নিজ বাড়িতে বাবা কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে তারই তিন ছেলে।

আরও খবর: সারাদেশ