নির্বাচনের সড়কে জাতীয় পার্টি, অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা, ৩০০ আসনেই প্রার্থী


MD Nuruzzaman প্রকাশের সময় : মে ২২, ২০২৩, ২:৫০ পূর্বাহ্ন /
নির্বাচনের সড়কে জাতীয় পার্টি, অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা, ৩০০ আসনেই প্রার্থী

 

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুরোদমে প্রস্তুতি শুরু করেছে জাতীয় পার্টি। জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দলটি প্রাথমিক ভাবে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে নির্বাচনি রোডম্যাপ সাজাচ্ছে। পাশাপাশি জোটগত ভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টিও মাথায় রেখেছেন পার্টির নীতিনির্ধারকরা। সেক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে শেষ মুহূর্তে, অনেকটা ‘অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা’-এমনই দাবি তাদের। জাতীয় পার্টির একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য মিলেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মাঠের রাজনীতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে বিরোধীদের দূরত্ব দিনদিন বাড়ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বিদেশিদের নানামুখী তৎপরতা। আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিকরা সংবিধান মেনে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে অনড়। বিএনপিসহ তাদের বলয়ের দলগুলো নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। জাতীয় পার্টি প্রথম থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে। তবে তারাও যে কোনো মূল্যে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের গ্যারন্টি চায়।

জাতীয় পার্টির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, আজ হোক কাল হোক, রাজনৈতিক সংকট রাজনৈতিক ভাবেই ফয়সালা হবে। যেহেতু ক্ষমতার পালাবদলের জন্য নির্বাচনই শেষ ভরসা। তাই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চান তারা। এছাড়া নব্বইয়ের পর থেকে অনুষ্ঠিত প্রতিটি সংসদ নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে ভোটের রাজনীতিতে বড় ফ্যাক্টর জাতীয় পার্টি। তারা যেদিকে ঝুঁকবে, সরকার তারা গঠন করবে। এ কারণে নির্বাচনের আগেই নিজেদের ঘর গোছানোর কাজটি শেষ করতে চান নেতারা। একই সঙ্গে এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতিও রাখছেন তারা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে জাতীয় পার্টি। দলটির নেতারা মনে করছেন, এতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকবে। পাশাপাশি সরকারের আচরণ কী হয়, তাও পরিষ্কার হয়ে যাবে।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি বলেন, জাতীয় পার্টি বরাবরই নির্বাচনমুখী দল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। এ অবস্থায় আমরা বসে থাকতে পারি না। আগামী সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনে ভোট করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চলছে। তিনি আরও বলেন, আমরা নির্বাচনে কীভাবে যাব, কোন প্রক্রিয়ায় যাব, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আপাতত আমরা রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সময় এলে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেব।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে দলটির কো-চেয়ারম্যান, প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সংসদ-সদস্যদের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। রুদ্ধদ্বার এই বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, কূটনীতিকদের তৎপরতা, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ, নির্বাচনি প্রস্তুতি ও কৌশল, প্রার্থী বাছাই, সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড, সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে খোলামেলা আলোচনা হয়। বৈঠকে আর সময়ক্ষেপণ না করে পুরোদমে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বিষয়ে একমত হন দলের নীতিনির্ধারকরা। তারা এ সময় যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ের পাশাপাশি নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল পর্যায়ে পার্টিকে সক্রিয় ও শক্তিশালী করার বিষয়েও তাগিদ দেন।

সূত্র জানায়, বৈঠকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চলমান বিরোধিতা কোনদিকে গড়ায়, সেদিকে নজর রাখতে বলা হয় নেতাদের। কূটনীতিকদের নানামুখী তৎপরতার বিষয়েও সতর্ক দৃষ্টি রাখার বিষয়ে আলোচনায় উঠে আসে। ৩০০ আসনেই জাতীয় পার্টির প্রার্থী দেওয়ার জন্য সর্বাÍক প্রস্তুতির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। কোনো কারণে জোট করতে হলেও সেই প্রস্তুতিও যাতে দলের শীর্ষ পর্যায়ে থাকে, এমন প্রস্তাবও এসেছে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, বিএনপিসহ তাদের শরিকরা নির্বাচনে অংশ নিলে পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়, আর অংশ না নিলে অবস্থা কেমন হবে, এ বিষয়েও আলোচনা করেন নেতারা।

জাতীয় পার্টির একাধিক শীর্ষ নেতা জানান, দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি, আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক শক্তির অবস্থান, ক্ষমতাসীন সরকারের আচরণ পর্যালোচনা করা হয়। এ সময় বলা হয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ কোন প্রক্রিয়ায় হবে, সেদিকটিও ভেবে দেখতে হবে। হঠাৎ করেই কয়েকটি দেশের দূতাবাসে পুলিশের নিরাপত্তা বাতিলের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। কূটনীতিকদের নিরাপত্তা সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি ঠিক হয়নি বলে মনে করছেন তারা।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছি। প্রাথমিক ভাবে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি। তিনি আরও বলেন, যেহেতু সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তাই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। যদিও সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের আচরণ কী হয়, তা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেই স্পস্ট হয়ে যাবে। সূত্র যুগান্তর