নির্বাচন কেন্দ্রিক জোটের তৎপরতা দুদলের, গুরুত্ব বাড়ছে ছোট দলের


MD Nuruzzaman প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ১৯, ২০২৩, ৬:৫৩ পূর্বাহ্ন /
নির্বাচন কেন্দ্রিক জোটের তৎপরতা দুদলের, গুরুত্ব বাড়ছে ছোট দলের

ঢাকা অফিসঃ  দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি জোট গঠন নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে।

মান-অভিমান ভুলে ১৪ দলীয় জোটকে আবারও চাঙা করতে চাইছে আওয়ামী লীগ। জেলা পর্যায়ে জোটকে শক্তিশালী করতে সমন্বয় কমিটি গঠনের কাজও চলছে। অপরদিকে সরকারের পদত্যাগসহ দশ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে আছে বিএনপি।

দাবি বাস্তবায়নে ‘কৌশলগত’ কারণে নিজেরা কোনো জোটে না থেকে ভিন্ন জোট গঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছে দলটি। ইতোমধ্যে চারটি জোট গঠন করেছে। আরও জোট গঠনে চলছে তৎপরতা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সারা বছর গুরুত্ব না থাকলেও নির্বাচনের আগে নামসর্বস্ব ছোট দলগুলোকে কাছে টানে বড় দুদল। ভোটের মাঠে অস্তিত্ব নেই, এমন দল নিয়েও নতুন জোট গড়ছে। এ ধরনের জোট বাস্তবে কতটা ভূমিকা পালন করবে তা সময়ই বলে দেবে

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ১৪ দলীয় জোটকে আবারও চাঙা করতে চাইছে আওয়ামী লীগ। শরিকদের ‘মান-অভিমান’ ভাঙিয়ে জোটকে সক্রিয় করতে চায় তারা। এরই অংশ হিসাবে জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনে পাঁচটি আসনের দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে জোট শরিকদের। ইতোমধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে তারা। জেলা পর্যায়ে জোটকে শক্তিশালী করতে সমন্বয় কমিটি গঠনের কাজও চলছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির পাশাপাশি জেলা পর্যায়েও নানা কর্মসূচির কথাও ভাবা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও শরিক দলের নেতারা বলছেন, ১৪ দলীয় জোটের কর্মসূচি বাড়ানো এবং ঐক্য আরও সুদৃঢ় করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু বলেন, ১৪ দলীয় জোট ঐক্যবদ্ধ। আমরা নিয়মিত সভা-সমাবেশ ও কর্মসূচি পালন করছি। আলাপ-আলোচনা করছি। সামনে আমাদের কার্যক্রম আরও বাড়বে। আমরা জেলাভিত্তিক নানা অনুষ্ঠান- কর্মসূচি করব। প্রতিটি দলেরও কার্যক্রম চলছে।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, একসঙ্গে পথ চলতে গেলে একটু ঠোকাঠুকি লাগে। আবার ঠিকও হয়ে যায়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনও জোটগত ভাবে করার বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত তো আছেই। আমরা একসঙ্গে আছি। একসঙ্গেই থাকব।

গত বছরের মার্চে ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকে জোটনেত্রী শেখ হাসিনা জানান, জোট থাকবে এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা ঐক্যবদ্ধ ভাবে অংশ নেবেন। একই সঙ্গে জেলা পর্যায়ে জোটকে আরও শক্তিশালী করতে সমন্বয় কমিটি গঠনের নির্দেশনাও দেন তিনি।

আওয়ামী লীগ ও জোটের শরিক দলের নেতারা মনে করেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। বিএনপিসহ তাদের শরিকরা নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে। এই মুহূর্তে ১৪ দলীয় জোটকেও আরও সক্রিয় করতে হবে। নিজেদের মধ্যকার কোনো সমস্যা থাকলে তা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সহসভাপতি এবং ঢাকা পূর্বের সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ১৪ দলকে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক ভাবে আরও সক্রিয় করলে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিকে মোকাবিলা করা সহজ হবে।

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা সমীকরণ। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী হলেও বিএনপি ও সমমনা দলগুলো এখন আন্দোলনমুখী। সরাসরি কোনো জোটে না থাকলেও সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবিতে মাঠের যুগপৎ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে বিএনপি। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে চারটি জোট গঠন হয়েছে। এসব জোটের পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি আরও নতুন জোট গঠনেরও তৎপরতা চলছে। তবে এসব জোটে থাকা অধিকাংশই নিবন্ধনহীন, নাম-প্যাডসর্বস্ব দল। এমনকি অনেকের দলীয় কার্যালয় পর্যন্ত নেই। মাঠের কর্মসূচিতে তেমন নেতাকর্মী দেখা যায় না। চার-পাঁচটি দল বাদ দিলে বাকিগুলোর সারা দেশে কোনো ভোট ব্যাংকও নেই। ছয় মাসের মধ্যে এসব জোট গঠন হলেও এরই মধ্যে অভ্যন্তরীণ লড়াইও শুরু হয়েছে। আলাপ-আলোচনা না করে কর্মসূচি নির্ধারণ, যথাযথ মূল্যায়ন না করাসহ নানা ইস্যুতে চলছে টানাপোড়েন।

বিএনপি নেতারা বলছেন, দেশের চলমান সংকট নিরসনে ডান, বামসহ সব দল, সংগঠন, সুশীল, বুদ্ধিজীবী ছাড়াও সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে জাতীয় ঐক্যের ঘোষণা দিয়েছে দল। এখানে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী নয়, সবাইকে নিয়েই এগোতে চাইছে দলটি। তাই জোট, দল, সংগঠন কিংবা ব্যক্তির সংখ্যাতত্ত্ব দিয়ে বিএনপি তাদের চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে পরিমাপ করছে না; গুরুত্ব দিচ্ছে ঐক্যকে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই, মানবাধিকার নেই। জনগণের ভোটাধিকার থেকে শুরু করে সব নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যার যে অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করতে হবে।

বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে ৩৯টি। এছাড়া আরও শতাধিক দলের নাম আছে রাজনীতির মাঠে। এর মধ্যে বেশির ভাগই নামসর্বস্ব, ব্যক্তিনির্ভর। এমনকি নিবন্ধিত দলের মধ্যেও নামসর্বস্ব দল আছে। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর মধ্যে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সারা দেশে ভোট ব্যাংক রয়েছে। এছাড়া এলডিপি ও ১২ দলীয় জোটে থাকা কল্যাণ পার্টি, গণতন্ত্র মঞ্চের জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন ও গণঅধিকার পরিষদসহ কয়েকটি দল ছাড়া আর কারও তেমন ভোট নেই।

যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসাবে ৫৪ দল গণমিছিল, গণ-অবস্থান ও মিছিল-সমাবেশে কর্মসূচি পালন করেছে। তবে বিএনপিসহ কয়েকটি দল বাদে এসব জোটের নেতাকর্মীর উপস্থিতি ছিল হতাশাজনক। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গণতন্ত্র মঞ্চের সাত দলের মধ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ইসিতে নিবন্ধিত। এর বাইরে নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কারও আন্দোলনে রয়েছে। তবে তাদের নিবন্ধন নেই। জোটের নেতা আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, কমরেড সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি, ড. রেজা কিবরিয়া আর ভিপি নুরুল হক নূরের মতো হেভিওয়েট নেতা থাকলেও সারা দেশে কর্মসূচি পালনের মতো শক্তি তাদের দলগুলোর নেই। তাই শুধু ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে তা পালন করছে তারা। তাতেও তেমন নেতাকর্মী দেখা যায় না। এর মধ্যে আবার মঞ্চের সঙ্গে দূরত্ব চলছে নূরের গণঅধিকার পরিষদের। যে কারণে সর্বশেষ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে তার দল অংশ নেয়নি।

এ প্রসঙ্গে ১২ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, আমাদের সঙ্গে বিএনপির কোনো মতবিরোধ বা মতানৈক্য কোনো কিছুই নেই। তবে সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে কর্মসূচি নির্ধারণ করা হলে আগামী দিনে পথ চলতে আরও সহজ বা মসৃণ হবে।