পাকিস্তানের মিডিয়া থেকে গায়েব ইমরান খান!


MD Nuruzzaman প্রকাশের সময় : জুন ১০, ২০২৩, ৬:২৮ পূর্বাহ্ন /
পাকিস্তানের মিডিয়া থেকে গায়েব ইমরান খান!

 

মঙ্গলবার রাতে লাইভ টিভি শো চলার সময় পাকিস্তানি উপস্থাপক কাশিফ আব্বাসি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে এক আইনজীবীর দায়ের করা একটি আইনি নোটিশের বিষয়ে কথা বলছিলেন। খবর বিবিসি। উচ্চারণ করলেন, পরে আবার নিজেকে থামিয়ে দিলেন: ‘তিনি আর্টিকেল ছয় এর অধীনে ইমরান খানের বিরুদ্ধে আবেদন করেছেন… আমি ক্ষমাপ্রার্থী, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আবেদন করেছেন।’

বিবিসি আব্বাসির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছে, কিন্তু তিনি কোনো উত্তর দেননি।

গত সপ্তাহে ইমরান খানের নাম বা তার ছবি পাকিস্তানের মিডিয়াতে খুঁজে পেতে বা শুনতে বেশ কসরতই করতে হয়েছে।

এক মাস আগে দুর্নীতির অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করাটা তার এই পতনের পেছনের প্রেক্ষাপট হিসেবে কাজ করেছে। গত ৯ই মে যখন খানকে ইসলামাবাদের একটি আদালত প্রাঙ্গন থেকে তুলে নেওয়া হয়, তখন দেশ জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। অনেকেই শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করেছেন, আর অনেকেই ছিলেন সহিংস।

সামরিক স্থাপনা এমনকি লাহোরে অবস্থিত জ্যেষ্ঠ সেনা কমান্ডারের বাসভবনেও হামলা হয়েছিল। পুলিশ সেসময় খানের হাজার হাজার সমর্থককে গ্রেপ্তার করে এবং সামরিক বাহিনী বলেছিল যে, মূল হোতাদের বিচার সামরিক আদালতে করা হবে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো অনেক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলেছিলো যে, সেটা আসলে আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।

৩১শে মে, পাকিস্তানের মিডিয়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা পেমরা পাকিস্তানের সংবাদ চ্যানেলগুলোর জন্য একটি নির্দেশিকা পাঠায়। যেখানে ৯ই মে এর ঘটনার কথা উল্লেখ করে সংবাদ চ্যানেলগুলোকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় যে, ঘৃণা ছড়ায় এমন বক্তব্য যেসব ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ দিয়ে থাকেন তাদের বিষয়ক যেকোন সম্প্রচার থেকে যাতে চ্যানেলগুলো বিরত থাকে।

ওই নির্দেশিকার কোথাও ইমরান খানের নাম উল্লেখ করা হয়নি, কিন্তু বিবিসি বেশ কয়েকটি টিভি স্টেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি যারা জানায়, তাদের চ্যানেলে খুব পরিষ্কার ভাষায় বার্তা পাঠানো হয়েছে।

 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইমরান খানের নাম উল্লেখ করা যাবে না, তার ছবি প্রচার করা যাবে না, তার কণ্ঠস্বর শোনানো যাবে না এমনকি চ্যানেলের টিকারেও এরকম কিছু উল্লেখ করা যাবে না। যদি তাকে উল্লেখ করাটা একান্তই দরকার হয় তাহলে খানকে শুধু তার পদবী দিয়ে উল্লেখ করা যাবে, আর সেটি হচ্ছে তার দল পিটিআই এর চেয়ারম্যান।

দুটি সূত্র বিবিসিকে বলেছে যে, তারা তাদের টিভি স্টেশনের মালিকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন। তারা জানিয়েছেন যে, চ্যানেলের মালিকদেরকে সামিরক এবং গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকের জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছিল এবং তারা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা কী চায়।

‘তাদেরকে বলা হয়েছে, তার নাম রয়েছে এমন কোনো খবর প্রকাশ বা প্রচার করা যাবে না এবং এরপরেও যদি আপনি সেটি করেন তাহলে তার জন্য আপনি নিজেই দায়ী থাকবেন,’ পাকিস্তান টিভিতে কাজ করেন এমন একজন এই তথ্য জানিয়েছেন। মিডিয়ার সব ব্যক্তিই নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেছেন।

বিবিসি পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সঙ্গেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে এখনো উত্তর মেলেনি। পেমরার মহাপরিচালক নির্দেশিকা পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কিন্তু তিনি বলেছেন যে, ইমরান খানের নাম উল্লেখ না করার মতো কোনো নির্দেশনা চ্যানেলগুলোকে দেওয়া হয়নি।

কোনো রাজনীতিবিদকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় ফেলার ঘটনা এটাই প্রথম নয়; ইমরান খান ক্ষমতায় থাকার সময় তার বিরোধী রাজনৈতিক নেতা নওয়াজ শরীফের বক্তব্য প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল।

‘পাকিস্তানে সব সময়ই কোনো না কোনো ভাবে সেন্সরশীপ ছিল,’ এক সাংবাদিক বলেন। “আমি প্রায় সময়ই আইএসপিআর(সামরিক বাহিনীর প্রেস শাখা) থেকে ফোনকল পেয়েছি ইমরান খানের বিরুদ্ধে সমালোচনা করার পরিণতি ভোগ করার বিষয়ে।”

‘তখন আমাদের বিরোধীদলীয় কোনো নেতার সঙ্গে কথা বলতে বেশ বেগ পেতে হতো কারণ তারা কারাগারে ছিল। এখন আমাদের পিটিআইয়ের পক্ষে কথা বলার জন্য কাউকে পেতে বেগ পেতে হয়। খানের শাসনামল এবং এখনকার সময়ের মধ্যে বড় পার্থক্য হচ্ছে এখন বৈধতা পেতে তাদের হাতে ৯ই মে’র উদাহরণ রয়েছে।’

এটি কীভাবে তাদের চ্যানেলের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে মিডিয়ায় যারা রয়েছেন তারা বিবিসির সঙ্গে কথা বলেছেন।

‘‘এখানকার শীর্ষ চ্যানেলগুলো বলছে: ‘আপনারা একে কীভাবে সামাল দেবেন?’ ভয়ের জায়গাটি হচ্ছে, চ্যানেলগুলো যদি পিটিআই সম্পর্কিত কোনো খবর না দেখায় এবং সরকারি সংবাদ সম্মেলনই বেশি করে প্রচার করে তাহলে তারা শিগগিরই বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে।”

‘বিপুল সংখ্যক মানুষ টিভি দেখে কারণ তারা ইমরান খান সম্পর্কে তথ্য জানতে চায়। তিনি যেদিন গ্রেপ্তার হন সেদিন দর্শক সংখ্যা অনেক বেশি ছিল।’

প্রথমে গ্রেপ্তার এবং পরে ছাড়া পেয়ে পিটিআইয়ের অনেক শীর্ষ নেতা ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, তার দলটি থেকে পদত্যাগ করছেন। মিডিয়ার ওপর এই কড়াকড়ি আসলে চলতি বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনের আগে ইমরান খানের প্রভাব কমিয়ে আনার অতি সাম্প্রতিক চেষ্টা মাত্র।