সারাদেশ

তিন মাস পর পুরাতন রোগী নতুন হবে, এমন ডাক্তার হতে চাই না

  নীলাকাশ টুডেঃ ১৫ মার্চ ২০২৩ , ১:১৯:০৯ প্রিন্ট সংস্করণ

 

মায়ের স্বপ্ন ছিল ছেলে বড় হয়ে হবে নামকরা ডাক্তার। পরনে জড়াবে সাদা এপ্রোন, কাজ করে যাবে মানব সেবায়। কিন্তু ছেলের ইচ্ছে ছিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। তবে মায়ের স্বপ্নের কাছে নিজের সেই ইচ্ছে টুকু ছিল ভীষণ তুচ্ছ। তাইতো ইঞ্জিনিয়ারিং প্রস্তুতি ফেলে মায়ের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে গেলেন আসিফ রহমান নিহাল। ফলাফলে চমকে দিয়েছেন পরিবারসহ দেশবাসীকে। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় সারাদেশে দ্বিতীয় হয়েছেন তিনি। এর মাধ্যমে মায়ের স্বপ্ন পূরণে এক ধাপ এগিয়ে গেলেন তিনি।

নিহালের পৈত্রিক ভিটা নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার আগিয়া ইউনিয়নের আগিয়া গ্রামে। তার বাবা মিজানুর রহমান সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। মা আফরোজা বেগম ময়মনসিংহের ফুলপুর মহিলা কামিল মাদরাসার জীববিজ্ঞানের প্রভাষক। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় নিহাল। তার ছোট ভাই নাহিন রহমান দশম শ্রেণিতে এবং বোন মাহজাবিন নাশিত চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে।

ময়মনসিংহ নগরের কৃষ্টপুর দৌলতমুন্সি সড়ক এলাকায় নিজেদের বাসায় থাকে নিহালের পরিবার। সেখানে গিয়ে কথা হয় নিহালের সঙ্গে। তিনি জানান, ফুলপুরের একটি স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু হয় তার। সেখান থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন ময়মনসিংহ নগরীর গভমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে জিলা স্কুলে। জিলা স্কুল থেকে এসএসসি শেষ করে আনন্দ মোহন কলেজ থেকে শেষ করেন এইচএসসি।

এসএসসি ও এইচএসসি- দুটিতেই জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি। বন্ধুদের সঙ্গে শুরুতে ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তির প্রস্তুতি শুরু করলেও মায়ের ইচ্ছার কারণেই মেডিকেল প্রস্তুতি নেন নিহাল। বাবা-মা দুজনের চাকরির সুবাদে তারা দূরে থাকলেও ভাটা পড়েনি নিজের চেষ্টা-সাধনায়। বাবা-মায়ের কষ্ট ও পরিশ্রমকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে নিজেকে নিজেই তদারকি করেছেন নিহাল।

দ্বিতীয় দেশসেরা হয়ে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আসিফ রহমান নিহাল বলেন, আমার মা ছোটবেলা থেকেই চাইতেন আমি যেন ডাক্তার হই। বাবাও চাইতেন। কিন্তু তিনি চাপিয়ে দেননি। আমারও ভালো লাগতো ডাক্তারদের জীবনধারা। সেখান থেকেই আসলে এই দিকে মনোনিবেশ করেছি।

 

তিনি বলেন, উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। পাশাপাশি মেডিকেলের প্রস্তুতিও শুরু করি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে মেডিকেল কোচিংয়ে উপস্থিত হয়ে করা হয়নি। এইচএসসির পর ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি পরীক্ষার তারিখ পিছিয়ে যাওয়ায় বাড়তি সময় পেয়েছি। সেজন্য মেডিকেল প্রস্তুতি ভালোভাবে নেওয়া গেছে। যার কারণে এই ফলাফল।

দেশের নামকরা অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে পেছনে ফেলে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখা আসিফ রহমান নিহাল বলেন, পড়াশোনার ক্ষেত্রে আমি নিয়মনিষ্ঠা ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। আমি মনে করি, এসএসসি এবং এইচএসসিতে যেকোনো স্কুল-কলেজ থেকে পড়ে ভালো রেজাল্টের পাশাপাশি আগে থেকেই মেডিকেলে পড়ার ভাবনা থাকলে চান্স পাওয়া সম্ভব। তবে একজন শিক্ষার্থীকে মেডিকেলে ভর্তির জন্য দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা পড়া প্রয়োজন। তবে সেই পড়াটা যেন কার্যক্ষম হয়। আমি প্রচুর প্রশ্নের সমাধান করেছি। এছাড়া মাথা ঠাণ্ডা করে পরীক্ষার হলে বুঝে-শুনে উত্তরপত্রের জবাব লিখতে পারলে সফল হওয়া সম্ভব।

কেমন ডাক্তার হতে চান, এমন প্রশ্ন করতেই নিহালের জবাব, আমি মানবিক ডাক্তার হবো। তিন মাস পর পুরাতন রোগী নতুন বলে বিবেচিত হবে, এমন ডাক্তার আমি হতে চাই না। প্রকৃত অর্থে আমি মানুষের সেবা করতে চাই। ট্যালেন্ট হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত একটি উপহার। আর মানুষকে মানবিকতার সঙ্গে দেখা, সেটি হচ্ছে চয়েজ। রোগীদের মানবিকতার সঙ্গে ট্রিট করতে হবে, যেন তারা মনে রাখে। আমি তেমনটাই হতে চাই।

নিহালের চাচা ডা. ওয়াহিদুর রহমান ছোটন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের নিউরোলজী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। চাচাকে দেখিয়ে ছেলেবেলা থেকেই ডাক্তার হওয়ার জন্য নিহালকে প্রেরণা যোগাতেন মা। অবশেষে সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় উচ্ছ্বসিত তিনি।

নিহালের মা আফরোজা বেগম বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল নিহাল ডাক্তার হবে। ভালো মনের মানুষ হবে, গরিব অসহায় মানুষের পাশে থাকবে, চিকিৎসা দেবে। এই প্রত্যাশাটুকুই আমার ছিল। সৃষ্টিকর্তার রহমতেই এর পথচলা শুরু হলো। আশাকরি সে ভবিষ্যতে মানুষের সেবা করবে।

নিহালের বাবা মিজানুর রহমান বলেন, ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় খুবই মনোযোগী ছিল নিহাল। তার মতো মেধাবী আমার অন্য ছেলে মেয়েও। কখনো তাদের পড়াশোনার জন্য চাপ দিইনি। সবসময় বলতাম তোমরা ভালো মানুষ হও। আলোকিত কর সমাজ। নিহাল ভালো মানুষের পাশাপাশি একজন ভালো চিকিৎসক হয়ে দেশ ও সমাজের কাজে আসবে, এটাই আমার চাওয়া।

আরও খবর: সারাদেশ