কাঁকড়া অতি পরিচিত একটি জলজ প্রাণী। বিভিন্ন দেশে এটি অনেকের কাছে সুস্বাদু ও প্রিয় খাবার। তবে সম্প্রতি এই কাঁকড়া নিয়ে অত্যন্ত ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়েছে এক জাপানি নারী পর্যটকের।
জানা গেছে, সম্প্রতি বন্ধুদের সাথে সিঙ্গাপুরে ঘুরতে গিয়েছিলেন জুনকো শিনবা নামের ওই জাপানি পর্যটক। সেখানকার এক রেস্তোরাঁয় খাবারের বিল দেখে একেবারে বাকরুদ্ধ হয়ে যান তিনি।
কাঁকড়ার মতো সুস্বাদু ওই ডিশ খাওয়ার জন্য তাকে ৯৩৮ সিঙ্গাপুর ডলার তথা ৬৮৬ মার্কিন ডলারেরও বেশি বিল ধরিয়ে দেয় হোটেল কর্তৃপক্ষ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭৫ হাজার ৩০০ টাকারও বেশি। বিল দেখে চোখ ছানাবড়া ওই পর্যটকের। পরে তিনি কোনো উপায় না দেখে পুলিশকে ফোন করেন।
সিঙ্গাপুরের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এশিয়া ওয়ান বলছে, গত ১৯ আগস্ট সিফুড প্যারাডাইস রেস্তোরাঁয় খাবার খেয়েছেন। তিনি যে ‘চিলি ক্র্যাব ডিশ’ অর্ডার করেছেন, তার দাম ৯৩৮ সিঙ্গাপুর ডলার (৬৮৬ মার্কিন ডলার) বলে খাওয়া শেষে জানতে পারেন।
জুনকো শিনবা বলেন, একজন ওয়েটারের পরামর্শে তিনি রেস্তোরাঁটির জনপ্রিয় ‘আলাস্কান কিং চিলিস ক্র্যাব ডিশ’ অর্ডার করেন। শুরুতে ওয়েটার এই খাবারের ডিশের মূল্য ২০ ডলার বলে তাকে জানান। কিন্তু প্রতি ১০০ গ্রামের জন্য যে আলাদা দাম চার্জ করা হয় তা তাকে জানাননি ওই ওয়েটার।
জাপানি এই পর্যটকের দাবি, কাঁকড়াটি রান্না করার আগে মোট ওজন সম্পর্কেও তাকে জানানো হয়নি। পরে তার চারজনের দলটি শেষ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কেজির চিলি ক্র্যাব ডিশ খেয়ে ফেলেন। এর ফলে তাদের বিল আসে ৯৩৮ সিঙ্গাপুর ডলার বা ৬৮৬ মার্কিন ডলার।
৫০ বছর বয়সী ওই নারী বলেন, চারজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের এক রাতের খাবারের এত দাম জেনে আমরা সবাই নির্বাক হয়ে যাই। কারণ আমাদের কাউকেই জানানো হয়নি যে, পুরো কাঁকড়াটি কেবল আমাদের জন্যই রান্না করা হবে। যদিও অন্যান্য কিছু রেস্তোরাঁ কাঁকড়া রান্নার পর প্লেট অনুযায়ী পরিবেশন করে।
বিল দেখে হতবাক হয়ে যাওয়া শিনবা ‘সিফুড প্যারাডাইস’ নামের ওই রেস্তোরাঁ থেকে পুলিশকে ফোন করেন। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এ সময় রেস্তোরাঁর কর্মীরা জানান, তারা জাপানি ওই পর্যটক দলটির কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নেননি। এমনকি তাকে অন্য একজন গ্রাহকের একটি রসিদও দেখিয়েছিলেন বলে জানান। ওই গ্রাহকও একই ধরনের খাবারের অর্ডার করেছিলেন।
পুলিশের উপস্থিতিতে উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনার পর রেস্তোরাঁটি জুনকো শিনবাকে মাত্র ১০৭ সিঙ্গাপুর ডলার বা ৭৮.৩২ মার্কিন ডলার বিল করেন। বাকিটা দেশের সুনামের জন্য ছাড় দিতে রাজি হয় হোটেল কর্তৃপক্ষ। এভাবেই পুলিশ হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টির সমাধান করে।
সূত্র: ডেইলি মেইল, এশিয়া ওয়ান
নীলাকাশ টুডে
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের দিনই রাজধানীর আরামবাগে সমাবেশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। প্রথমে প্রশাসন সমাবেশের অনুমতি না দিলেও পরবর্তীতে জামায়েতে ইসলামীকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। এবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানালেন সহিংসতা এড়ানোর জন্যই জামায়াতের সমাবেশে কোন ধরণের বাধা দেওয়া হয়নি।
বুধবার (১ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর মনিপুরী পাড়ার নিজ বাসায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মাঝে মূলধন বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘২৮ অক্টোবর আমরা জামায়াতে ইসলামীকে মহাসমাবেশ করার অনুমতি দিইনি। কিন্তু তারা নিজেরাই করে ফেলেছে। করে ফেলার পর পুলিশ বাধা দিলে হয়ত একটা সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হতে পারত। সেজন্য পুলিশ বাধা দেয়নি।’
অনুমতি ছাড়াই জামায়াতে ইসলামীকে সমাবেশ করতে দেওয়ায় রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে সরকারের সাতে জামায়াতে ইসলামীর কোন সমঝোতা হচ্ছে কি না? এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘না কোনো ছাড় আমরা দিচ্ছি না, সমঝোতাও হয়নি। দেখুন ৩৩০টা দৈনিক পত্রিকা, আমাদের ইলেকট্রনিক মিডিয়া খুবই শক্তিশালী। আরও অনেক দেশি-বিদেশি মিডিয়া তো আছেই। সব জায়গাতে বলা হচ্ছে, মানবাধিকার, রাজনৈতিক অধিকার। আমরাও সেটি চিন্তা করেছি। যদিও তারা (জামায়াত) নিবন্ধিত দল নয়।’
তিনি এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, ‘জনগণ বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করছে, জামায়াতের ওপর তো আরও আগেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আমরা তাদের কোনো স্পেস বা ছাড় দিইনি। তারা নিজেরাই সমাবেশ করে ফেলেছে। করে ফেলার পর পুলিশ বাধা দিলে হয়ত একটা সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হতে পারত। সেজন্য পুলিশ বাধা দেয়নি। একদিকে বিএনপি অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী সমাবেশ করছিল। সেদিন পুলিশ ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আরও জানতে চাওয়া হয় আগামীতে জামায়াতের ব্যাপারে সরকারের অবস্থান কেমন থাকবে? এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, জামায়াত কোন নিবন্ধিত দল নয়। সুতরাং তাদের কোনো কর্মসূচিতে অনুমতি দেওয়া হবে না।
কাঁকড়া অতি পরিচিত একটি জলজ প্রাণী। বিভিন্ন দেশে এটি অনেকের কাছে সুস্বাদু ও প্রিয় খাবার। তবে সম্প্রতি এই কাঁকড়া নিয়ে অত্যন্ত ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়েছে এক জাপানি নারী পর্যটকের।
জানা গেছে, সম্প্রতি বন্ধুদের সাথে সিঙ্গাপুরে ঘুরতে গিয়েছিলেন জুনকো শিনবা নামের ওই জাপানি পর্যটক। সেখানকার এক রেস্তোরাঁয় খাবারের বিল দেখে একেবারে বাকরুদ্ধ হয়ে যান তিনি।
কাঁকড়ার মতো সুস্বাদু ওই ডিশ খাওয়ার জন্য তাকে ৯৩৮ সিঙ্গাপুর ডলার তথা ৬৮৬ মার্কিন ডলারেরও বেশি বিল ধরিয়ে দেয় হোটেল কর্তৃপক্ষ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭৫ হাজার ৩০০ টাকারও বেশি। বিল দেখে চোখ ছানাবড়া ওই পর্যটকের। পরে তিনি কোনো উপায় না দেখে পুলিশকে ফোন করেন।
সিঙ্গাপুরের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এশিয়া ওয়ান বলছে, গত ১৯ আগস্ট সিফুড প্যারাডাইস রেস্তোরাঁয় খাবার খেয়েছেন। তিনি যে ‘চিলি ক্র্যাব ডিশ’ অর্ডার করেছেন, তার দাম ৯৩৮ সিঙ্গাপুর ডলার (৬৮৬ মার্কিন ডলার) বলে খাওয়া শেষে জানতে পারেন।
জুনকো শিনবা বলেন, একজন ওয়েটারের পরামর্শে তিনি রেস্তোরাঁটির জনপ্রিয় ‘আলাস্কান কিং চিলিস ক্র্যাব ডিশ’ অর্ডার করেন। শুরুতে ওয়েটার এই খাবারের ডিশের মূল্য ২০ ডলার বলে তাকে জানান। কিন্তু প্রতি ১০০ গ্রামের জন্য যে আলাদা দাম চার্জ করা হয় তা তাকে জানাননি ওই ওয়েটার।
জাপানি এই পর্যটকের দাবি, কাঁকড়াটি রান্না করার আগে মোট ওজন সম্পর্কেও তাকে জানানো হয়নি। পরে তার চারজনের দলটি শেষ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কেজির চিলি ক্র্যাব ডিশ খেয়ে ফেলেন। এর ফলে তাদের বিল আসে ৯৩৮ সিঙ্গাপুর ডলার বা ৬৮৬ মার্কিন ডলার।
৫০ বছর বয়সী ওই নারী বলেন, চারজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের এক রাতের খাবারের এত দাম জেনে আমরা সবাই নির্বাক হয়ে যাই। কারণ আমাদের কাউকেই জানানো হয়নি যে, পুরো কাঁকড়াটি কেবল আমাদের জন্যই রান্না করা হবে। যদিও অন্যান্য কিছু রেস্তোরাঁ কাঁকড়া রান্নার পর প্লেট অনুযায়ী পরিবেশন করে।
বিল দেখে হতবাক হয়ে যাওয়া শিনবা ‘সিফুড প্যারাডাইস’ নামের ওই রেস্তোরাঁ থেকে পুলিশকে ফোন করেন। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এ সময় রেস্তোরাঁর কর্মীরা জানান, তারা জাপানি ওই পর্যটক দলটির কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নেননি। এমনকি তাকে অন্য একজন গ্রাহকের একটি রসিদও দেখিয়েছিলেন বলে জানান। ওই গ্রাহকও একই ধরনের খাবারের অর্ডার করেছিলেন।
পুলিশের উপস্থিতিতে উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনার পর রেস্তোরাঁটি জুনকো শিনবাকে মাত্র ১০৭ সিঙ্গাপুর ডলার বা ৭৮.৩২ মার্কিন ডলার বিল করেন। বাকিটা দেশের সুনামের জন্য ছাড় দিতে রাজি হয় হোটেল কর্তৃপক্ষ। এভাবেই পুলিশ হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টির সমাধান করে।
সূত্র: ডেইলি মেইল, এশিয়া ওয়ান
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে মুস্তাফিজুর রহমানের বোলিং ফিগার ছিল দুর্দান্ত ৭-১-২৭-৩! নতুন বলে বোলিংয়ের পর পুরোনো বলেও সফল হয়েছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত বৃষ্টিতে ভেসে গেছে বলে ম্যাচের ফলে সেটি প্রভাব রাখতে পারেনি।
খেলা শেষে মুস্তাফিজের বোলিংয়ের প্রশংসা করেছেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক লকি ফার্গুসন। তিনি বলেন, ‘মুস্তাফিজ বেশ ভালো বোলিং করেছে, নতুন বলে সিমে হিট করেছে। আর বল পুরোনো হয়ে গেলে তো গতি কমে আসবেই।’
এ ছাড়া ফিজের বোলিংয়ে দারুণ খুশি বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত কোচ নিক পোথাস। সংবাদ সম্মেলনে পোথাস বলেন, ‘দারুণ ব্যাপার এটি। ফিজ (মুস্তাফিজ) মাসখানেক ধরেই খেটে যাচ্ছে, নতুন বলে ছন্দ ফিরে পেতে। অ্যালান ডোনাল্ডের (বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ) সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম করেছে। সেগুলোর ফসলই দেখতে পাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তার ডেথ বোলিংয়ের মান জানি। আপনি তাকে ভোররাত ৩টায় ডেকে তুলে ডেথ বোলিং করতে বলতে পারেন, সে (তখনো) বিশ্বের সেরাদের সঙ্গেই সেটি করবে।’
বাংলাদেশের আমন্ত্রণে আগে ব্যাটিং করতে নামা নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের শুরুতেই (৪.৩ ওভারে) বৃষ্টি নামে। এতে ম্যাচের দৈর্ঘ্য নেমে আসে ৪২ ওভারে। পরে খেলা শুরু হলে আবারও বৃষ্টি নামে। খেলা পরিত্যক্ত হওয়ার আগে ৩৩.৪ ওভারে নিউজিল্যান্ড ৫ উইকেটে ১৩৬ রান করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ও স্কলারদের উদ্দেশে বলেছেন, উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। আমরা এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি। ২০৩৭ সালের মধ্যে আমরা ২০তম হব। পাশাপাশি ২০২৬ সাল নাগাদ আমরা একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হব। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যাশা করছি। গতকাল নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে এক ভার্চুয়াল বক্তব্যে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও স্কলারদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন।
‘বাংলাদেশ ইকোনমি অপরচুনিটিজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’বিষয়ক এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। মূূল বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর, উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান। সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং নিউইয়র্ক স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. বিরূপাক্ষ পাল। আলোচক প্যানেলে ছিলেন জাতিসংঘের ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ টিমের সাবেক প্রধান ড. নজরুল ইসলাম, কলোরাডো ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. ফরিদা খান, পরিবেশ ও পানি বিজ্ঞানী ড. সুফিয়ান এ খন্দকার, মনমাউথ ইউনিভার্সিটির ডক্টর অব সোশ্যাল প্রোগ্রামের ডিরেক্টর অধ্যাপক গোলাম এম মাতবর, কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. মাইকেল স্টেকলার। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন স্টেট সিনেটর শেখ রহমান, স্টেট সিনেটর মো. মাসুদুর রহমান, স্টেট রিপ্রেজেনটেটিভ আবুল বি খান ও মেলবোর্ন শহরের মেয়র মাহবুবুল আলম তৈয়ব।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমি রাজনীতিতে এসেছি আমার পিতার স্বপ্ন অনুধাবন করে। স্বপ্নটি ছিল বাংলাদেশকে একটি সুখী, সমৃদ্ধিশালী দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। যেখানে প্রত্যেকটি নাগরিক স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে। আপনারা জেনে খুশি হবেন, আমরা এ স্বপ্ন পূরণের পথে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়েছি। ২০২৬ সাল নাগাদ আমরা একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হব। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যাশা করছি। তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে গত সাড়ে ১৪ বছরে আমার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কল্যাণে ব্যাপক সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দেশ উন্নতি লাভ করেছে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। আমরা এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি। ২০৩৭ সালের মধ্যে আমরা ২০তম হব। দারিদ্র্য বিমোচনে তাৎপর্যপূর্ণ উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ২০০৬ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২২ সালে এ হার নেমে এসেছে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে। অতিদারিদ্র্যের হার এখন ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৬০ ডলারে। তিনি বলেন, করোনা মহামারির আগে আমাদের জিডিপি দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৭ শতাংশে। করোনা মহামারিকালে যেখানে অন্য দেশগুলোর উৎপাদন কমে যাচ্ছিল, সেখানে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এখন প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ শতাংশে। শিল্প খাতে জিডিপি বৃদ্ধি বেড়ে ২২ শতাংশ থেকে ৩৭ শতাংশ হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৬ সালে গড় আয়ু ছিল ৫৯ বছর। এখন আমাদের গড় আয়ু ৭৩ বছর। একই সঙ্গে দ্রুত কমেছে শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যু হার। দক্ষিণ এশিয়ায় লৈঙ্গিক সমতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন শীর্ষস্থানে। বাংলাদেশের জিডিপির আকার এখন ৪৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অথচ ২০০৬ সালে জিডিপির আকার ছিল মাত্র ৬০ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানি আয় বেড়েছে ৬০ বিলিয়ন ডলার। বেকারত্বের হার নেমে এসেছে ৩ দশমিক ২ শতাংশে। সাক্ষরতার হার বেড়েছে ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৮ লাখ ৪০ হাজারের বেশি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আমরা বিনামূল্যে জমি ও ঘর দিয়েছি। গত মাসে আমরাই দেশের প্রথম সর্বজনীন পেনশন চালু করেছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আরও বলেন, এ পরিবর্তনগুলো কিন্তু এমনি এমনি আসেনি। আমাদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ জনগণ, বিচক্ষণ পরিকল্পনা ও কার্যক্রম এ পরিবর্তনের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশ একসময় ব্রিটেনের উপনিবেশ ছিল, তারপর পাকিস্তানের প্রদেশ ছিল। ১৯৪৭ সালের ভারত-পাকিস্তানের দেশভাগের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে তেজোদীপ্ত আন্দোলন গড়ে তোলেন। অবশেষে ২৩ বছরের এক দীর্ঘ সংগ্রাম ও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতাযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে বিজয় লাভ করে। তিনি বলেন, জাতির পিতা যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের কাজ করছিলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁকে ও আমার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে নির্মমভাবে খুন করা হয়। স্বাধীনতাযুদ্ধের পরাজিত শক্তিরা এ হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। জাতির পিতার হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ২১ বছরের জন্য সামরিক শাসনাধীন হয়ে পড়ে। যে কারণে জনগণের ভাগ্যের তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। ২১ বছরের দীর্ঘ সংগ্রামের পর আমার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত হয়। পরবর্তী পাঁচ বছরে আমরা দেশের আর্থসামাজিক পরিবর্তনে একটি মজবুত ভিত্তি তৈরি করতে সক্ষম হই। ২০০১ সালে শান্তিপূর্ণভাবে আমরা ক্ষমতা হস্তান্তর করি। এরপর আমরা আরও একটি খুন, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও সামরিক হস্তক্ষেপের অন্ধকার পর্বের মধ্যে পড়ে যাই। শেখ হাসিনা বলেন, আমাকে ছয় বছরের জন্য শরণার্থী জীবন যাপন করতে হয়েছিল। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা চিন্তা করে ১৯৮১ সালে আমি দেশে ফিরে আসি। আমার এ পথচলা সহজ ছিল না। কমপক্ষে ১৯ বার আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ছিল এর মধ্যে অন্যতম। এ হামলায় আমার দলের ২২ জন নেতা-কর্মী মারা যান এবং ৫ শতাধিক আহত হন। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতি দেশের জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জন্মভূমিকে ভুলে যেও না। সর্বোপরি জন্মভূমিই আমাদের পরিচয়। তোমাদের মেধা, জ্ঞান ও দক্ষতা দেশের কল্যাণে সদ্ব্যবহার করবে। তোমরা যেখানেই থাকো না কেন চাইলে তোমরা তা করতে পারবে।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির অসাধারণ রূপান্তরের গল্পটি আসলেই চমকপ্রদ। শুরুটা ছিল দারুণ চ্যালেঞ্জিং। মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ ছিল এক ধ্বংসস্তূপ। বলা চলে শূন্য হাতেই বাংলাদেশ তার উন্নয়ন অভিযাত্রা শুরু করেছিল। তবে বড় সম্পদ ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্দীপনামূলক নান্দনিক নেতৃত্ব। জাতিকে দেওয়া এই নেতৃত্বের লড়াকু মনই বাংলাদেশকে টেনে তুলে দেয় উন্নয়নের মহাসড়কে। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে অর্থনীতি ও রাজনীতিতে বড় কোনো ভুল কৌশল বাংলাদেশ গ্রহণ করেনি।
নিউ হ্যাম্পশায়ারের মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য আবুল বি খান বলেন, ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন আইনপ্রণেতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছি। বাংলাদেশের সঙ্গে আমার যোগাযোগ অব্যাহত আছে এবং আমি অনেকবার বাংলাদেশ সফর করেছি। ৪৩ বছর আগে দেশ ছেড়ে আসার পর থেকে বাংলাদেশ এখন যে পর্যায়ে উঠে এসেছে সেটি সত্যিই অসাধারণ। এটি ছিল একটি দীর্ঘ পথ। যেটি রাতারাতি ঘটেনি। খাদ্য নিরাপত্তা, নারীর ক্ষমতায়ন, ক্ষুদ্র শিল্পের উন্নয়ন, উদ্যোক্তা বৃদ্ধি এবং নতুন ধারণার ক্ষেত্রে বেশকিছু বড় অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে অবকাঠামোগত বিশাল উন্নয়ন হয়েছে, যা কৃষি ও খাদ্য সরবরাহ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। কিছু বড় প্রকল্পের কাজ এরই মধ্যে প্রায় শেষ বা সমাপ্তির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
এ সেমিনার ও সংলাপ আয়োজনের জন্য ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’কে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ কীভাবে এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে এসে পৌঁছেছে তা বোঝাতে আমাদের সম্প্রদায় ও নীতিনির্ধারকরা খুবই সহায়ক ভূমিকা রাখবেন। বাংলাদেশ আর তথাকথিত সেই ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ নয়। আমরা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এ তকমা ঝেড়ে ফেলেছি।