শেরপুরে ক্ষেতজুরে সূর্যমুখী ফুল


MD Nuruzzaman প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ১, ২০২৩, ৬:৫১ পূর্বাহ্ন /
শেরপুরে ক্ষেতজুরে সূর্যমুখী ফুল

 

রবিউল ইসলাম, শেরপুর প্রতিনিধি

শেরপুরের কৃষক আশরাফ আলী। তিনি এ বছর তার ১০ কাঠা জমিতে চাষ করেছেন হলুদ সূর্যমুখীর। যার তেল বিক্রি করে লাভের স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

সূর্যমুখীতে ছেয়ে গেছে জেলার পূবশেরীর আশরাফ আলীর ফসলের মাঠে। তাই তার খেতে সূর্যমুখীর হাসি দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন লোকজনেরা। ফুলকে সবাই ভালোবাসে এজন্যই অনেকে সূর্যমুখী ফুল দেখতে এসে ছবি তুলছেন। তবে তার অভিযোগ, দর্শনার্থীদের মধ্যে অনেকেই এখানে এসে ফুল ছিঁড়ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এবার জেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। এর আগের বছর ১৫৪ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছিল। শেরপুরে এবার মাত্র ৯ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। তাই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষক আশরাফ আলী দীর্ঘদিন ধরে সরিষার চাষ করে আসছেন। এ বছরের প্রথমেই তাকে সরকারিভাবে সরিষার বীজ দেওয়া হয়েছিল। সরিষার পরে আবার তাকে তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির প্রকল্পের আওতায় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূর্যমুখীর বীজ বিতরণ করেছেন। তিনি শুধু সেচ খরচ দিয়ে এ সূর্যমুখীর চাষ করেছেন। এ সূর্যমুখী থেকে সব মিলিয়ে লক্ষাধিক টাকার মতো লাভ করবেন বলে তিনি আশাবাদী। এ গাছের অবশিষ্ট অংশ পশুর খাবার বা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তিনি এ বছর তার ১০ কাঠা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। প্রত্যেকটি গাছেই ফুল এসেছে। তবে সূর্যমুখী তেল ভাঙ্গার কোনো মেশিন না থাকায়, সরিষার মেশিন দিয়ে ভাঙ্গাতে হচ্ছে। যার ফলে তেলের মানও খারাপ হয়। এতে সঠিক মুনাফা পান না কৃষকরা। তাই এ সূর্যমুখী চাষ করতে আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেক কৃষকরা।

কৃষক আশরাফ বলেন, আমি ১০ কাঠা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছি। আমার তেমন টাকা খরচ হয়নি শুধু সেচ খরচ ছাড়া। আশা করছি এবার লাভ বেশি হবে। আমি এর আগে সরিষা লাগিয়ে ছিলাম। সরিষার বাম্পার ফলন দেখে সরকার থেকে ট্রাক্টর দিয়েছিল। এ বছর আবার কৃষি অফিস থেকে সূর্যমুখীর বীজ দিয়েছিল। এর ভালোই ফলন হয়েছে। তবে দর্শনার্থীদের মধ্যে অনেকেই এখানে এসে ফুল ছিঁড়ছেন। যার কারণে আমার প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে।

এদিকে সূর্যমুখী ফুল দেখতে আসা শিশু রকিব বলেন, আমি আমার ভাইয়ের সাথে ঘুরতে এসেছি। সূর্যমুখী দেখে আমার খুব ভালো লাগল। আমি ফুলের সাথে ছবিও তুলেছি।

সার্জেন্ট মজিদ বলেন, আমি শুনলাম শেরপুরে নাকি সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। তাই ঘুরতে আসলাম। বাগানটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ এখানে আসেন। এখানে এসে দেখলাম কৃষক আশরাফ আলী সরকারী বীজ পেয়ে এ চাষ করেছেন। সূর্যমুখীগুলো অনেক সুন্দর হয়েছে। আমার দাবি কৃষি বিভাগ এ বীজ সবার মাঝে যেন বিতরণ করে। তাহলে শেরপুর তেল জাতীয় আবাদের স্থান বৃদ্ধি পাবে।

শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, শেরপুরে রেকর্ড পরিমাণের সরিষার আবাদ হয়েছিল। তাই তেল জাতীয় আবাদ বাড়াতে একটি প্রকল্পের আওতায় তিন উপজেলায় সূর্যমুখী বীজ দেওয়া হয়েছে। বীজ দেওয়ার পর থেকে কৃষকদের সূর্যমুখী চাষের সার ও বীজ সরবরাহের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এ সূর্যমুখী থেকে তেল উৎপন্ন হয়। এ তেলে অন্যসব তেলের থেকে পুষ্টির মান বেশি। এইবার ফলন ভাল হওয়ায় আগামীতে ব্যাপকভাবে সূর্যমুখীর চাষ হবে আশা করছি। ১ হেক্টর জমি সূর্যমুখী থেকে ৪ টন সূর্যমুখীর বীজ পাওয়া সম্ভব, এতে প্রায় ২ লাখ টাকার মত মুনাফা পাওয়া যাবে।