সারাদেশ

খুন না দুর্ঘটনা রহস্যের জালে পুলিশ

  নীলাকাশ টুডেঃ ১৩ এপ্রিল ২০২৩ , ২:৩৫:৪৬ প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া কলেজছাত্র নাফিজ রহমান নয়নের (১৯) লাশ পাওয়া যায় পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায়। পুলিশের দাবি, তারা এই ঘটনার কিছু ক্লু নিয়ে কাজ করেছেন, কিন্তু কিছু পাননি। এক মাস পরও ঘটনার নেপথ্য কোনো রহস্য উদঘাটন করতে পারেননি তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। এটি খুন না রেল দুর্ঘটনা সেই রহস্যের বেড়াজালে আটকে আছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাফিজ রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল ও কলেজের এইচএসসির দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র ছিলেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি মিরপুর-১৪ নম্বরে বন্ধুর বাসায় যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর আর ফিরে আসেননি। পরে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ভাঙ্গুড়ার কৈডাঙ্গা রেল ব্রিজের নিচ থেকে নাফিজের লাশ উদ্ধার হয়।

এ ঘটনায় গত ৭ মার্চ ভাঙ্গুড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নাফিজের বাবা ইকবাল হোসেন।

ইকবালের অভিযোগ, ট্রেনের টিকিট কেনা নিয়ে একটা ঝামেলা থেকে ঢাকায় সোহাগ নামে একজন তার ছেলেকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। আর তাদের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের অনিক নামে এক ছেলের সঙ্গেও দ্বন্দ্ব ছিল। তার সন্দেহ অনিক এই হত্যায় জড়িত থাকতে পারে।

অনেক তথ্য ও ক্লু দেওয়ার পরও পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি বলেও অভিযোগ করেন ইকবাল।
নাফিজের লাশ উদ্ধারের পর পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। লাশের ময়নাতদন্ত করেন ডা. শবনম শারমিন। গত সপ্তাহে তিনি ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পুলিশকে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

মামলার এজাহারে ইকবাল উল্লেখ করেছেন, নাফিজ ষষ্ঠ থেকে এসএসসি পর্যন্ত শাহজাদপুরের দ্বারিয়াপুরে পড়ালেখা করেছে।

দ্বারিয়াপুরের একটি মেয়ের সঙ্গে তার তিন বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। মাঝে মাঝে এই মেয়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য ঢাকা থেকে দ্বারিয়াপুর গ্রামে যেত। আর দ্বারিয়াপুর গ্রামে থাকাকালীন নাফিজ ফ্রি ফায়ার অনলাইন গেমের আইডি কেনাবেচা করত। এই আইডি কেনাবেচা নিয়ে অনিকসহ ৪/৫ জনের সঙ্গে তার বিরোধ ছিল। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কয়েকটি মোবাইল নম্বর থেকে তাকে ফোন দিয়ে তার ছেলে নাফিজের খোঁজ নেয়। তখন তিনি তাদের বলেন, ‘কেন খোঁজাখুঁজি করছো। ’ তারা বলে, ‘আমরা টাকা পাব, টাকা দেয় নাই, আমরা তাকে পেলে মেরে ফেলবো। ’ এসব বলে হুমকি দিয়ে ফোন কেটে দেয়। আবার গত ১৯ ফেব্রুয়ারি অনিকসহ কয়েকজন নাফিজের খোঁজ নেওয়ার জন্য তাদের গ্রামের বাড়ি শাহজাদপুরের রাউতারাতে যায়। তারা তার ছেলেকে না পেয়ে বাড়ির দরজা, জানালায় আঘাত করে। তার বৃদ্ধ বাবা-মার সামনে বলে আসে- ‘নয়নকে পেলে তাকে মেরে বস্তাবন্দি করে ব্রিজের নিচে ফেলে রাখব, প্রয়োজনে ২ লাখ টাকা জরিমানা দিব। ’ এসব গালিগালাজ করে চলে যায়। এজাহারে ইকবাল বলেছেন, খবর পেয়ে যখন তিনি তার ছেলের লাশ দেখতে যান তখন লাশের ডান চোয়ালে আঘাতের কালো দাগ, থুঁতনিতে ধারালো অস্ত্রের কাটা দাগ, বুকের ডান পার্শ্বে হাড় ভাঙা, বাম হাতের বাহুর হাড় ভাঙা, মাথার পেছনে ঘাড়ের নিচে আঘাতের কালো দাগ, বাম পায়ের হাঁটুর নিচে ভাঙা। এ ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কালো-লালচে দাগ দেখতে পান তিনি। এসব বিষয়ে পাবনার ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকো বলেন, মামলার বাদী প্রথমে ভুল তথ্য দিয়ে আমাদের বিভ্রান্ত করেছেন। আমরা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেয়েছি। সেই রিপোর্ট এবং পারিপার্শ্বিক তথ্য বিশ্লেষণে আমাদের এখন পর্যন্ত মনে হয়েছে, ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে নাফিজের মৃত্যু হয়েছে। তবে এখনো তদন্ত চলমান রয়েছে, আমরা আরও গভীর ভাবে তথ্য যাচাই-বাছাই করছি।

আরও খবর: সারাদেশ