সারাদেশ

প্রধান শিক্ষক, পিয়ন ও সভাপতি মিলে আমাকে ফাঁসিয়েছেন’ শিক্ষক পিয়ারী

  নীলফামারী প্রতিনিধি ১৫ জুলাই ২০২৩ , ৬:২৬:২৯ প্রিন্ট সংস্করণ

বিদ্যালয় চলাকালে শিক্ষার্থীদের দিয়ে হাতপাখায় বাতাস করিয়ে নেওয়া ও শ্রেণিকক্ষে বিছানা পেতে শুয়ে থাকার বিষয়ে মুখ খুলেছেন সহকারী শিক্ষিকা পেয়ারী বেগম। তিনি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের গাড়াগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। সম্প্রতি ওই স্কুল শিক্ষিকার বিদ্যালয় চলাকালে শ্রেণিকক্ষে বিছানা পেতে শুয়ে থাকা ও শিক্ষার্থীদের দিয়ে হাতপাখায় বাতাস করিয়ে নেওয়ার কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলোর কোনোটিতে শিক্ষিকা পেয়ারী বেগম বিছানা পেতে ঘুমাচ্ছেন। কোনোটিতে তিনি ক্লাসে বসে খাতায় কিছু লিখছেন আর হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছে এক শিক্ষার্থী। কোনোটিতে তিনি ঘুমাচ্ছেন পাশে এক শিশু  স্মার্ট ফোনে গেম খেলছে। শিক্ষিকার পাশে হাতপাখা, টিফিন বাটি, তার ভ্যানিটি ব্যাগ সবই রয়েছে।

এ নিয়ে শনিবার (১৫ জুলাই) দুপুরে জনপ্রিয় নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশের পর মুখ খুলেন সেই স্কুল শিক্ষিকা পেয়ারী বেগম। তবে সংবাদ প্রকাশের আগে তার সঙ্গে কথা বলতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার সঙ্গে কথা বলতে বিদ্যালয়ে গেলে অফিস কক্ষে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করেন প্রধান শিক্ষক সাজ্জাদুল করিম।

সংবাদ প্রকাশের পর ওই নিউজ পোর্টালে এই প্রতিবেদকের কাছে স্কুলশিক্ষিকা পেয়ারী বেগম তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। এছাড়াও ওই শিক্ষিকার দাবি, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজ্জাদুল করিমের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৭ জুলাই উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লাঞ্ছিতের লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। এরপর থেকে তার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন প্রধান শিক্ষক।

স্কুলশিক্ষিকা পেয়ারী বেগম বলেন, আমি নির্দোষ। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। ওইদিন স্কুল ছুটির পাঁচ মিনিট আগে আমার প্রেসার উঠছিল। আমি মাথা ঘুরে পড়ে যাই। তখন স্কুলের ম্যাডামরা আমাকে ওখানে শোয়ায়ে দেন। এরপর প্রধান শিক্ষক সাজ্জাদুল করিম পিয়ন মিনারুলকে বলছে ছবিটা তুলে নে। তখন আমার মাথায় কাপড়ও ছিল না, যাতে করে মাথায় বাতাস লাগে। পিয়ন ছবি তোলার পর প্রধান শিক্ষক, সভাপতি কাফি তিনজনে মিলে এই কাজটা করেছেন। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন তারা।

বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুল কাফি  বলেন, যেসব বাচ্চারা স্কুলে আসেনি তাদের বিস্কুট ও উপবৃত্তির টাকা দেওয়া নিয়ে সহকারী শিক্ষিকা পেয়ারীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। পাল্টাপাল্টি অভিযোগও করে দুই পক্ষ। আমি ওই স্কুলে কম যাতায়াত করি। ওই ম্যাডামের বিরুদ্ধে আমার কাছে লিখিত অনেক অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য পক্ষে বিপক্ষে কিছু বলতে পারব না। মূলত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ সেটা কাউন্টার অভিযোগ। ওই ম্যাডামের সঙ্গে ঝামেলা ছিল আমার। তিনি আমাকে অনেক অপমান করেছেন।

গাড়াগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজ্জাদুল করিম বলেন, আপনি যদি সঠিক ভাবে পথ চলতে চান তাহলে আপনাকে কেউ দেখতে পারবে না। আমি কেন আমার শিক্ষকের বদনাম হবে সেই পোস্ট করবো, ছবি তুলবো। এটা যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে তাহলে আমি সম্পূর্ণ দায় মেনে নেব। আমি কারও পেছনে লাগতেও যাব না। কেউ যদি আমার ক্ষতি করতে চায় করুক। তার জন্য আল্লাহ তায়ালা একজন আছেন। আমি কেন এই কাজ করবো। যে কাজে মানুষের ক্ষতি হবে।

এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, তাকে ইতোমধ্যে শোকজ করা হয়েছে। আগামীকাল রোববার তিনি শোকজের কাগজ হাতে পাবেন। সেদিন তিনি অসুস্থ ছিলেন এমনটা আমিও শুনতেছি। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সেই শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকরা যে অভিযোগ দিয়েছিলেন সেটি সমাধান হয়ে গেছে। আর এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের সংশ্লিষ্টতা পাইনি। তবে তদন্ত করে বলা যাবে আসল ঘটনা কি।

আরও খবর: সারাদেশ