সারাদেশ

বড় বোনকে বাঁচাতে পানিতে ঝাঁপ দেন ছোট বোন, প্রাণ গেল দুজনেরই

  নীলাকাশ টুডেঃ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ৬:৫১:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ

 

গাছের গুড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে নৌকার কাঠ খুলে ঢুকতে শুরু করে পানি। এ সময় আতঙ্কিত হয়ে পানিতে লাফিয়ে পড়েন বড় বোন। আর বোনকে ডুবতে দেখে তাকে বাঁচানোর জন্য ছোট বোনও পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু এ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন দুই বোনই। তবে নৌকার অন্য যাত্রীদের জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

গত সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা শহরের রিজার্ভ বাজার ডিসি বাংলো এলাকায় কাপ্তাই লেকে পর্যটকবাহী নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। ওই নৌকার যাত্রীরা জয়পুরহাট থেকে সেখানে তীর্থ ভ্রমণে গিয়েছিলেন।

 

মারা যাওয়া বড় বোন পুষ্পা রানী চক্রবর্তীর (৭০) বাড়ি দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ি উপজেলা সদরের দক্ষিণ বাসুদেবপুর (বড় বন্দর)। তিনি ওই এলাকার গোপাল চক্রবর্তীর স্ত্রী। আর ছোট বোন চায়না রানী চক্রবর্তী (৫০) রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বগেরবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি একই গ্রামের বৈদ্যনাথের স্ত্রী।

নিহতদের ভাগিনা রতনপুর গ্রামের নিত্যানন্দ চক্রবর্তী তাদের পরিচয় নিশ্চিত করে বলেন, পুষ্পা রানী ও চায়না রানী দুজন আপন বোন। রাঙ্গামাটিতে আমার মাও গিয়েছিলেন। মা বেঁচে গেছেন। পুষ্পা রানী বড়, আমার মা মনজু রানী মেঝ এবং চায়না রানী ছোট বোন। রাঙামাটিতে তীর্থ ভ্রমণে যাবেন বলেন তিন বোন রতনপুর এসছিলেন। সেখান থেকে শিবচতুর্দশীতে রাঙামাটিতে গিয়েছিলেন। নিজ নিজ এলাকায় দুই বোনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ধরঞ্জী ইউনিয়নের রতনপুর হিন্দুপাড়া গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, ওই গ্রামের ৫৬ জনসহ নারী-পুরুষ ও শিশুসহ মোট ৬৯ জন শিবচতুর্দশীতে পূর্জা-অর্চনা করতে সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ মন্দিরে যান। গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রতনপুর বাজার থেকে একটি বাসে তারা রওনা দেন।

 

রোববার দুপুরে বাসটি সীতাকুণ্ডে পৌঁছায়। এরপর তারা সেখানে পূর্জা-অর্চনা করেন। সোমবার বিকেলে ৬০ জনের ওপর নারী-পুরুষ রাঙামাটি ঝুলন্ত সেতু দেখে নৌকায় করে ফিরছিলেন। নৌকাটি ডিসি বাংলো এলাকায় এসে গাছের গুড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে নৌকা লেকের পানিতে ডুবে যায়। নৌকার যাত্রী পুষ্পা রানী ও চায়না রানী চক্রবর্তী পানিতে ডুবে প্রাণ হারান।

ওই নৌকায় ছিলেন রতনপুর গ্রামের সুজন চন্দ্র বর্মন। তিনি মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা সবাই রাঙামাটি ঝুলন্ত সেতু দেখে নৌকায় ফিরছিলাম। ডিসি বাংলোর কাছাকাছি এসে গাছের গুড়ির ধাক্কায় নৌকার তলার একটি কাঠ খুলে ভেতরে পানি ঢুকতে শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যে নৌকাটি ডুবে যায়। পুষ্পা রানীকে বাঁচাতে গিয়ে তার ছোট বোন চায়না রানীও পানিতে ডুবে যান। পরে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আরও তিনজন আহত হন। তারা চিকিৎসা নিয়ে এখন সুস্থ আছেন। নিহতদের মরদেহ তাদের স্বামীর বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। রাঙামাটিতে এখনো চারজন রয়েছেন। আর আমরা মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছি।

রতনপুর গ্রামের সুজয় চন্দ্র বর্মণ বলেন, আমার বাবা বিপুল চন্দ্র বর্মণ ও মা শ্রীমতি ষষ্ঠী রানী ওই নৌকায় ছিলেন। আমার মা-বাবাসহ গ্রামের অন্যরা এখন সুস্থ রয়েছেন। নৌকাডুবিতে প্রায় সবার মুঠোফোন পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে। এ কারণে যোগাযােগে একটু কষ্ট হচ্ছিল।

পাঁচবিবি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল হক বলেন, রতনপুর গ্রামের সনাতন ধর্ম্বালম্বীরা লোকজনেরা রাঙামাটিতে গিয়েছিলেন। সেখানে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় দুই জন নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে জেনেছি। তারা রতনপুর গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে এসে সেখানে গিয়েছিলেন।

আরও খবর: সারাদেশ