‘ধন্যবাদ দিয়াই কুল পাই না, সাংবাদিকতা করব কখন!


MD Nuruzzaman প্রকাশের সময় : নভেম্বর ১৭, ২০২২, ১১:৩৬ পূর্বাহ্ন /
‘ধন্যবাদ দিয়াই কুল পাই না, সাংবাদিকতা করব কখন!

গোলাম মোস্তফাঃ জনগণের কর্মচারী এবং জনপ্রতিনিধিরা ঠিকমতো কাজ করছেন কি না,কোথায় কোথায় বিচ্যুতি,সেগুলো খুঁজে বের করে মানুষকে জানানোই সাংবাদিক আর গণমাধ্যমের দায়িত্ব।ধন্যবাদ দেওয়া সাংবাদিকের কাজ নয়।

কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যে ভাবে গণহারে সামাজিক যোগাযোগ গমাধ্যম গুলোতে যেভাবে ‘ধন্যবাদ সংস্কৃতি’ গড়ে উঠেছে,গণমাধ্যমের কাছ থেকেও সেরকম ধন্যবাদ সাংবাদিকতা প্রত্যাশা করা ভুল।যারা করছে,তারা গণমাধ্যম থাকছে না।প্রচারমাধ্যমে পরিণত হচ্ছে। গণমাধ্যম আর প্রচারমাধ্যম এক নয়।কিন্তু মুশকিল হচ্ছে,বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে কতটি সত্যিই গণমাধ্যম আর কতটি প্রচারমাধ্যম,তার নির্মোহ বিশ্লেষণ হওয়া জরুরি।

দেশে ‘ধন্যবাদ সাংবাদিকতা’ বাড়ার এটিও একটি কারণ।কারণ যারা ধন্যবাদ সাংবাদিকতা করেন,তাদের ঝুঁকি তুলনামূলক কম এবং তারা নানা জায়গা থেকে বিবিধ সুবিধাও নিয়ে থাকেন।কিন্তু এর বাইরে যারা সত্যিকারের সাংবাদিকতা করেন বা করতে চান,তাদের বিপদ পায়ে পায়ে।তারা ভেতরে ভেতরে প্রশাসনিক চাপে থাকেন; অন্যদিকে তাদেরকে চিহ্নিত করা হয় উন্নয়নবিরোধী বা সরকারবিরোধী সাংবাদিক হিসেবে।এই চিহ্নিত হওয়ার ভয়েও অনেকে হয় চুপ থাকেন কিংবা ‘ধন্যবাদ সাংবাদিকতা’ শুরু করেন।

দুঃখজনক হলেও মোটা দাগের সত্য এই যে ধন্যবাদ সাংবাদিকতা ও ধন্যবাদ সাংবাদিকের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে।বিশেষ করে জেলা-উপজেলায় এমন সাংবাদিকের আধিক্য বেশি।এরা ডিসি,পুলিশ সুপার,ইউএনও,এসি ল্যান্ড এমনকি কোনো এসআই কর্মস্থলে যোগ কিংবা বিদায় নিলে ফেসবুকে অভিনন্দনের বন্যা বইয়ে দেয়।কোনো কোনো আন্ডার গ্রাউন্ড পত্রিকায় এসব কর্মকর্তার ছবি বড় করে দিয়ে তিন কলাম রিপোর্টও ছাপা হয়।

আফসোস লাগে কোথায় গিয়ে ঠেকেছে সাংবাদিকতা?সরকারি কর্মকর্তা আসবেন,যাবেন-এটাই নিয়ম।তারা তাদের কর্মস্থলে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবেন।নিজের জীবনের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করবেন।কিন্তু তিনি স্বাভাবিক কোনো কাজ করলেও বাহ্‌ বাহ্‌ রব ওঠে।ইদানীং ফেসবুকে পত্রিকার মতো রিপোর্ট আকারে এমন রিপোর্ট চোখে পড়ে।সেখানে লেখা থাকে- জেলা বা উপজেলার নাম দিয়ে প্রতিনিধি।এরপর রিপোর্ট শুরু হয়।আশ্চর্য!যেন ফেসবুক একটা পত্রিকা।যেখানে পত্রিকার মতো করে রিপোর্ট লিখছে।

ওইসব ধন্যবাদ সাংবাদিকতার” তৈল সাংবাদিকরা ” আবার যাকে তেল দিয়ে রিপোর্ট লিখেছেন তার কাছে গিয়ে ফেসবুকের সে রিপোর্ট দেখান।তিনিও বুঝে কিংবা না বুঝে আনন্দে লাফান।আর রিপোর্টে যে সব বিশেষণ ব্যবহার করা হয় তা সাংবাদিকতার সঙ্গে মিলে না,যেমন জনবান্ধব,কর্মঠ।মানবিক,জনদরদী,গরিবের বন্ধু,অপরাধীদের আতঙ্ক অমুক যোগ দিয়েছেন এ উপজেলায়।

বুঝি সবারই পরিবার আছে।দিন শেষে প্রত্যেককে তার পরিবারের কাছে ফিরতে হয়।পরিবারের সদস্যদের জন্য বাজার করতে হয়।মাস শেষে ঘরভাড়া দিতে হয়।সুতরাং স্রোতের বিপরীতে গিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে পেশাদারিত্ব বিকাশের চেষ্টা করেও আখেরে কোনো লাভ হয় না।

আমি আমার এক সিনিয়র সাংবাদিককে প্রশ্ন করেছিলাম আপনার রিপোটে আগের মত ক্ষুরধার লেখনী আর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পাই না কেন?জবাবে সে বললো ভাইরে ‘ধন্যবাদ দিয়াই কুল পাই না,সাংবাদিকতা করব কখন?’

লেখক: গোলাম মোস্তফা, সাংগঠনিক সম্পাদক
বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম-বিএমএসএফ, ফুলপুর উপজেলা শাখা। গণমাধ্যম কর্মী