টাকায় হবে আন্তর্জাতিক লেনদেন


MD Nuruzzaman প্রকাশের সময় : এপ্রিল ১৯, ২০২৩, ১১:৪১ অপরাহ্ন /
টাকায় হবে আন্তর্জাতিক লেনদেন

ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে নিজস্ব মুদ্রা টাকায় লেনদেনে ঝুঁকছে বাংলাদেশ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেনে আগ্রহ দেখাচ্ছে। ইতোমধ্যে আলোচনাও শুরু করেছে। ব্যাংকাররা বলছেন, ভিন্ন মুদ্রা ব্যবহারে এগিয়ে এলে বাণিজ্যে বৈচিত্র্য আসবে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট চলমান ডলার সংকটের মধ্যে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নিজস্ব মুদ্রায় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের লেনদেন নিষ্পত্তির বিষয়ে কাজ করছে সরকার। ইতোমধ্যে ভারতের সঙ্গে নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেনে সম্মত হয়েছে উভয় দেশ। রাশিয়ার সঙ্গে কারেন্সি সোয়াপ চুক্তির কাজ চলছে। বাংলাদেশের সঙ্গে কারেন্সি সোয়াপে দেওয়া চীনের প্রস্তাব পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

যদিও গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশি ব্যাংকগুলো ঋণপত্রের (এলসি) ক্ষেত্রে এবং ব্যাংকের বিদেশি শাখার সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের লেনদেনের সুবিধার্থে চীনা মুদ্রা ইউয়ানে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে নেওয়া ঋণ চীনের মুদ্রা ইউয়ানে পরিশোধ করবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ একটি চীনা ব্যাংকের মাধ্যমে পেমেন্ট নিষ্পত্তি করবে, আর চীনের সিআইপিএস বা ক্রস-বর্ডার ইন্টারব্যাংক পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে রাশিয়ান পক্ষ অর্থ বুঝে পাবে।

এবার শুরু হচ্ছে ভারতের সঙ্গে নিজস্ব মুদ্রায় বাণিজ্য।

গত ১১ এপ্রিল ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার একটি প্রতিনিধি দল সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে বৈঠক করে। ওই বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে টাকা ও রুপিতে বাণিজ্যিক লেনদেনে সম্মতির পর পরিশোধ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারতের সঙ্গে নিজস্ব মুদ্রায় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে যার যার মুদ্রায় লেনদেন করতে সোনালী ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক তাদের ভারতীয় ঋণদাতা স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও আইসিআইসিআই ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলবে। ভারতীয় ব্যাংক দুটিও বাংলাদেশি দুই ব্যাংকে একই ধরনের অ্যাকাউন্ট খুলবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই অ্যাকাউন্টগুলো খুলতে আন্তর্জাতিক ভাবে যা ভস্ট্রো ও নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট নামে পরিচিত স্ব স্ব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগবে।

টাকা-রুপিতে লেনদেন হলেও বাকিটা বরাবরের মতো মার্কিন ডলারে পরিশোধ করবে বাংলাদেশ। যেমন, গত অর্থবছরে ভারত থেকে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ ছিল প্রায় ১ হাজার ৩৬৯ কোটি ডলার। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ২০০ কোটি ডলার রুপিতে লেনদেন হলেও বাকিটা ডলারে নিষ্পত্তি হবে।

এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশের ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর ভাইস প্রেসিডেন্ট আমিন হিলালী বলেন, এ ব্যবস্থা বাণিজ্যের প্রসার এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাবে। গত দুই বছর ধরে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ছে। এ রপ্তানির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশা করছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার বলেন, কোনো ধরনের তৃতীয় মুদ্রার অন্তর্ভুক্তি ছাড়া সরাসরি টাকা-রুপিতে লেনদেন করার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উভয় দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন পেলে আমরা গ্রাহকদের জানিয়ে দেব যে সরাসরি টাকা-রুপির মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি করা যাবে। তিনি আরও বলেন, আগ্রহী ব্যবসায়ীরা তখন সরাসরি রুপিতে এলসি খুলতে পারবেন। এতে ব্যবসায়ীদের খরচ কমবে। আবার ডলারের চাহিদায় যে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে, সেটি কমে আসবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মার্কিন ডলারের ওপর চাপ বাড়ায় দেশের ব্যবসায়ীরা গত বছর থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংককে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরতা কমানোর আহ্বান জানিয়ে আসছেন। এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বাণিজ্য ও ব্যাংক উভয় ক্ষেত্রেই ভিন্ন মুদ্রা ব্যবহারে এগিয়ে এলে বৈদেশিক বাণিজ্যে বৈচিত্র্য আসবে। এ ছাড়া লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলা ও নিষ্পত্তি করতে একক বৈদেশিক মুদ্রার ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমিয়ে আনবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক জানান, টাকা ও রুপিতে দ্বিপক্ষীয় লেনদেন করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কোনো ব্যবসায়ী আমদানি বা রপ্তানির ক্ষেত্রে রুপিতে এলসি খুলতে চাইলে, তা করতে পারবেন।