সারাদেশ

‘নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত’ সেই আ.লীগ নেত্রীর মন্তব্য ফেসবুকে তোলপাড়!

  প্রতিনিধি ১৮ জুলাই ২০২২ , ১০:৪৯:২৭ প্রিন্ট সংস্করণ

 

নীলাকাশ টুডেঃ ‘নিজেদের আখের গোছাতে আমরা অনেকেই ব্যস্ত’ শিরোনামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মন্তব্য করে আবারও আলোচনায় এসেছেন নাজনীন আলম। তিনি ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। এ মন্তব্যে ইতোমধ্যে লাইক ও লাভ রিয়েক্ট করেছেন সাত হাজার ৭০০ জনের ওপরে, শেয়ার করেছেন ৪৫ জন এবং মন্তব্য করেছেন ৭৫০ জন।

এর আগে ‘আমার ফাঁসি চাই’সহ বিভিন্ন শিরোনামে একাধিক মন্তব্য করে দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় তোলেন। এ ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে আ.লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নিকট থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা লুটে নেওয়া এবং নৌকা পাওয়ার জন্য টাকা খরচ না করে টাকার বিনিময়ে বিকল্প পথে বিজয় অর্জনের দিকেই প্রার্থীদের ঝোঁক বেশি ছিল, এমন বিস্ফোরক তথ্য দিয়ে দেশজুড়ে আলোচিত হয়ে উঠলেন এ নারী নেত্রী।

১৪ জুলাই রাত ১১টা ১২ মিনিটে নাজনীন আলম তার নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে যা লিখেন পাঠকের জন্য তা হুবহু তুলে ধরা হলো— ‘নিজেদের আখের গোছাতে আমরা অনেকেই ব্যস্ত! দীর্ঘ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। অথচ হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া আমার নির্বাচনি এলাকা ১৪৮ ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর)-এর দলীয় নেতাকর্মী ও জনগণ আজ চরমভাবে বঞ্চিত এবং উপেক্ষিত! পর্যাপ্ত উন্নয়ন বরাদ্দ পেতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের দিকে তাকানোর সময়টুকুও আমাদের নেই।

এমনকি সুযোগ পেলে নেতাকর্মীদের রক্ত চুষে খেতেও আমরা দ্বিধা করি না। আমাদের কুকর্মে গৌরীপুরবাসী ও আওয়ামী লীগ লজ্জিত। পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন ও নামে-বেনামে সম্পদ অর্জনই আমাদের লক্ষ্য। নেত্রী শেখ হাসিনার আস্থা ও বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে আমরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছি। সরকার এত ভালো কাজ করার পরও দলীয় নেতাকর্মী ও গৌরীপুরবাসী আজ হতাশ, ক্ষুব্ধ ও বেদনাহত। জননেত্রী শেখ হাসিনা কাউকেই ছাড় দেন না।

এ মন্তব্যের নিচে কমেন্টে গৌরীপুর উপজেলার অচিন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই লিখেছেন— ‘কিছু কিছু আসনের এমপি মহোদয়েরা তাদের আখের গোছাতে এতই ব্যস্ত যে কে আওয়ামী ফ্যামিলির আর কে জামাত-বিএনপির এদিকে তাদের নজর দেওয়ার সময় নেই। পরিবারের জন্য লেক্সাস অথবা প্রাডো, পাজেরো গাড়ি পরিবারের সদস্যদের উপহার দিয়ে পরিবার তুষ্টি করতেছে। এ দেশের এমপিদের বেলায় দুদক কেন নীরব? সাধারণ মানুষ কেন নীরব? গৌরীপুরের আওয়ামী লীগের লোকজন এতটাই অসহায় যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। নব্য আওয়ামী লীগ অথবা বহিরাগত আওয়ামী লীগে টইটম্বুর।

কিছু লোকের শুধু মুখে মুখে গৌরীপুর উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে। কোথায় যে উন্নয়ন একমাত্র তারাই বলতে পারবে। হায়রে গৌরীপুরের মানুষ। যাকেই একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছে তাদের মুখেই উন্নয়নের জোয়ার। গৌরীপুরের মানুষকে তারা বানাচ্ছে বোকা। স্কুল-কলেজ এবং মাদ্রাসার উন্নয়ন অর্থাৎ ভবনের রূপান্তরিত এগুলো আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিক কার্যক্রম। সারা দেশেই চলছে এবং চলবে।

আরেকজন ভিপি দুলাল বর্মণ লিখেছেন— ‘শুধু গৌরীপুর নয়, সারা বাংলার তৃণমূল নেতাকর্মীদের অবস্থা একই রকম। বুক ভরা ব্যথা আর কষ্ট নিয়েই তারা বেঁচে আছে। তাদের দেখার কেউ নেই। মুখে আছে বাস্তবে ভিন্নচিত্র। মানবতার মা দেশরত্ন জননেত্রী বিশ্বনেতা শেখ হাসিনাই পারেন এ সমস্যার সমাধান করতে। জয়বাংলা।’ গৌরীপুরের আ.লীগ নেতা ফয়জুল হক শেখর লিখেছেন— ‘ভাবি, আপনাকে ধন্যবাদ। সারা দেশের নিপীড়িত, নির্যাতিত, বঞ্চিত ও নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের পক্ষে আপনি সঠিক কথাই বলেছেন।’

আরেক ফেসবুক ফ্রেন্ড মো. জামাল উদ্দিন মন্তব্য করেছেন— ‘বতর্মান সময়ে দলের বড় বড় নেতা তাদের কর্ম নিয়ে ব্যস্ত আর টাকার পাহাড় করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, তাদের সাধারণ জনগণ আর কর্মীর খবর রাখার সময় নেই। গৌরীপুর উপজেলা শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. বিল্লাল হোসেন লিখেছেন— ‘ম্যাডাম আওয়ামী লীগের দলের যে অবস্থা সরকার এত কিছু দেওয়ার পরও আমাদের গৌরীপুরের উন্নয়নের জোয়ার কম কেন আজকে আওয়ামী লীগের অনেক নেতৃবৃন্দ আছে অসহায় সহায়ক হবে কবে বিরোধী দলের সময়?।’

ফেসবুক আইডি মাহমুদুল হাসান রতন লিখেছেন— ‘আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় টানা তিনবার। আজ তৃণমূল যতটুকু অবহেলিত, বিরোধী দলে থাকাকালীনও এতটা অবহেলিত ছিল না। তখন মনে উৎসাহ ছিল। আজ উৎসাহটুকুও নেই। কারণ বৈষম্য। ওপরতলার নেতাদের কাছে তৃনমূলের কর্মীরা পিঁপড়ার মতো। ওপরতলা থেকে তাদের খালি চোখে দেখা যায় না। এমনকি মনে হয় তৃণমূল কর্মীদের আর প্রয়োজন নেই। আর আমরা তৃনমূল হলাম নির্লজ্জ বেহায়া। কারণ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আমাদের নির্লজ্জ ও বেহায়া বানিয়েছে। জয়বাংলা স্লোগান শুনলে আর ঠিক থাকতে পারি না। আমাদের এই আবেগকে পুঁজি করে এমপি, মন্ত্রী, সিটি মেয়র, পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ও হাইপ্রোফাইলের নেতাসহ উচ্চ শ্রেণির আমলাদের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। আর আমরা অবহেলিত ছিলাম, আছি এবং আগামী দিনেও থাকব। তবু জয়বাংলা-জয়বঙ্গবন্ধু।’

আরেকজন মোবারক হোসেন পান্না লিখেছেন— এ সমস্যা সব জায়গায় আপা শুধু গৌরীপুরেই নয়! দুঃসময়ের ত্যাগী, পরিশ্রমী সাবেক ছাত্রনেতারা আজ পদপদবি বঞ্চিত, ভালো আছে— চামচা, চাটুকার আর হাইব্রিডরা। আপনার জন্য দোয়া রইল আপা। এমন অসংখ্য মন্তব্য নাজনীন আলমের পোস্টকে সমর্থন দিয়েছে।

আরও খবর: সারাদেশ