মেয়ের চিকিৎসার সুযোগে আমাকে আপত্তিকর মেসেজ পাঠাতেন ডা. নিশাত


MD Nuruzzaman প্রকাশের সময় : মার্চ ২, ২০২৩, ৪:১১ পূর্বাহ্ন /
মেয়ের চিকিৎসার সুযোগে আমাকে আপত্তিকর মেসেজ পাঠাতেন ডা. নিশাত

 

মেয়ের চিকিৎসার সুযোগ নিয়ে ডা. নিশাত আব্দুল্লাহ আপত্তিকর মেসেজ পাঠাতেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী নুসরাত আরা ময়না। বুধবার (১ মার্চ) দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন অভিযোগ করে পুরো ঘটনা তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে নুসরাত আরা ময়না জানান, মাত্র এক বছর বয়সেই তাদের একমাত্র সন্তান অথৈয়ের হাত আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই সময় চিকিৎসকরা একটু বড় হলে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। কিন্তু অর্থ সংকটসহ নানা কারণে করা যায়নি। ২০২২ সালের ২১ আগস্ট খুলনার সরকারি শেখ আবু নাসের হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে গেলে সহযোগী অধ্যাপক ডা. নিশাত আব্দুল্লাহ দ্রুত অপারেশন করাতে বলেন। আবু নাসের হাসপাতালে অপারেশন করাতে চাইলে ডা. নিশাত আব্দুল্লাহ সেখানে না করে হক নার্সিং হোম নামে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে অপারেশনের পরামর্শ দেন।

নুসরাত আরা ময়না বলেন, গত ১৮ জানুয়ারি হাতের আঙুল অপারেশন করা হয়। এরপর প্রতিদিন ড্রেসিং করাতে হয়। অপারেশনের পর হাতের অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক দুই ঘণ্টা পর পর হাতের ছবি তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠাতে বলেন। নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়মিত ছবি পাঠাতে থাকি। এই সুযোগে ওই চিকিৎসক হোয়াটস অ্যাপে আমাকে কুরুচিপূর্ণ এবং ইঙ্গিতপূর্ণ মেসেজ পাঠাতে থাকেন। এক পর্যায়ে একা একা দেখা করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। তার কথায় রাজি না হওয়ায় তিনি অথৈয়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে থাকেন।

সংবাদ সম্মেলনে অথৈয়ের মা বলেন, গত ৬ ফেব্রুয়ারি ডা. নিশাত আব্দুল্লাহ আমার মেয়েকে নিয়ে শেখপাড়া হক নার্সিং হোমের চেম্বারে ড্রেসিং করানোর জন্য যেতে বলেন। সন্ধ্যায় সেখানে গেলেও আমাকে প্রায় দেড় ঘণ্টা বসিয়ে রাখেন। রাত সাড়ে ৮টায় আমার মেয়েকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারের ভেতরে গেলে ডা. নিশাত আব্দুল্লাহ আমাকে বিভিন্ন প্রকার আপত্তিকর কথাবার্তা বলার এক পর্যায়ে আমার হাত ধরে টেনে তার কাছে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তার কু-মতলব বুঝতে পেরে মেয়েকে নিয়ে আমি অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে আসি। বিষয়টি ক্লিনিক মালিককে জানালে তিনি ডা. নিশাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো আমাকে কাউকে কিছু না বলার জন্য শাসান।

তিনি বলেন, ওই ঘটনার পর একজন নার্স অথৈয়ের ড্রেসিং করান। এরপর নানা সময় বিভিন্ন রকম ওষুধ দেন। দ্রুত অবস্থার অবনতি হতে থাকে।

 

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে হঠাৎ করে অথৈয়ের আঙুল হাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দ্রুত হক নার্সিং হোমে ছুটে গেলে ডা. নিশাতসহ অন্যরা কেউই অথৈয়ের চিকিৎসা করাতে রাজি হননি। রাত ১২টার পরে কোনো রকম ড্রেসিং করে বাড়ি ফিরে আসি। এরপর থেকে অথৈয়ের কোনো চিকিৎসা হচ্ছে না। আমরা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আবু নাসের হাসপাতাল, হক নার্সিং হোমে গিয়েছি, কেউ অথৈয়ের চিকিৎসা করাতে রাজি হচ্ছে না। এর মধ্যে জানতে পেরেছি, ওর বাবার নামে মামলা হয়েছে।

এর আগে হামলার অভিযোগ এনে মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ডা. নিশাত আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে নুসরাত আরা ময়নার স্বামী পুলিশের এএসআই নাইম শেখের বিরুদ্ধে খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় মামলা করেন।

ডা. নিশাত আব্দুল্লাহ মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে নগরীরর শেখ পাড়ার হক নার্সিং হোমে একজন রোগীর সার্জারি কাজে ব্যস্ত ছিলাম। জটিল অপারেশন বিধায় দীর্ঘ সময় অপারেশন চলছিল। রাত ১০টায় সাতক্ষীরা পুলিশ বিভাগে কর্মরত এএসআই নাঈম ও তার স্ত্রী ৪/৫ জন লোক নিয়ে আমার অপারেশন থিয়েটারের দরজায় লাথি মারা শুরু করেন এবং অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে থাকেন। কারণ জিজ্ঞেস করলে বলেন- আমার মেয়ে অথৈকে এক মাস আগে আঙুল অপারেশন করেছিলি, আমার মেয়ের আঙুল ভালো হয়নি। এর জন্য তুই দায়ী। এখনই ১০ লাখ টাকা আমার মেয়ের ক্ষতিপূরণ দিবি। এরপর এএসআই নাঈম আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কিল ঘুষি লাথি মারতে থাকেন।

এ সময় তার স্ত্রী ও সঙ্গীরা আমাকে ঘিরে রাখেন। এক পর্যায়ে এএসআই নাঈম গলা টিপে ধরে আমার শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করতে থাকেন। এ সময় তার স্ত্রী আমার দুহাত চেপে ধরেন এবং অন্য অজ্ঞাতনামারা আমাকে মারপিট করতে থাকেন, তারা ক্লিনিকের ওটিতে ভাঙচুরও চালান। একপর্যায়ে আমার সঙ্গে থাকা নার্সসহ অন্যান্য সহযোগীরা এবং ক্লিনিকের মালিক ডা. নুরুল হক ফকির দৌড়ে এসে আমাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করেন। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থতার কারণে বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছি।

সোনাডাঙ্গা মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মমতাজুল হক বলেন, উভয়পক্ষ থানায় মামলা করেছে। বুধবার ভুক্তভোগী ওই নারী বাদী হয়ে শ্লীলতাহানি ও শিশুর অঙ্গহানির অভিযোগ তুলে মামলা করেছেন। এর আগে মঙ্গলবার ডা. নিশাত আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। দুটি মামলার তদন্ত চলছে।