সারাদেশ

জমি লিখে নিয়ে মাকে বাড়ি ছাড়া করল ছেলে

  লালমনিরহাট প্রতিনিধি ২২ আগস্ট ২০২৩ , ৫:৫৪:১৫ প্রিন্ট সংস্করণ

লালমনিরহাটের আদিতমারীতে জমি-জমা কৌশলে লিখে নিয়ে মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন ছেলে ও পুত্রবধূ। হতভাগা মা বাধ্য হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ।

বৃদ্ধা মা তছিরন বেওয়া (৭৫) আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের উত্তর গোবদা গ্রামের মৃত আনছার আলীর স্ত্রী। অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন (৫৫) তারই একমাত্র ছেলে ও ছেলের বউ আম্বিয়া (৪৮)।

অভিযোগে জানা গেছে, জন্মের পর থেকেই বাবা-মাকে হারিয়ে অন্যের আশ্রয়ে বড় হয়ে উত্তর গোবদা গ্রামের আনছার আলীর সাথে বিয়ে হয় তছিরনের। এক ছেলে, এক মেয়ে রেখে দীর্ঘ ৫০ বছর আগে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে স্বামী আনছার আলী মারা যান। অন্যের বাড়িতে ঝিঁয়ের কাজ করে মাত্র ৬ মাস বয়সী মেয়ে আনিছা ও ৩ বছর বয়সী ছেলে আনোয়ার হোসেনকে একা লালনপালন করেন মা তছিরন। ছেলেমেয়ের কথা চিন্তা করে নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে সন্তানদের মুখ দেখে কাটিয়ে দেন যৌবন।

দীর্ঘদিন অন্যের জমিতে বসবাস করে ছেলেমেয়ের বিয়ের পর পৈতৃক সূত্রে ৫৪ শতাংশ জমি পান তছিরন বেওয়া। ফলে সেই জমিতে শেষ বয়সে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয় তার। সেই জমিই কাল হয়ে দাঁড়ায় বৃদ্ধার। বাড়ি করার জন্য ১১ শতাংশ জমি ছেলে আনোয়ার হোসেনকে এবং চাষাবাদের জমির ১৫ শতাংশ মেয়ে আনিছাকে দলিল করে দেন বৃদ্ধা। বাকি জমিতে আসা ফসল আর বয়স্কভাতার টাকায় চলত তার সংসার খরচ। ছেলে ও ছেলের বউ আম্বিয়ার কোনোরকম সহযোগিতা না পেয়ে নিজে রান্না করে খেতেন বৃদ্ধা।

গত ১০ মাস আগে ছেলে আনোয়ার হোসেন চাষাবাদের বাকি ২৮ শতাংশ জমি মায়ের কাছ থেকে দলিল করে নেন। এরপর মায়ের ওপর অত্যাচার বাড়িয়ে দেন। খোঁজখবর নেওয়া বন্ধ করে দেন। উল্টো বিগত দিনে চিকিৎসা বাবদ মায়ের পেছনে খরচ হওয়া ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। সম্বলহীন বৃদ্ধা তছিরন সেই টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ৪ মাস আগে তাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন ছেলে আনোয়ার ও ছেলের বউ আম্বিয়া।

নিরুপায় হয়ে একমাত্র মেয়ে আনিছা বেগমের বাড়িতে পাড়ি জমান বৃদ্ধা তছিরন। সেই থেকে মেয়ে জামাই তার সব দেখভাল করছেন। বৃদ্ধা মাকে স্থান দেওয়ায় বোনের ওপর ক্ষিপ্ত হন ভাই আনোয়ার ও তার স্ত্রী।

বিগত দিনের মতো এ বছরও মায়ের কাছ থেকে পাওয়া ১৫ শতাংশ জমিতে আমন ধান রোপণ করেন আনিছা। গত শনিবার (১৯ আগস্ট) সেই জমিতে সার দিতে গেলে বাধা দেন আনোয়ার। দাবি করেন, মায়ের চিকিৎসা করাতে খরচ হওয়া সেই ২০ হাজার টাকা না দিলে জমিতে নামতে পারবে না। বৃদ্ধা তছিরন মেয়ের বাড়িতে থাকেন তাই তার পাওনা টাকা মেয়ে আনিছাকেই পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় জমিতে নামতে পারবে না।

এদিকে চিকিৎসায় খরচ বাবদ ২০ হাজার টাকা ছাড়া বাড়ি ফিরলে বৃদ্ধা তছিরনকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন ছেলে আনোয়ার। এ ঘটনায় বৃদ্ধা তছিরন ভরণপোষণ ও তার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ছেলে ও ছেলের বউ এবং দুই নাতির বিরুদ্ধে গত ২০ আগস্ট আদিতমারী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

বৃদ্ধার মেয়ে আনিছা বেগম বলেন, মাকে কখনোই মা বলে ডাকেনি ভাই আনোয়ার। বিয়ের কিছুদিন পরেই বউয়ের কথামতো মাকে মারধর করেছিল। তখন গ্রামবাসী তাকে শাসনও করেছিল। এখন মায়ের জমি লিখে নিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আমি আশ্রয় দিয়েছি। এ জন্য মায়ের কাছে পাওনা ২০ হাজার টাকা আমাকে পরিশোধ করতে বলে। টাকা না দেওয়ায় আমাকে জমিতে নামতে বাধা দেয়।

বারবার আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বৃদ্ধা তছিরন বলেন, বউয়ের কথামতো ছেলে অনেক নির্যাতন করেছে। বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে আমার ঘরে তালা দিয়েছে। পরিচয়পত্র নিতে গেলেও আমাকে দেয়নি। এখন চিকিৎসা করানোর ২০ হাজার টাকা না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। বৃদ্ধ বয়সে সবাই সন্তানদের আশ্রয়ে নিরাপদ থাকে। আমার ক্ষেত্রে উল্টো। সন্তানেই এক কাপড়ে বাড়ি ছাড়া করেছে। আমি ন্যায় বিচার চাই।

আদিতমারী থানার ওসি মোজাম্মেল হক বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও খবর: সারাদেশ