সারাদেশ

অভয়নগরে গলাকাটা হত্যা যুবকের রহস্য উন্মোচন অঃপর দুই জন আটক

  প্রতিনিধি ১৬ জানুয়ারি ২০২৩ , ৫:০২:২২ প্রিন্ট সংস্করণ

 

আঃজলিল, স্টাফ রিপোর্টার:

যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার দেয়াপাড়া ভৈরব ব্রীজ সংলগ্ন ভৈরব নদীর তীরে হত্যা করে মৃত্যু দেহ ফেলে রাখার রহস্য উদঘাটন সহ দুই ঘাতককে আটক করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃত শান্ত ও সাকিব স্যালো মেশিন চুরি করার প্রলোভন দেখিয়ে অভয়নগর ভৈরব নদের খেয়াঘাট পার করে ব্রীজের কাছে সরিষা ক্ষেতে নিয়া জবাই ও স্ট্যাপ করে হত্যা করে লাশ ফেলে দিয়ে হত্যাকাজে ব্যবহৃত চাকু বেঙ্গল টেক্সাটাইল মিলের ওয়ালের পাশে পুতে রাখে ও রক্তমাখা কাপড় ভৈরব নদীতে ফেলে দেয়।

এ সময়ে তার কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু জব্দ করেছে পুলিশ।আটকের পর এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন যশোর অভয়নগর থানা ও জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

সোমবার (১৬ই জানুয়ারি ২০২৩) বেলা পৌনে দুইটার সময় অভয়নগর উপজেলার নর্থ বেঙ্গল এলাকায় অভয়নগর থানা ও যশোর জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের যৌথ একটি টিম অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করেন।

আটককৃতরা হলেন, নড়াইল জেলার সদর উপজেলার যদুনাথপুর গ্রামের সাখাওয়াত মোল্লার ছেলে শান্ত (২১) ও একই এলাকার ছবুর মোল্লার ছেলে সাকিব মোল্যা (২১) ।

উল্লেখ্য, গতকাল ১৫ জানুয়ারী ২০২৩ তারিখ বিকাল ৩:১৫ টার দিকে যশোর অভয়নগর থানার দেয়াপাড়া গ্রামের ভৈরব ব্রীজের ৩৫০ গজ দক্ষিনে সরিষা ক্ষেতের মধ্যে অজ্ঞাত পুরুষ বয়স অনুমান ২৫ যুবকের লাশ পাইয়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট। প্রযুক্তির সহায়তায় অজ্ঞাত যুবকের মৃতদেহের সনাক্ত করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে একপর্যায়ে মৃতদেহের পকেটে থাকা চিরকুট ( যাহাতে মোবাইল নম্বর ছিল) পাইয়া মোবাইল নম্বরের ব্যক্তিকে সনাক্ত করা হয়। প্রথমে তার সনাক্ত পরে সনাক্তকৃত ফরিদের পরিবারের লোকজনের মাধ্যমে সনাক্ত করা হয়। জানা যায় তার নাম ফরিদ গাজী (২৫), পিতামৃত- আফিল উদ্দিন গাজী, সাং- অর্জুনপুর, থানা- কয়রা, জেলা- খুলনা এ/পি- গুয়াখোলা,(শাহীমোড়, জেলেখা এর বাড়ীর ভাড়াটিয়া) থানা-অভয়নগর, জেলা-যশোর।

তার পিসি/পিআর যাচাইকালে দেখা যায়, তার বিরুদ্ধে ১টি ধর্ষণ মামলাসহ একাধিক চুরি মামলা রয়েছে। ঘটনার পরের দিন অর্থাৎ ১৬ ই জানুয়ারি সকালে এ সংক্রান্তে অজ্ঞাত লোকের বিরুদ্ধে নিহতের ভাই ফারুক অভয়নগর থানায় লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করেন।

যশোর জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অফিসার ইনচার্জ রুপণ কুমার সরকার বলেন, হত্যাকান্ড টি চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হওয়ায় জেলার পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, বিপিএম (বার), পিপিএমের নির্দেশে মাঠে নামে থানা ও ডিবি পুলিশ। অভয়নগর থানার পুলিশ ও ডিবি যশোরের এলআইসি টিম ১৬ই জানুয়ারি তে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান শেষে আসামীদের সনাক্ত করেন। এরপর বেলা ১৩:৪৫ টার দিকে অভয়নগর থানার নর্থ বেঙ্গলে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত দুই জনকে আটক করেন। তাদের স্বীকারোক্তি মতে হত্যাকাজে ব্যবহৃত একটি ধারালো চাকু উদ্ধার করেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভিকটিম ফরিদ ও আসামী শান্ত জেল হাজত থেকে পরিচিত হয়। পরে ফরিদের ডাকে নড়াইল থেকে শান্ত ও সাকিব কাজের সন্ধানে অভয়নগর আসে। নর্থ বেঙ্গলে একটি বাসার একটা কক্ষ ভাড়া নিয়ে সেখানে ২২শে ডিসেম্বর ২০২২ তারিখ হতে বসবাস করে জাহাজের স্কট পার্টি হিসেবে কাজে নিয়োজিত থাকতো। স্কট পার্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যে টাকা উপার্জন করেছিলো সে টাকা শান্ত ও সাকিবের হাতে না দিয়ে ফরিদ তাদেরকে হোটেলে খাওয়া দাওয়া বাবৎ কেটে নেয়। পরে সেই টাকা চাইতে গেলে ফরিদ উল্টো তাদের উপর চড়াও হয় এবং ফরিদের দেওয়া শীতবস্ত্র পরিধান করায় প্রতিদিন ২০০ টাকা করে চায়। এই নিয়ে বাকবিতন্ডা হয়। ফরিদ কাজের অবসরে বিভিন্ন সময় ছিসকা চুরি করতো। একপর্যায়ে আসামী শান্ত ও সাকিব স্যালো মেশিন চুরি করার প্রলোভন দেখিয়ে খেয়াঘাট পার হয়ে ব্রীজের কাছে সরিষা ক্ষেতে নিয়া গলা চাকু দ্বারা পোচ দিয়ে জবাই ও স্ট্যাপ করে হত্যা করে লাশ ফেলে দিয়ে হত্যাকাজে ব্যবহৃত চাকু বেঙ্গল টেক্সাটাইল মিলের ওয়ালের পাশে পুতে রাখে ও রক্তমাখা কাপড় ভৈরব নদীতে ফেলে দেয়।

 

আরও খবর: সারাদেশ