কাঁচা মরিচের তীব্র ঝালে ‘অন্তর জ্বালা’ ভোক্তাদের


MD Nuruzzaman প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ২৪, ২০২৩, ৫:২০ পূর্বাহ্ন /
কাঁচা মরিচের তীব্র ঝালে ‘অন্তর জ্বালা’ ভোক্তাদের

 

কাগজে-কলমে রবি মৌসুম শেষ হলেও বলা যায় এখনো কাঁচা মরিচের ভরা মৌসুম। মাঠে প্রচুর কাঁচা মরিচ আছে। তাতে দাম ভোক্তাপর্যায়ে নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা। কিন্তু এবার ভরা মৌসুমে চড়েছে কাঁচা মরিচের দাম।

বাজারে অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও বেশি। চড়ে যাওয়া ডিম-মুরগির দামে বড় কোনো সুখবর নেই। চাল, ডাল, সয়াবিনের মতো নিত্যপণ্য উচ্চ মূল্যে স্থিতিশীল।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার মালিবাগ ও মগবাজারে খুচরায় প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৪০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতারা এক পোয়া বা আড়াই শ গ্রাম কাঁচা মরিচ বিক্রি করেছেন ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। সেই হিসাবে কেজিতে ২০০ টাকা পর্যন্ত দাম পড়েছে কাঁচা মরিচের। দেখা গেছে, কারওয়ান বাজারে কাঁচা মরিচের পাইকারি যে দাম রাখা হয়, অন্য বাজারে তা প্রায় দ্বিগুণ।

 

বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার বলেন, এক বছরের ব্যবধানে বাজারে শুকনা মরিচের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। এ জন্য কৃষকেরা এবার কাঁচা মরিচ পাকিয়ে শুকনা করে বিক্রিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাতে বাজারে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে। আমদানিও বন্ধ। তবে বাজারে বড় কোনো সংকট নেই বলে জানান তিনি।

শুধু যে ঢাকার বাজারে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে তাই নয়, চট্টগ্রামে গতকাল কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা কেজি। কাঁচা মরিচ যেসব জেলায় বেশি উৎপাদন হয়, তার মধ্যে দিনাজপুর অন্যতম। দিনাজপুর শহরের বাহাদুর বাজারে গতকাল পাইকারিতে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা কেজি, খুচরায় যা ছিল ১৪০ টাকা।

দিনাজপুরের বিরামপুর প্রতিনিধি জানান, এক দিনের ব্যবধানে হিলিতে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। ভারত থেকে কাঁচা মরিচের আমদানি বন্ধ ও স্থানীয় বাজারে সংকট থাকায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে প্রভাব পড়েছে।

এ ব্যাপারে হিলি বাজারের কাঁচা মরিচ ব্যবসায়ী বিপ্লব হোসেন বলেন, বুধবার বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের পাইকারি দাম ছিল ১০৬ থেকে ১১০ টাকা আর খুচরা দাম ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। গতকাল তা ১৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।

এ বিষয়ে হিলি আমদানি- রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন-উর-রশিদ বলেন, কাঁচা মরিচ আমদানির জন্য বাংলাদেশ থেকে আইপি (ইমপোর্ট পারমিশন) না দেওয়ায় ছয় মাস ধরে কাঁচা মরিচ আমদানি বন্ধ। তাতে দাম বেড়েছে।

বাজারে শীতের সবজির দাম অবশ্য এখন একটু কম। তবে অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বেশ চড়া। চাল, ডাল ও সয়াবিনের মতো নিত্যপণ্যের বাজারে কোনো সুখবর নেই। পাইকারিতে কোথাও কোথাও একটু কমলেও খুচরায় ব্রয়লার মুরগি এখন ২২০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকা কেজি। আর ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের ডিমের দাম পড়ছে ডজন ১৩৫ থেকে ১৪৫ টাকা। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি। মাছের বাজারও বাড়তি।

মালিবাগের পোলট্রি ব্যবসায়ী মো. আহসান বলেন, ডিম-মুরগির দাম বেড়ে যায় দ্রুত। তবে কমতে সময় লাগে। দাম বাড়লে যে শুধু ক্রেতার সমস্যা হয়, তা নয়। বিক্রেতাদেরও ব্যবসায় প্রভাব পড়ে।

খুচরায় মোটা চালের দাম ৫২ থেকে ৫৫ টাকা কেজি। বিআর ২৮ চালের দাম ৫৮ থেকে ৬২ টাকা। আর মিনিকেট ৭০ টাকার আশপাশে। নাজিরশাইলের মতো উচ্চ মূল্যের চালের দাম পড়ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা। এসব চালের দাম বাড়ার পর আর কমছে না। সরকার চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে, দেশে আমনের ভালো ফলনও হয়েছে, তারপরও চালের দাম কমার লক্ষণ নেই।

সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯০ টাকার মধ্যে। মসুর ডালের দামেও কোনো পরিবর্তন নেই, মানভেদে ডালের দাম পড়ছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা। আটা-ময়দার দামেও বড় কোনো পরিবর্তন নেই। রমজান মাস সামনে রেখে বাড়ছে ছোলা, ছোলার ডাল ও খেজুরের মতো পণ্যের দাম। চিনির বাজারের সংকট এখনো কাটেনি। দাম বাড়তির সঙ্গে বাজারে খোলা ও প্যাকেটজাত চিনির সরবরাহ এখনো কম।