তিন দিন পেরিয়ে গেলেও গ্রেফতার হয়নি কেউ


MD Nuruzzaman প্রকাশের সময় : নভেম্বর ২৩, ২০২২, ৩:২৭ পূর্বাহ্ন /
তিন দিন পেরিয়ে গেলেও গ্রেফতার হয়নি কেউ

 

নীলাকাশ টুডেঃ ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) কোর্টের সামনে থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় তিন দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো আসামি গ্রেফতার হয়নি।

তবে ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গিসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এদিকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার প্রতিবেদন জমা দিতে আরও সাত কার্যদিবস সময় চেয়েছে তদন্ত কমিটি। এর আগে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গঠিত এই কমিটির।

আসামি পালিয়ে যাওয়াসংক্রান্ত দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ এবং ভবিষ্যতে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত সুপারিশমালা প্রণয়নের কথা রয়েছে এই কমিটির।

অন্যদিকে সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চাঞ্চল্যকর, সাজাপ্রাপ্ত বা একাধিক মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আদালতে হাজির করার সময় ডাণ্ডাবেড়ি পরানোর বিষয়ে কারা সদর দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছে পুলিশ। এছাড়া ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আনসার আল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় সক্ষমতার জানান দিল জঙ্গিরা। কয়েক বছর ধরে জঙ্গিরা ছোটখাটো চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছিল।

এসব হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল বড় ধরনের হামলার সক্ষমতা নেই জঙ্গিদের। কিন্তু এবার তারা প্রকাশ্যে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে তাদের সদস্যদের ছিনিয়ে নিল। আর এ জঙ্গি ছিনতাইয়ের মূল পরিকল্পনাকারী ও মাস্টারমাইন্ড হিসাবে কাজ করেছেন চাকরিচ্যুত পলাতক মেজর জিয়া।

সূত্র জানায়, জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় রিমান্ডে থাকা ১০ আসামি চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন। তারা জানিয়েছে, আরও বড় অপারেশনের টার্গেট ছিল। তাদের টার্গেটে আছে কারাগারে আটক বেশ কয়েকজন দুর্ধর্ষ জঙ্গি।

রিমান্ডে থাকা আসামিরা হলেন শাহীন আলম ওরফে কামাল, শাহ আলম ওরফে সালাউদ্দিন, বিএম মজিবুর রহমান, সুমন হোসেন পাটোয়ারী, আরাফাত রহমান, খাইরুল ইসলাম ওরফে সিফাত, মোজাম্মেল হোসেন, শেখ আব্দুল্লাহ, আ. সবুর ও রশিদুন্নবী।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ বলেন, ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গিরা নজরদারিতে রয়েছে। যারা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের চিহ্নিত করেছি। আশা করছি দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

কারাগার সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন কারাগারে ৫৭৪ জন জঙ্গি আটক রয়েছে। এর মধ্যে জেএমবির ৪৩৩ ও অন্যান্য গ্রুপের ১৪১ জন।

জানতে চাইলে মঙ্গলবার তদন্ত কমিটির সভাপতি ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, তদন্ত শেষ করতে আরও সময় লাগবে। আমরা সব ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেছি। প্রাপ্ত ডকুমেন্টগুলো নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। এই মুহূর্তে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না।

গত রোববার দুপুর ১২টার দিকে একটি মামলায় ১২ জঙ্গিকে আদালতে হাজির করা হয়। হাজিরা শেষে পুলিশ সদস্যরা তাদের নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় পুলিশের চোখে-মুখে স্প্রে করে জঙ্গি সদস্য মইনুল হাসান শামীম ও আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিবকে ছিনিয়ে নেয় তাদের সহযোগীরা। এই দুই জঙ্গি দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তাদের আইনের আওতায় আনতে এরই মধ্যে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করেছে পুলিশ।

তদন্তের অংশ হিসেবে সোমবার সিটিটিসি একাধিক টিম কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার পরিদর্শনে যায়। কারাগার থেকে কার মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে কীভাবে জঙ্গিরা বাইরে যোগাযোগ করেছিল তা জানার চেষ্টাও চলছে।

কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আদালত চত্বর থেকে দুই জঙ্গি সদস্যকে ছিনতাই অপারেশনে নেতৃত্বদানকারীর নাম-পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। এই অপারেশনে তাদের বেশ কয়েকজন সহযোগীকেও শনাক্ত করা হয়েছে। জঙ্গি ছিনতাই অপারেশনে নেতৃত্বদানকারীসহ সবাইকে গ্রেফতারের মাধ্যমে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে আমরা কাজ করছি।

প্রসিকিউশন বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার জসিম উদ্দিন জানান, সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চাঞ্চল্যকর, সাজাপ্রাপ্ত বা একাধিক মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আদালতে হাজির করার সময় ডাণ্ডাবেড়ি পরানোর বিষয়ে কারা সদর দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছে পুলিশ।

তিনি বলেন, কোর্টে হাজিরের সময় গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের ডাণ্ডাবেড়ি না পরানোর কারণে এরই মধ্যে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আদালত থেকে পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। ডাণ্ডাবেড়ি পরানো থাকলে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হতো। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কারা সদর দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

কারা সদর দপ্তরে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জেলখানা থেকে সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চাঞ্চল্যকর গুরুত্বপূর্ণ আসামি এবং সাজাপ্রাপ্ত বা একাধিক মামলার দণ্ডপ্রাপ্তদের আদালতে হাজির করার সময় জেল কোড অনুযায়ী ডাণ্ডাবেড়ি পরানোর নির্দেশনা আছে। এ অবস্থায় জেলখানা থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার আসামিদের কোর্টে পাঠানোর সময় ডাণ্ডাবেড়ি পরানো এবং জঙ্গি ও সন্ত্রাসীসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের আলাদা প্রিজনভ্যানে পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হলো।

এদিকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। মঙ্গলবার সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কারা অনুবিভাগ) মো. হাবিবুর রহমানকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করে আদেশ জারি করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।