সারাদেশ

জাতীয় পত্রিকা বলে কিছু নেই

  প্রতিনিধি ২৬ নভেম্বর ২০২২ , ৬:৩৯:৫৩ প্রিন্ট সংস্করণ

নীলাকাশ টুডেঃ স্মরণে শ্রদ্ধায় ভালোবাসায় সাতক্ষীরায় প্রয়াত সাংবাদিক সুভাষ চৌধুরীর নাগরিক শোক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২৬ নভেম্বর) সকালে সাতক্ষীরা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এ শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। শোকসভা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, দৈনিক পত্রদূতের উপদেষ্টা সম্পাদক ও চ্যানের আই’র সাতক্ষীরা প্রতিনিধি আবুল কালাম আযাদের সভাপতিত্বে এবং শোকসভা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব মানবাধিকার কর্মী মধাব চন্দ্র দত্তের সঞ্চলনায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক।

তিনি বলেছেন, সাংবাদিকতা করতে সাহস লাগে। ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। আমি যখন দৈনিক বাংলায় ছিলাম তখন থেকেই সাংবাদিক সুভাষ চৌধুরীর সাথে আমার পরিচয়। আমি এ জনপদের তিনজন সাংবাদিককে খুব ভালো করে চিনতাম। খুলনার মানিক সাহা, সাতক্ষীরার সুভাষ চৌধুরী এবং যশোরের শামসুর রহমান কেবল। তাঁরা আপামর মানুষের জন্য কাজ করেছেন।
ওমর ফারুক বলেন, সাংবাদিকতার বর্তমান যে অবস্থা তাতে এ পেশার ভবিষ্যত নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন। তবে আমরা আশাবাদী, আমরা সরকারকে প্রস্তাবনা দিয়েছি। প্রস্তাবনাটি পাশ হওয়ার অপেক্ষায় আছে। কিছু আইন আমাদের বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করতে দিচ্ছে না।

১৭৮১ সালে সাংবাদিকতায় যে প্রতিবন্ধকতা ছিল তা আজও আছে। এসব প্রতিবন্ধকতাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে আমরা এদেশকে সবাই মিলে গড়ে তুলবো। সাংবাদিক সুভাষ চৌধুরীর সততা ও সাহসীকতার জন্য আমরা ঢাকা থেকে এসেছি। তাঁর নীতি ও আদর্শ অনুকরণীয় থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি।  বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেছেন, যারা ভালো সাংবাদিকতা করেন তাদের মধ্যে সুভাষ চৌধুরী একজন। যারা উচ্চৈঃস্বরে কথা বলে তাদের মূল্যায়ন বেশি হয়। আর যারা আস্তে আস্তে কথা বলে তারা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হয়। তিনি বলেন, চীন ও জাপানিরা আস্তে আস্তে কথা বলে এজন্য তারা সম্পদশালী। আমাদের দেশে শ্রমিকরা উচ্চৈঃস্বরে কথা বলে, এজন্য সরকার তাদের বেশি মূল্যায়ন করে। সুভাষ চৌধুরী আস্তে কথা বলতেন। তিনি ছিলেন প্রচার বিমুখ। তাই বলে তিনি দুর্বল ছিলেন না। ১৯৭৩ সালে তিনি চ্যালেঞ্জ নিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেছিলেন। ১৯৫০ সালে যিনি দেশত্যাগ করলেন না, ১৯৮৮ সালে বঙ্গভূমি আন্দোলনের জন্য তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সুভাষ চৌধুরী কাজ পাগল মানুষ ছিলেন। সাংবাদিকদের সাথে পরিবারের সম্পর্ক থাকে না। সাংবাদিক সুভাষ চৌধুরীর সাথে এক বিশাল জগতের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই স্মরণ সভা তার সাক্ষী। সুভাষ চৌধুরী সমাজ বদলের সাংবাদিকতা করেছেন। ভূমিহীন আন্দোলন করেছেন। পরিবেশ সুরক্ষায় আন্দোলন করেছেন। যে ভালো মানুষটি চলে যায় তাকে শ্রদ্ধা জানাতে অনেকগুলো মানুষ একত্র হয়।
সাংবাদিকরা তাদের পরিবারের জন্য নিউজ করেন না। তারা দেশ, জাঁতি ও সমাজের জন্য নিউজ করেন। সাংবাদিকরা সম্মানের জন্য কাজ করেন। সাংবাদিক সুভাষ চৌধুরীও সেটাই করেছেন। তার নীতি ও আদর্শ থেকে শিক্ষা নিয়ে তা নিজেদের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে। সাংবাদিক সুভাষ চৌধুরীর সততা নীতি ও আদর্শ আমাদের সবার জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।

বিএফ ইউজে’র সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল আরো বলেন, সাংবাদিকতা বিষয়ে আইন আছে। নির্যাতনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় ২০২১ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। ‘আইন ছিল, আইন নাই। নতুন আইন আছে।’ আইন মন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, আইনমন্ত্রী বলেছিলেন এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিকদের উপর প্রয়োগ হবে না। যদি এই আইন কোন সাংবাদিকের উপর প্রয়োগ হয় তাহলে আমি নিজেই তার পক্ষে দাঁড়াবো।’ অথচ দেশের অনেক সাংবাদিকের উপর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ করা হয়েছে। আইন মন্ত্রী কোন সাংবাদিকের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন তা আমার জানা নেই। সড়ক পরিবহন আইন আছে, অথচ তা প্রয়োগ করা হয় না।
মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, সাংবাদিকতা চ্যালেঞ্জিং পেশা। এপেশায় কোন দল নেই। জাতীয় পত্রিকা বলে কিছু নেই। জাতীয় সাংবাদিক বলে কিছু নেই। কেননা ‘সাংবাদিকতায় জাতীয়তা’ বলে কিছু নেই। সাংবাদিকদের কোন বর্ডার নেই। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, আইলা, সিডর, আম্পান এগুলো তো জাতীয় ইস্যু নয়, এগুলো আন্তর্জাতিক ইস্যু। সাতক্ষীরা উপকূলীয় জেলা হিসেবে এ অঞ্চলের অনেক ইস্যু আন্তর্জাতিক। এসব ইস্যু নিয়ে ঢাকায় বসে রিপোর্ট করা যায় না। তিনি বলেন, সাংবাদিকদেরকেই সাংবাদিকতাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সাংবাদিকতার জন্য আমাদের সকলকে এক হতে হবে। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক এমপি ইঞ্জি: মুজিবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ ইফতেখার আলী, সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাসকিন আহমেদ চিশতি, কালের কণ্ঠের খুলনা ব্যুরো প্রধান গৌরাঙ্গ নন্দী, এনটিভির খুলনা প্রতিনিধি আবু তৈয়ব মুন্সি, একাত্তর টিভি’র পলাশ আহসান, বিএফইউজে নেতা কৌশিক দে, শাকিলা পারভীন, নিখিল ভদ্র, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ বাসুদেব কুমার বসু, প্রয়াত সুভাস চৌধুরীর সহধর্মিনী মিনতি রানী চৌধুরী, সাংবাদিক রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী, সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ও দৈনিক পত্রদূতের সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি মো: আনিসুর রহিম, অধ্যক্ষ (অব:) আবদুল হামিদ, দৈনিক দৃষ্টিপাত পত্রিকার সম্পাদক জিএম নূর ইসলাম, দৈনিক কালের চিত্রের সম্পাদক অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সর্বশেষ নির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সুজন, সাতক্ষীরা সাংবাদিক ঐক্য’র সদস্য সচিব শরফুল্লাহ কায়সার সুমন, সাংবাদিক আবুল কাশেম প্রমুখ।

আরও খবর: সারাদেশ