দুদলের টার্গেট একই


MD Nuruzzaman প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২, ৫:০৪ পূর্বাহ্ন /
দুদলের টার্গেট একই

নীলাকাশ টুডেঃ

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মুখোমুখি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। সংবিধান অনুযায়ীই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। এ ক্ষেত্রে একচুলও ছাড় দিতে রাজি নয় দলটি।

অপরদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ভোটের দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। তাদের এ আন্দোলন মোকাবিলায়ও বসে নেই আওয়ামী লীগ।

দুদলের টার্গেট রাজপথ। এ লক্ষ্যে মহড়াও শুরু করেছে দলটি। সমাবেশ-পালটা সমাবেশে উত্তপ্ত রাজনীতি। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে উত্তাপের পারদ। রাজপথ দখলে রাখাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সংঘাত ভয়াবহ রূপ নিতে পারে-এমন আশঙ্কা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের।

মাঠ ছাড়বে না আওয়ামী লীগ

অক্টোবরে ঢাকায় ডাক পড়তে পারে জেলা নেতাদের

আবদুল্লাহ আল মামুন

সাংগঠনিক কার্যক্রম হাতে নিয়ে অক্টোবর থেকে রাজনীতির মাঠ দখলের পরিকল্পনা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসাবে আগামী মাসে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন শুরু করতে সংশ্লিষ্ট নেতাদের বলা হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের জেলা নেতাদের ঢাকায় ডাক পড়ছে অক্টোবরে।

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠেয় দলের সম্ভাব্য বর্ধিত সভায় অংশ নিতে ডাকা হচ্ছে জেলা নেতাদের। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সভা আয়োজনের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্র যুগান্তরকে এই তথ্য জানিয়েছে।

দলীয় সূত্র জানায়, পর্যায়ক্রমে সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন নভেম্বর নাগাদ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। সম্মেলনকে ঘিরে এ সময় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোকে সক্রিয় রাখা হবে।

এভাবে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন পর্যন্ত রাজনীতির মাঠে নেতাকর্মীদের সক্রিয় উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় ক্ষমতাসীনরা। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি মোকাবিলায় এমন পরিকল্পনা করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা জাতিসংঘের অধিবেশন শেষে দেশে ফিরলে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলন এবং বর্ধিত সভার তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বুধবার বলেন, সব সংগঠনের সম্মেলন কবে হবে, তা চূড়ান্ত করার ক্ষমতা রয়েছে একমাত্র বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার। দেশে ফিরে তিনিই ঠিক করবেন কোন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন কবে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য জানিয়েছেন, এ যাত্রায় আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ তিনটি সহযোগী ও একটি ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই চার সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি নিয়ে অক্টোবরের শেষদিকে পর্যায়ক্রমে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম চার সংগঠনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

লন্ডনযাত্রার আগে তিনি আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে বলে গেছেন। সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলন অক্টোবরে শুরু হলেও তা নভেম্বর পর্যন্ত গড়াবে। শুরুতে ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ এবং তাঁতী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ মে অনুষ্ঠিত দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলন আয়োজনের নির্দেশ দেন। এর তিন দিন পর ১০ মে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর যৌথ সভায় ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন আয়োজনে দলীয় সভাপতির নির্দেশ স্মরণ করিয়ে দেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম তিন সংগঠনের নেতাদের দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলে তারিখ চূড়ান্ত করার কথা বলেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত সম্মেলনের উদ্যোগে ভাটা পড়ে।

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় তিন বছর পর। মহিলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১৭ সালের ৪ মার্চ। সম্মেলনে সাফিয়া খাতুন সভাপতি ও মাহমুদা বেগম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিন বছর মেয়াদি এই সংগঠনের কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালের ৪ মার্চ।

জানতে চাইলে মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম বুধবার যুগান্তরকে বলেন, সম্মেলন করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সময় দিলেই এ আয়োজন সম্পন্ন করতে পারব।

যুব মহিলা লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৭ সালের ১১ মার্চ। এতে নাজমা আক্তার সভাপতি ও অপু উকিল সাধারণ সম্পাদক পুনর্নির্বাচিত হন। তিন বছর মেয়াদি যুব মহিলা লীগের এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ১১ মার্চ।

যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল বুধবার বলেন, আমরা সম্মেলনের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। তারিখ নির্ধারণের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিনি যেদিন সম্মেলন করতে বলবেন, আমরা সেদিনই সম্মেলন আয়োজন করতে পারব।

আওয়ামী লীগের আরেক সহযোগী সংগঠন তাঁতী লীগের সম্মেলন হয় ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ। তিন বছর মেয়াদি এই সংগঠনের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ১৯ মার্চ। তাঁতী লীগ বরাবরই দুর্বল সাংগঠনিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তারপরও গঠনতান্ত্রিক নিয়মে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন তাঁতী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং একটি কেন্দ্রীয় কমিটি থাকে।

আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই বছর অন্তর এই সংগঠনের সম্মেলন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের মে মাসে। রেজওয়ানুল হক চৌধুরী সংগঠনটির সভাপতি ও গোলাম রাব্বানী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ওই দুজনকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

পরবর্তী সময়ে ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য। ২০২০ সালের মে মাসে এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্ব চরমভাবে সমালোচিত হওয়ায় এই ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন আগেই করতে চায় আওয়ামী লীগ।

এদিকে চার বছর পর আওয়ামী লীগের জেলা নেতাদের ঢাকায় ডাক পড়ছে। সেপ্টেম্বরে গণভবনে বর্ধিত সভা আয়োজনের প্রস্তুতি থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা পিছিয়ে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের আসন্ন জাতীয় কাউন্সিল ও পরবর্তী সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে বর্ধিত সভায় তৃণমূল নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেওয়ার কথা দলের সভাপতি শেখ হাসিনার। তিনি দলীয় সংসদ-সদস্য এবং তৃণমূলে আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে জেলা নেতাদের কাছ থেকে জানতে চাইবেন বলে জানা গেছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৩ জুন প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মাঠেই মোকাবিলা করবে বিএনপি

চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে কেন্দ্রের বার্তা

হাবিবুর রহমান খান

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এ লক্ষ্য পূরণে যে কোনো পরিস্থিতি এবার মাঠেই মোকাবিলা করবে দলটি। গড়ে তোলা হবে শক্ত প্রতিরোধ। হামলা হলে পালটা আঘাত। কেন্দ্র থেকে সারা দেশের নেতাকর্মীদের কাছে এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে।

সাম্প্রতিক কয়েকটি সমাবেশেও হামলা মোকাবিলার প্রস্তুতি লক্ষ্য করা গেছে। এসব কর্মসূচিতে বাঁশের লাঠি ও পাইপের মাথায় জাতীয় পতাকা লাগিয়ে অংশ নেন নেতাকর্মীরা। সমাবেশ চলাকালে আশপাশে ছিল তাদের সতর্ক পাহারা। তবে এখনই আগ বাড়িয়ে কোনো সংঘর্ষে জড়াবে না দলটি। বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক যুগান্তরকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

তারা আরও জানান, গত এক মাস ধরে সারা দেশের নেতাকর্মীরা প্রতিদিন মার খেয়ে ঘরে ফিরছেন। প্রতিরোধ না করেও হয়েছেন মামলার আসামি। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে আস্থাহীনতা। যা ভবিষ্যৎ সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও এমন বার্তা যেতে পারে যে বিএনপির আন্দোলনের শক্তি নেই। তাই নেতাকর্মীদের মনোবল ধরে রাখা এবং সাংগঠনিক শক্তি জানান দিতে রাজপথে শক্তি প্রদর্শনের বিকল্প নেই।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিরোধী রাজনীতি নিশ্চিহ্নে সরকার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে। মামলা-হামলা গুমের মাধ্যমে দেশে একটা ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। যাতে কেউ সরকারের অপকর্মের প্রতিবাদে রাজপথে নামতে না পারে। কিন্তু জনগণের দল হিসাবে বিএনপি জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে রাজপথে আন্দোলন করছে। এটা বন্ধে সরকার ও ক্ষমতাসীনরা অতীতের পথ বেছে নিয়েছে। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারাও হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না।

তিনি বলেন, নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বিএনপির নেতাকর্মীরা সাহসের সঙ্গে রাজপথে নেমেছেন। এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে রাজপথে থাকতে হবে। এবার রাজপথেই হবে ফয়সালা। আর মাঠে থেকেই মোকাবিলা করা হবে যে কোনো পরিস্থিতি।

আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি মুখোমুখি অবস্থানে। উভয় দলই ঘোষণা দিয়েছে মাঠ দখলের।

ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে এর নমুনাও। জনসম্পৃক্ত ইস্যু নিয়ে সারা দেশে বিএনপির প্রায় অর্থশতাধিক কর্মসূচিতে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলা ও মামলা এড়িয়ে কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দেওয়ায় কোথাও বিএনপিকে প্রতিরোধ করতে দেখা যায়নি। অতি উৎসাহী হয়ে কোনো নেতাকর্মী যাতে সংঘাতে জড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা ছিল।

কিন্তু ২২ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এসব কর্মসূচিতে ধারাবাহিক হামলা ভাবিয়ে তোলে বিএনপির হাইকমান্ডকে। হঠাৎ করে সরকারের কঠোর মনোভাব জানার চেষ্টা করেন তারা। সবকিছু পর্যালোচনা করে দলটির নীতিনির্ধারকদের ধারণা, সরকার বিএনপিকে ফাঁদে ফেলতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে হামলা-মামলা করে বিএনপিকে মাঠছাড়া করতে চায়। সরকারের এমন মনোভাব বুঝতে পেরে তারা পালটা হামলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।

কিন্তু রাজধানীর সমাবেশে হামলার পর সংঘাত এড়ানোর কৌশল থেকে সরে আসে বিএনপি। বিশেষ করে বনানীতে স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, তরুণ নেতা তাবিথ আওয়াল এবং কুমিল্লায় ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলুর ওপর হামলার পর নীতিনির্ধারকরা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। বিভিন্ন স্তরের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মতামত নেন।

কর্মসূচিতে হামলা হলে করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বেশিরভাগ নেতাই মনে করেন, এভাবে হামলা ও নেতাকর্মীরা মার খেতে থাকলে এক সময় তাদের মনোবলে চিড় ধরবে। তাই নেতাকর্মীদের চাঙ্গাভাব ধরে রাখতে বিনা প্রতিরোধে মার খাওয়া উচিত হবে না। হামলা হলেই পালটা আঘাতের প্রস্তুতি থাকা উচিত। কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। থাকতে হবে কেন্দ্রীয় নেতাদেরও। দলের এমন সিদ্ধান্তের পর নয়াপল্টন, ধোলাইখাল, খিলগাঁওয়ের সমাবেশে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

এসব সমাবেশে দলের নীতিনির্ধারকরা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন, এবার থেকে হামলা হলে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে। নেতাকর্মীদের পালটা হামলার প্রস্তুতি নিতেও নির্দেশ দেন তারা। তাদের এমন ঘোষণার পর নেতাকর্মীরাও সমাবেশে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে যাচ্ছেন। রাজধানীর মহাখালী, মিরপুরের সমাবেশে সরেজমিন দেখা যায়, বেশিরভাগ নেতাকর্মীর হাতে ছিল বাঁশ, কাঠের লাঠি, লোহা ও প্লাস্টিকের পাইপ। যদিও তারা কৌশল হিসাবে লাঠির মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে নিয়ে যান। বুধবার মিরপুরের সমাবেশের আশপাশে স্থানীয় যুবলীগ লাঠি হাতে অবস্থান নিলেও শেষ পর্যন্ত হামলার ঘটনা ঘটেনি।

এ সমাবেশ থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সরকারের উদ্দেশ বলেন, আন্দোলনের ‘রিহার্সাল চলছে, ফাইনাল খেলা’ এখনও শুরু হয়নি। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা যেভাবে জেগে উঠেছেন তা সত্যিই আশান্বিত করে। এখন আপনারা যেমন পুলিশ দেখলে দৌড় দেন না, সামনে দাঁড়ান। এ সামনে দাঁড়ানোর কাজটা অব্যাহত রাখুন। আজকে (বুধবার) রাস্তায় আপনাদের হাতে পতাকাসহ লাঠি ছিল ছোট ছোট। এরপর মোটা মোটা বাঁশের লাঠি নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। প্রত্যেকের হাতে লাঠি থাকবে। কাউকে আঘাত করার জন্য নয়, নিজেদের আত্মরক্ষার্থে। তবে আঘাত আসলে পালটা আঘাত করতে হবে। ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

রাজধানীর বাইরেও নেতাকর্মীরা যে কোনো বাধা মোকাবিলা শুরু করেছে। বুধবার মুন্সীগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী। কিন্তু পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে তারা সমাবেশ করতে চাইলে শুরু হয় ধাওয়া-পালটাধাওয়া। পুলিশের হামলায় তারা সমাবেশস্থল ছেড়ে যাননি। পালটা প্রতিরোধ করেন। পুলিশের টিয়ার শেলের জবাবে বৃষ্টির মতো ইট-পাথর ছুড়ে মারেন। এতে বিএনপির নেতাকর্মীর পাশাপাশি পুলিশের বেশ কিছু সদস্য আহত হন।

জানতে চাইলে বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, এবার রাজপথে গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন হবে। এটা বুঝতে পেরেই বিএনপিকে মাঠছাড়া করতে চায় তারা। কিন্তু এবার আমরা মাঠ ছাড়ছি না। কারণ আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। পেছনে যাওয়ার সুযোগ নেই। যত বাধাই আসুক তা মাঠেই মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যাব। এই খবর জাতীয় পত্রিকা যুগান্তর থেকে নেওয়া। এই খবরের সব শর্ত যুগান্তর পত্রিকার।