কার অপেক্ষায় বঙ্গভবন


MD Nuruzzaman প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ২০, ২০২৩, ৪:১৫ অপরাহ্ন /
কার অপেক্ষায় বঙ্গভবন
ঢাকা অফিসঃ

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গত দুই মেয়াদে তিনি দেশের শীর্ষ পদ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী ২৪ এপ্রিল মেয়াদ শেষ হচ্ছে সফল এ রাষ্ট্রনায়কের। এরই মধ্যে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে কে হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি, কার জন্য অপেক্ষা করছে বঙ্গভবন?

আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই নির্বাচনের মাধ্যমে চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতির নাম। সংসদে যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগ, সেহেতু আওয়ামী লীগের প্রার্থীই পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন— মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দেশের সিনিয়র আইনজীবীরা।

রাষ্ট্রপতির নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, তার (রাষ্ট্রপতি) মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই স্পিকারের সঙ্গে পরামর্শ করে শিডিউল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। তারপর তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে দলীয় প্রার্থী আসবে। আসার পর ভোট হবে। কিন্তু এখন তো এগুলোর কিছুই দরকার হবে বলে মনে হয় না। কারণ, আগেও সেটার দরকার হয়নি। পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা যখন থাকে তখন বাইরে থেকে রাষ্ট্রপতি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যে দল ক্ষমতায় আছে, তারা যাকে বলবে তিনিই রাষ্ট্রপতি হয়ে যাবেন। অন্য চিন্তা-ভাবনার কোনো সুযোগ নেই, নির্বাচন নিয়ে চিন্তা করারও দরকার নেই।’

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, তিনবার রাষ্ট্রপতি হিসেবে কেউ থাকতে পারবেন না। সর্বোচ্চ দুবার থাকতে পারবেন দেশের শীর্ষ পদে। বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অর্থাৎ আগামী ২৩ এপ্রিলের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে। সেই হিসাবে খুব বেশি সময় নেই রাষ্ট্রপতিপ্রার্থী নির্বাচন করার। এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সরকারকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, তিনবার রাষ্ট্রপতি হিসেবে কেউ থাকতে পারবেন না। সর্বোচ্চ দুবার থাকতে পারবেন দেশের শীর্ষ পদে। বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অর্থাৎ আগামী ২৩ এপ্রিলের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে। সেই হিসাবে খুব বেশি সময় নেই রাষ্ট্রপতিপ্রার্থী নির্বাচন করার। এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সরকারকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

কে হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি— এ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। রাষ্ট্রের শীর্ষ পদটির জন্য অনেকের নামও শোনা যাচ্ছে। কিন্তু কেউ এখনও মুখ খুলছেন না। তবে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে জোর আলোচনা চলছে।

তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খাইরুল হক ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রমুখের নাম।

পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে আপনার নাম আসছে— এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ওই পদে বসার যোগ্যতা আমার নেই। দলে সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আছেন। তিনি ভাবছেন। খোঁজখবর নিচ্ছেন, তার মাথায় কেউ থাকতেও পারেন।’

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আবদুল হামিদকে তৃতীয় মেয়াদের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করতে হলে সংবিধান পাল্টাতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংবিধান পাল্টানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।’

দলীয় সূত্র মতে, আগামী ২০২৪ সালের প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনে এখন পর্যন্ত বিএনপি অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় আনতে পারবেন— এমন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাছাই করতে চাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। অন্যদিকে, দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কোনো ‘রাজনৈতিক’ ব্যক্তিত্বকে এ পদে দেখতে চাচ্ছেন।

সূত্র মতে, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এবং এ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করায় শূন্য হওয়া ছয়টি আসনের উপনির্বাচন হবে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি। সেই নির্বাচন শেষে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে কমিশন। এরপরই নির্বাচন নিয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন নির্বাচন-কর্তাব্যক্তিরা। বৈঠকে তফসিল ও ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ হবে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এ বৈঠক হতে পারে।

সংবিধানে যা আছে

সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- (১) রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ অবসানের কারণে এ পদ শূন্য হলে মেয়াদ সমাপ্তির তারিখের আগের ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে শূন্য পদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধান মতে, ‘একাদিক্রমে হউক না হউক- দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতি পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকিবেন না। সংবিধানের বিধানাবলীসাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ হইতে পাঁচ বৎসরের মেয়াদে তাঁহার পদে অধিষ্ঠিত থাকিবেন। তবে শর্ত থাকে যে, রাষ্ট্রপতির পদের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও তাঁহার উত্তরাধিকারী-কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন।’

‘স্পিকারের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে রাষ্ট্রপতি স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন। রাষ্ট্রপতি তাঁহার কার্যভারকালে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইবার যোগ্য হইবেন না এবং কোনো সংসদ-সদস্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হইলে রাষ্ট্রপতিরূপে তাঁহার কার্যভার গ্রহণের দিনে সংসদে তাঁহার আসন শূন্য হইবে।’

তবে, দেশের এ গুরুত্বপূর্ণ পদে চাইলেই সবাই নির্বাচন করতে পারবেন না। সংবিধান মতে, ‘কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হইবার যোগ্য হইবেন না, যদি তিনি-পঁয়ত্রিশ বৎসরের কম বয়স্ক হন; অথবা সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইবার যোগ্য না হন; অথবা কখনও এই সংবিধানের অধীন অভিশংসন দ্বারা রাষ্ট্রপতির পদ হইতে অপসারিত হইয়া থাকেন।’

সর্বশেষ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয় ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি। ওই বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোটের তারিখ থাকলেও একক প্রার্থী হওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিত হন মো. আবদুল হামিদ।

আবদুল হামিদ ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় মেয়াদে ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ২৪ এপ্রিলের মধ্যেই ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নতুন কারও শপথ নেওয়ার কথা।